ইসাহাক আলী, নাটোর:
নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভায় টেন্ডারে লটারিতে কাজ না পেয়ে পৌরসভার প্রকৌশলীসহ কর্মচারীদের উপর হামলা ও মারপিটের অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র সমর্থিত ঠিকাদার ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
এ সময় প্রকৌশলী পালিয়ে আত্মরক্ষা করলেও মারধরের শিকার হন নৈশ প্রহরী। তবে মেয়রের দাবি , সেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে হট্টগোল হলেও কোন ধরনের মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। তার রুমে তার সামনে কর্মচারী কর্মকর্তারা লাঞ্ছিত হবেন তা তিনি হতে দেবেন সেটা হতে পারেনা।
প্রত্যক্ষদর্শি ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার নলডাঙ্গা পৌরসভার অধীনে ৭২ লাখ টাকার পৌর অভ্যন্তরের কয়েকটি গ্রুপের এডিপি’র কাজের ইজিপি লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। মূলত লটারিটি ঢাকা থেকেই সারাদেশের ড্র এর নিয়ন্ত্রণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নলডাঙ্গা পৌরসভার টেন্ডারে অংশ নেন প্রায় ৩০ জন ঠিকাদার। বুধবার দুপুরে কাজের লটারির ড্র এর ফলাফল পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের রুমে ঠিকাদার ও পৌর পরিষদ এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই ঘোষনা করা হচ্ছিল।
ফলাফলে মেয়র সমর্থিত ও তার সহযোগী ঠিকাদাররা কাজ না পাওয়ায় পুনরায় লটারির দাবি করা হয়। লটারিতে অনিয়ম হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে হট্টগোল শুরু হয়। মেয়র নিজেও টেবিল থাপরিয়ে ও গালিগালাজ করেন প্রকৌশলীসহ অন্যদের। এ সময় পুনরায় লটারি না দেয়ায় হট্টগোল করে পরিষদের কর্মচারীকে মারপিট করা হয়। এতে পৌর প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম পালিয়ে রক্ষা পেলেও মারধরের শিকার হন নৈশ প্রহরী জাকারিয়া। পরে কাউন্সিলর ও নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে তা প্রশমিত হলে জাকারিয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঘটনার পর থেকেই রহস্যজনক কারণে প্রকৌশলী ও নৈশ প্রহরীর ফোন বন্ধ রয়েছে। তবে বিকল্প একটি নাম্বার থেকে প্রকৌশলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও সেখানে কোন ধরনের মারধরের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন মেয়র।
মেয়র মনিরুজ্জামান মনির জানান, দুপুরে পৌরসভার কাজের টেন্ডারের লটারি তার কক্ষেই অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। তবে লটারি কার্যক্রমে সন্দেহ হলে কয়েকজন ঠিকাদার পক্ষপাতিত্বসহ লটারির ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর সুরাহা করার জন্য মেয়র প্রকৌশলীকে তার ল্যাপটপ এনে আইডি ওপেন করে ফলাফলগুলো দেখাতে বলেন। কিন্তু প্রকৌশলী তা দেখাতে ব্যর্থ হলে একটু হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। তবে সেখানে মারপিট বা হামলার অভিযোগ ভূয়া। সেখানে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। আর তার সামনে এমন ঘটনা ঘটলে তিনি মেনে নেবেন তা কি করে হয়।
তবে পৌরসভায় প্রকৌশলী বা নৈশ প্রহরী অফিস চলাকালীন সময়ে কেন নেই এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, নৈশ প্রহরীকে তিনি ছুটি দিয়েছেন বিশ্রামের জন্য কারণ দিনরাত এক মানুষের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। রাতে যেহেতু ডিউটি আছে।
আর প্রকৌশলীর ব্যাপারে তিনি বলেন, তাজুল সাহেব দুপুরে খাওয়ার কথা বলে বাসায় গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এরপর থেকে তিনি ফোন বন্ধ রেখেছেন ফোন খুললেই আসল কারণ জানা যাবে।
এদিকে প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি ডায়াবেটিকস এর রোগী তাই ঘটনার পর থেকে টেনশনমুক্ত থাকতে ফোন বন্ধ রেখেছেন। হট্টগোল ও মারপিটের কথা শিকার করে তিনি জানান, অন্যদের হস্তক্ষেপে তিনি বাসায় আসতে পারলেও নৈশ প্রহরীকে মারপিট করা হয়েছে। তবে এখনো তিনি থানায় কোন অভিযোগ করেননি। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে নৈশ প্রহরী জাকারিয়াকে অনেকবার চেষ্টা করেও ফোনে ও অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক কাউন্সিলরসহ প্রত্যক্ষদর্শিদের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি বলে জানিয়েছেন নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিনি সারাদিন পুলিশের অন্য একটি মিটিংএ ছিলেন, এমন কোন ঘটনার খবর তিনি জানেন না তবে আইন শৃংখলার অবনতি হয় এমন কোন পরিস্থিতি হলে তিনি খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আর কেউ অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এমআই