মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর প্রতিনিধি : করোনার প্রকোপের কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারো বিপুল উৎপাহ-উদ্দীপনায় দিনাজপুর বড়ময়দান ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজকদের দাবী এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের নামাজের জামাত। ঈদের নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র শান্তি ও সৃমদ্ধি কামনায় মুনাজাত করা হয়।
মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল ৯টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড়ময়দান ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের এই সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ৬ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে দাবী করেছেন কর্তৃপক্ষ। দিনাজপুরসহ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন জেলার লোকজন সর্ববৃহৎ এই ঈদ জামাতে শরিক হন। এছাড়া জেলা শহর ও আশপাশের এলাকার অর্ধশতাধিক ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনাজপুর বড় ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নিতে সকাল থেকে নতুন পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিহিত জায়নামাজ হাতে নিয়ে ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত হন মুসল্লিরা। সকাল ৯টা বাজার আগেই বড় ময়দান কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। করোনার প্রকোপের কারণে ঈদ জামাত গত বছর বন্ধ থাকায় এটি পঞ্চম বারের মত এতো বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে সকাল ৮টায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট মাঠে আহলে হাদিস অনুসারীদের ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আহলে হাদিস অনুসারী মুসল্লিরা এই জামাতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। এছাড়া লালবাগ ফুটবল খেলার মাঠে সকাল ৮টায় আহলে হাদিস অনুসারী মুসল্লিদের অপর একটি বড় ঈদ নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দিনাজপুর বড়ময়দান ঈদগাহ মাঠে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত ঈদের প্রধান ও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতে ইমামতি করেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হক কাসেমী। ঈদের প্রধান এই জামাতে নামাজ আদায় করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপ্রতি এম এনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার), দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আজিজুল ইমাম চৌধুরী, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৬ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ। দিনাজপুর বড় ময়দানে সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের পূর্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপ্রতি এম এনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ও জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এদিকে দিনাজপুরে ঈদের প্রধান জামাতে যে কোন ধরনের নাশকতা ঠেকাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক দুইটি নিয়ন্ত্রক কক্ষ খোলা হয়। ঈদগাহ মাঠসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য ঈদগাহ মাঠের চার পাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যসহ সাদা পোষাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি’র পরিকল্পনায় ও দিনাজপুর জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এই ঈদগাহ মাঠের মিনার নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে। বিশাল এই ঈদগাহ মিনার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ইরাক, কুয়েক, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থাপনার আদলে দিনাজপুর বড় ময়দানে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন এই ঈদগাহ মিনারে রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। প্রধান গুম্বুজের সামনে রয়েছে মেহরাব যেখানে ইমাম সাহেব দাঁড়ান, যার উচ্চতা ৪৮ ফুট। এর পাশাপাশি রয়েছে ৫২টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফুট দৈর্ঘের ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া দিনাজপুর শহরের চাউলিয়াপট্টি-দক্ষিণ লালবাগ ঈদগাহ মাঠ, লালবাগ ঈদগাহ মাঠ, বালুয়াডাঙ্গা কাঞ্চন ব্রীজ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ, কাঞ্চন কলোনী ঈদগাহ মাঠ, পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা মিনার মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ, পাটুয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠ, পশ্চিম পাটুয়াপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ, রামনগর ঈদগাহ মাঠ, মুদিপাড়া ঈদগাহ মাঠ, ঘাষিপাড়া ঈদগাহ মাঠ, ফকিরপাড়া ঈদগাহ মাঠ, সুইহারী ঈদগাহ মাঠ, মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয় ঈদগাহ মাঠ, দিনাজপুর একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় ঈদগাহ মাঠ, ঈদগাহবস্তি ঈদগাহ মাঠ, পুলহাট ঈদগাহ মাঠ, তফিউদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ঈদগাহ মাঠ, ৪নং উপশহর ঈদগাহ মাঠ, ৭নং উপশহর ঈদগাহ মাঠ, ৮নং উপশহর ঈদগাহ মাঠ, রাজবাটি ঈদগাহ মাঠ, শিকদারহাট ঈদগাহ মাঠ, কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঈদগাহ মাঠসহ অর্ধশতাধিক উন্মুক্ত স্থানে এবং মসজিদে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের বাইরে ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় চেরাডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় ঈদগাহ মাঠ ও নশিপুর ঈদগাহ মাঠে। এছাড়া চাঁদগঞ্জ ঈদগাহ মাঠসহ প্রতিটি গ্রামের ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ শেষে খুৎবার পর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
সময় জার্নাল/ইএইচ