আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে হটিয়ে আবারও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সৌদি আরবের তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থানে চলে এসেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট। বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারের ডেটা ও অবকাঠামো সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রদানকারী আমেরিকান-ব্রিটিশ সংস্থা রিফিনিটিভ-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সৌদি আরবের তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা টেক জায়ান্ট অ্যাপলের সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বলছে, সৌদি আরামকো বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি কোম্পানি এবং দিনে এই কোম্পানির আয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। মূলত প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেলের তেল প্রক্রিয়াজাত করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শীর্ষ ধনী এই দেশটির প্রতিষ্ঠানটি। আর সেখান থেকেই দৈনিক আয় হয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
আরামকোর যাত্রা শুরু হয় ১৯৩৩ সালে। তখন এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিলো অ্যারাবিয়ান অ্যামেরিকান অয়েল কোম্পানি। অবশ্য সেসময় এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ছিল স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি অব ক্যালিফোর্নিয়া। যা বর্তমানে শেভরন নামে পরিচিত।
গত শতাব্দীর ৭০ ও ৮০-র দশকে ধীরে ধীরে আরামকোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে থাকে সৌদি সরকার। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় সৌদি আরামকো। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির করের হার কমিয়ে দেয় সৌদি আরব।
মূলত করের হার আয়ের ৮৫ ভাগ থেকে নামিয়ে আনা হয় অন্তত ৫০ ভাগে। এরপরও প্রতিষ্ঠানটি বাৎসরিক ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার কর দিয়ে থাকে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে সৌদি আরামকো।
আর এ কারণেই সৌদি আরামকোকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতির প্রতীক বলে মনে করা হয়। যে কারণে অনেক সময় আরামকোর তেলক্ষেত্রকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে সৌদি আরবের শত্রুরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তেমনই দু’টি স্থাপনায় ১৪ টি মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটে।
সৌদি সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণও করে দেশটির সরকারই। সরকারের নীতি অনুযায়ী তেল উৎপাদন বা সরবরাহ কখনও বাড়ায়, কখনও কমায় আরামকো।
এছাড়া ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর বাজারে প্রথমবারের মতো শেয়ার ছাড়ে আরামকো। রিয়াদের স্টক এক্সচেঞ্জে প্রাথমিক আইপিও বিক্রি করে দুই হাজার ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলার মূলধন সংগ্রহ করে তারা। যার মাধ্যমে চীনা ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবাকে পেছনে ফেলে রেকর্ড গড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রাথমিকভাবে আইপিও বিক্রির মাধ্যমে আরামকোকে দুই লাখ কোটি ডলারের কোম্পানিতে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে মূলধন দাঁড়ায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে। তারপরও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে সৌদি আরামকো।
এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছিল সৌদি আরামকো। তবে সেসময় খুব বেশি সময় আরামকো শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। সেই জায়গা দখল করে নেয় বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল।
তবে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেলের দাম বেড়ে চলায় আরামকোর শেয়ার দরও বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর গত ১২ মে সৌদি আরামকোর মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৪৩ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে।
আর এতেই ফের অ্যাপলকে হটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এই জ্বালানি কোম্পানিটি।
এমআই