মো: ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি :
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুবকর তালুকদারের বিরুদ্ধে ইউএনও ও বিএডিসি কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানতে গেলে—নির্বাহী প্রকৌশলী জানেন না বলে এড়িয়ে যান।
সরেজমিনে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সরিষাবাড়ী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাউসি উত্তর পাড়া গ্রামের সমেষ শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম একটি অগভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর দ্বারস্থ হন। পরে গ্রাহককে তিনি একটি আবেদন দিতে বলেন।
জানা গেছে, বিধি মোতাবেক উপজেলা সেচ কমিটির সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রতিবেদন সাপেক্ষে অনুমোদন করার পর পিডিবি গ্রাহককে সংযোগ প্রদান করেন। উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিএডিসি) দায়িত্ব পালন করেন। তবে পিডিবিতে আবেদনকারী রফিকুল ইসলামকে সেচ সংযোগ প্রদানের বিষয়টি সরিষাবাড়ী সেচ কমিটি না জানলেও নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার ভূয়া কাগজপত্র বানিয়ে অনুমোদন দেন।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে তড়িঘড়ি করে (ব্যাক ডেইট) সংযোগ দেন। এক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার ইউএনও উপমা ফারিসা ও বিএডিসি কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাকসুমুল হকের স্বাক্ষর জাল করেন।
এদিকে ওই গ্রাহকের সংযোগটি ভিন্ন এক ব্যক্তির (পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার হাটবাড়ী গ্রামের জাফর আলী মন্ডলের ছেলে সবুর আলী) নামে ছিলো বলে জানা গেছে। তিনি একবছর আগে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে সংযোগ নিয়েছিলেন। ওই সংযোগটিই উৎকোচের বিনিময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী পুনরায় রফিকুল ইসলামের নামে দিয়ে দেন।
এ বিষয়ে সবুর আলী বলেন, তারা গতবছর পিডিবির ক্ষুদ্রসেচ সংযোগটি নেন। তবে বুরো ও আমন মৌসুমে অতিরিক্ত বিল আসায় তিনি সংযোগটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে চান। তবে মৌসুম না করেও বিল দিতে হবে জেনেও তিনি পিডিবির সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে নতুন সংযোগ নেন। তবে এ সংযোগটি এখনও চালু থাকার বিষয়ে তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, এ কাগজগুলো অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে। তবে এ কাগজগুলো কার নামে সেটা আমার জানা নেই। তবে কেউ কিছু বললে এ কাগজগুলো দেখানোর কথা বলেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেও জানান তিনি।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিএডিসি) মাকসুমুল হক বলেন, চলতি বছরে ২ ও ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সেচ কমিটির দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় যথাক্রমে ১০২ টি এবং ৬৪টি অগভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কমিটির মিটিং এ রফিকুল ইসলামের নামে কোন ধরনের সেচ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি সে কিভাবে সংযোগ পেলো সেটাও তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, রফিকুল ইসলামের অনুমোদনের কাগজে থাকা ইউএনওর স্বাক্ষরটি আমার নয়। এটা নকল স্বাক্ষর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএডিসি'র অফিসারের সাথে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সরিষাবাড়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্রের (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, তার কাছে এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই। এ বিষয়ে কোনকিছু জানা নেই বলেও জানান তিনি।
এমআই