গোলাম আজম খান, কক্সবাজার:
ঈদের টানা ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হয়েছে কক্সবাজারে। তীল ধারণের ঠাঁই নেই সৈকতের ৩ কিলোমিটার সাগরতীরে।
ভ্রমণপিপাসুরা বলেন, পরিবার-পরিজন বা প্রিয়জনকে সময় দিতে টানা ছুটিতে কক্সবাজার ছুটে আসা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সাড়ে ৪শ’ আবাসিক হোটেলে লক্ষাধিক পর্যটক রুম বুকিং করেছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে সাগরের উত্তাল ঢেউ, এই ঢেউয়ের নোনাজলে মেতেছেন পর্যটকরা। নোনাজলে যেন মহাব্যস্ত সবাই। সমুদ্রস্নান, টিউবে গা ভাসানো, ওয়াটার বাইকে ঘুরে বেড়ানো ও প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে আনন্দে সময় পার করছেন ভ্রমণপিপাসুরা। আবার অনেকেই বালিয়াড়িতে ঘোড়ার পিঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া এখানে রয়েছে মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝরনা , ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, শহরের অজ্ঞমেধা ক্যাং ও বার্মিজ মার্কেট, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক এবং রামুর বৌদ্ধমন্দিরসহ নানা জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট।
সৈকত এলাকার হোটেল-মোটেলগুলোতে বেড়েছে পর্যটকদের ভিড়। বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজারের দর্শনীয় স্পটগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ঈদের টানা ছুটিতে সামনে রেখে কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পর্যটক এসেছেন বলে জানা গেছে। এই তথ্য কলাতলী হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের। এর আগে বেশ কিছু হোটেল, মোটেল, ফ্ল্যাটবাড়ি, কটেজ ও গেস্ট হাউসের কক্ষ বুকিং করেছেন পর্যটকরা। পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেলগুলোতে বেশিরভাগ কক্ষ বুকিং আছে।
ইনানীর পাঁচ তারকা মানের হোটেল রয়েল টিউলিপের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, আমাদের হোটেলে ৩৫০ কক্ষ। কক্ষের বেশি বুকিং দেয়ার সুযোগ নেই। এখন একটু পর্যটকদের চাপ আছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু রুম বুকিং হয়েছে।
হোটেল কক্স টুডের মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন রেখেছি। যাতে তারা এবারের ঈদের ছুটি ভালোভাবে কাটাতে পারেন। ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিন অতিথিদের জন্য বিশেষ মেহেদি উৎসব চলছে হোটেলের লবিতে। চলবে আরও তিন দিন। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পর্যটককে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছে আমাদের কর্মীরা।
শেষ বিকেলে কলাতলি সৈকতে কথা হয় উত্তরা থেকে আগত পর্যটক মরসালিন আহমেদের সঙ্গে। জীবনে প্রথম এসেছেন। তার খুব সুন্দর দিন কাটিয়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে একসঙ্গে খুব মজা করছি।
আরেক পর্যটক মচিউর রহমান বলেন, সচিবালয়ে চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার আসব না এটা হতে পারে না। তাই বন্ধুরা সবাই মিলে সৈকতে চলে এলাম। সাগরের নোনাজলে বেশ মজা করছি।
লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্ল্যাহ সিফাত বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে সৈকতে লাখো পর্যটকের আগমন হয়েছে। তাই সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে লাইফ গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু এতো পর্যটকের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় স্বল্প লাইফ গার্ড দিয়ে খুবই কষ্টসাধ্য। তাই এক্ষেত্রে পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি নির্দেশনা চলার অনুরোধ করছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করেছেন তারা। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সৈকতে দুই লাখের বেশি পর্যটকের আগমন হয়েছে। তাই আগত পর্যটকদের গাড়ি থেকে নামা, হোটেলে ওঠা ও সৈকতে আসা পর্যন্ত সবখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করছে। আর গরমকালে পর্যটকদের পিপাসা মেটাতে সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থাপিত সেবা কেন্দ্র থেকে পানি পান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শতভাগ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এমআই