আনোয়ারুল কাইয়ূম কাজল :
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ইং) বাংলা সাহত্যিাকাশে এক উজ্জল নক্ষত্র। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। তাঁর ভাবনা বিকশিত হয়েছিল সাহিত্যের সব শাখাতে। সঙ্গীত ভুবনেও তিনি উন্মুক্ত করেছেন একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মন্ডিত দুয়ার। একদিকে গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ, অন্যদিকে বর্ষার আগমনী বার্তাবাহী ঝিরিঝিরি ইলশেগুঁড়ি; একদিকে কালবৈশাখীর প্রচন্ড মাতম, অন্যদিকে জ্যৈষ্ঠের রসালো ফল আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ও আনারসের মিষ্টি সুগন্ধ-এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ২৫ মে ১৮৯৯ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের বিখ্যাত কাজী পরিবারে হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রতার কষাঘাত দু:খ-কষ্ট যাতনা সহজাত-দু:খু মিয়া খ্যাত নজরুল ইসলাম নানা চড়াই-উৎড়াই মাড়িয়ে দেশপ্রেম ও মহজাগরণের মূলন্ত্রে উদ্বুদ্ধ-দীক্ষিত হয়ে পরিগণিত হয়েছেন জাতি সত্তার মুক্তির মহানায়কে। রণতুর্যবাদক হিসাবে সবর্দাই লড়েছেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনন্য ধীমান ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক জীবনের পাশাপাশি সোচ্চার ছিলেন তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে। তার লেখায় ফুটে উঠেছিল বিদ্রোহী আত্মার প্রতিচ্ছবি। তাই তিনি বিশ্ব দরবারে বিদ্রোহী কবি বলে পরিচিত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ তথা দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতার মূল বিষয় বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। সৃষ্টি ও সৃজনশীলতার কালজ্বয়ী সাক্ষী স্বাধীন জাতিসত্ত্বার অগ্রসেনানী দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতার কবি কাজী নজরুল সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ বেনিয়াদের উপনেবেশিক শাসন শোষন নিপীড়ন বঞ্চনা আর পরাধীনতার শিকলে বাঁধা ভারতবাসীর জাতীয়তার প্রশ্নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন বলে তাঁর কবিতায় এদের বিরোধিতা ছিল স্বাভাবিক প্রকাশ। ভারতবষের্র মুক্তির স্বপ্ন-আকাংক্ষা এবং আবেগকে স্পর্শ করেছেন তার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় দিয়ে, সেই অভিজ্ঞতার রূপান্তর ঘটিয়েছেন তাঁর দ্যুতিময় প্রতিভার বিচ্ছুরণে শব্দ সমবায়ে। ক্রোধ-ঘৃণা-প্রতিশোধস্পৃহা, ভালোবাসা, মমতা এবং মুক্তির বাসনা ব্যক্ত করেছেন বিদ্রোহী কবিতায়। ১৯২১ সালের দিকে প্রথম বিশ্বযোদ্ধত্তর বিশ্বের অভিঘাতে বিশ্বব্যাপী অবক্ষয়, নৈরাজ্য, ব্যক্তির একাকিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা তাঁকে তীব্রভাবে আলোড়িত করে। আধুনিকতাবাদীদের মধ্যে তখন সামষ্টিকের পরিবর্তে ব্যক্তি পর্যায়ে আত্মউন্মোচনের প্রবণতা প্রবল হয়ে উঠে। ঠিক ওই সময়েই ধূমকেতুর মতো তাঁর অতুলনীয় প্রতিভার প্রকাশ। সময়ও তার জন্য প্রস্তুত ছিল। ফলে তিনি মিটিয়েছেন সে সময়ের সবচেয়ে কঠিন দাবি।
দু'হাজার চার সালে বিবিসি বাংলা শ্রোতা জরিপে নির্বাচিত তৃতীয় ’ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ’ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আসানসোল থেকে দুরন্তপনার চরণচিহ্ন কবিতীর্থ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাজীর শিমলা-দরিরামপুর আগমনের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপিত হয়েছে। মহাজাগরণের বংশীবাদক কবি কাজীনজরুল ইসলামের ২০২১ সালে ১২২তম জন্মজয়ন্তী ও একই সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাঁর কালজ¦য়ী সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যের বিপুল প্রভাব বিস্তারকারী কবিতা বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপিত হয়েছে।
এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় বাংলা সাহিত্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বি বহুমত্রিক প্রতিভার উজ্জ¦ল নক্ষত্রের সমাজ-বদলের বৈপ্লবিক চেতনায় দারুণভাবে আন্দোলিত উজ্জীবিত লেটুরদল-মসজিদের মোয়াজ্জিন-রুটির দোকান থেকে জাতীয় কবি হয়ে ঊঠা-দু:খু মিয়ার আসানসোল থেকে ত্রিশালে আগমন-জায়গীর থাকা,স্কুেল ভর্তি, ক্লাস-পড়ালেখা-পরীক্ষায় অংশগ্রহন. লেখালেখি বাশিবাজানো পুকুরে গোসল-মাছধরাসহ স্কুলপালানো দুরন্ত কিশোরের বৈচিত্র্যময় নানা কর্মকান্ড; বহুমাত্রিক স্মৃতি বিজড়িত কবিতীর্থ কাজীরশিমলা-দরিরামপুর-শুকুনিবিল-বিচ্যুতিয়া বেপারীবাড়ি ইত্যাদি স্থানে ফেলে আসা দিনগুলোর নানা স্মৃতি ও সহপাঠিদের রর্ণিল স্মৃতিচারণসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা তুলে ধরবো।
ত্রিশালে আগমন
**************
কাজী নজরুল ইষলামের সমসাময়িক বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠিদের স্মৃতিকথা, জনশ্রুতি ও ক্লাসমেট ইয়াকুব সাহেবের লিখিত ভাষণ, বিদগ্ধ গবেষকদের গবেষনা, প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদের লেখার ভিত্তিতে ্ও বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণযোগ্য যে, কবি ১৯১৩ সালের প্রথম দিকে ত্রিশাল এসেছিলেন। দরিরামপুর ইংলিশ হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে তখন কবির বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৫ বছর। গবেষকদের মতে ত্রিশালে সব মিলিয়ে নজরুলের অবস্থান ছিল মাত্র এক থেকে দু’বছর। নজরুলের সাহিত্যে ত্রিশাল কিংবা দরিরামপুরের জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু না পাওয়া গেলেও কবির সাহিত্য প্রতিভার ঊন্মেষ ঘটে এই ত্রিশালেই। দরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের যে দু’টি শ্রেণিকক্ষে কবি পড়াশুনা করতেন। সেই দু’টি শ্রেণিকক্ষ এখনো রয়েছে আগের মতোই জাতীয় কবির সংস্কৃতির স্মারক হয়ে।
কাজীর শিমলায় দুরন্ত নজরুলের চরণচিহ্ন
*************************************
১৯১২ সনের শেষদিকে কোন একসময় তিনি সব ছেড়ে পুনরায় লেখাপড়ার নেশায় মেতে ওঠেন। নিভূত পল্লী চূরুলিয়া থেকে এসে আসানসোলে এমএ বক্স মতান্তরে আবদুল ওহাবের রুটির দোকানে এক টাকা মতান্তরে পাঁচ টাকা মাসিক বেতনে চাকুরি নেন। অধিক রাত্র পর্যন্ত নজরুল হোটেলের বারান্দার রুমে শুয়ে শুয়ে কুপির আলোয় বিভিন্ন বই-পত্তর ও পুঁথি পড়তেন, আর লেটুর দলে থাকাকালে তার লেখা গানগুলো করতেন। তখন সেখানে পুলিশি ডিঊটি পালনকালে নিকটবর্তী আসানসোল থানার পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর জনাব কাজী রফিজউল্লাহ নজরুলের অমিত বিরল প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তখন ছিলেন সদ্য বিবাহিত। উনার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার অন্তর্গত কাজীর শিমলা গ্রামে। তার স্ত্রীর নাম শামসুন্নেসা খানম। সেই দুজন স্বামী ও স্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট নজরুলের একসময় স্থান হয় কাজী রফিজউল্লাহর বাসায়। দারোগা সাহেব নজরুলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ছেলেটি ভাল বংশের। ছেলেটির বংশ ও দারোগা সাহেবের বংশ এক তথা কাজী বংশ। যাঁর জন্য নজরুলের প্রতি তাঁর মায়া জন্মে যায়। তিনি ছোট ছেলেটিকে তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সুবিধার জন্য বাসার কর্ম সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। সেখানে নজরুল দারোগা সাহেবের স্ত্রীর ফরমায়েশ পালন করতেন আর অবসরে চলত তার পড়শোনা আর গুনগুন করে গান গাওয়া। নজরুলের পড়শোনা ও প্রতিভায় বিমুগ্ধ হয়ে ১৫ দিনের ছুটি পেয়ে তার বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজির শিমলা গ্রামে নজরুলকে নিয়ে আসেন ১৯১৩ সনের শুরুর দিকে। কাজির শিমলা গ্রামে নজরুল থাকতেন দারোগা বাড়ির বৈঠকখানায়। তপ্ত দুপুরে সাঁতার কাটতেন বাড়ির নিকটবর্তী একটি পুকুরে। দুরন্ত ও উদ্দীপ্ত ছেলেটিকে দারোগা ও তার স্ত্রীর মতো বাড়ির আশপাশের এলাকার লোকজনও আপন করে নেন। বাড়ি থেকে স্কুল দূরে হওয়ায় বর্তমান ত্রিশাল পৌর এলাকার নামাপাড়া বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়িতে নজরুলকে জায়গির রাখেন তিনি।
দরিরামপুর হাই স্কুলে স্কুল পালানো নজরুল
**********************************
আলাউদ্দিন আল আজাদের লেখায় পাওয়া যায় ১৯১৪ সালে কাজী রফিজউল্লাহ দারোগা নজরুলকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য তাঁর পাশের বাড়ির ছেলে কাজী ইসমাঈলের সাথে ময়মনসিংহের সিটি স্কুলে পাঠান। নজরুলের নাকি স্কুলটি পছন্দ হয়েছিল কিন্তু জায়গীর না পাওয়ায় ওই স্কুলে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তাঁর। স্বল্প সময় নজরুল এখানে অপেক্ষারত ছিলেন পরে দারোগা রফিজউল্লাহ একই সালের জুন মাসে কাজী নজরুল ইসলাম ও ছোট ভাই কাজী আবুল হোসেনকে দরিরামপুর ইংরেজি হাইস্কুলে (বর্তমানে নজরুল একাডেমি) ভর্তি করান ।
কাজীর শিমলা গ্রাম থেকে ত্রিশালের দরিরামপুরের দূরত্ব ছিল পাঁচ কিলোমিটার। এই পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হতো ক্লাস করার জন্য। বর্ষাকালে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ত। ফলে স্কুলে যাতায়াতে খুব কষ্ট হতো। এই অসুবিধা লাঘব করার জন্য নজরুলকে দারোগা সাহেব ত্রিশালের নামাপাড়ায় তাঁর আত্মীয় কাজী হামিদুল্লাহর বাড়িতে জায়গীর রাখেন। হামিদুল্লাহ ছিলেন ধার্মিক, পরহেজগার ও গম্ভীর প্রকৃতির লোক। নজরুল নামাজ পড়তেন না, এজন্য তিনি তাঁকে ঘৃণা করতেন এবং শাসনে রাখতেন। ওই বাড়িতে সমস্যা হলে নজরুল আশ্রয় নেন নিকটবর্তী বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়িতে। এখান থেকেই নজরুল দরিরামপুরের স্কুলে যাতায়াত করতেন।
দরিরামপুর ইংলিশ হাইস্কুলে ভর্তি
***************************
নজরুল তার বাকি জীবনে পূর্ববঙ্গে (বাংলাদেশে) বহুবার এলেও কখনো আসেননি ময়মনসিংহের ত্রিশাল। এমনকি গফরগাঁওয়ে ১৯২৬ সালের ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ জেলা কৃষক-শ্রমিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েও আসতে পারেননি। তবে শুধু ত্রিশালই নয়, নজরুল সুস্থাবস্থায় এরপর জন্মস্থান চুরুলিয়ায়ও যাননি। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের নিখিল বঙ্গীয় প্রজাসম্মিলনী উপলক্ষে জাতি সত্ত্বার বংশীবাদক, দ্রোহ, সাম্য, প্রেম ও মানবতার কবি জাতীয় কবি একটি বাণী দিয়েছিলেন যা লাঙল পত্রিকায় প্রথম খন্ডে পঞ্চম সংখ্যায় ৭ই মাঘ ১৩৩২ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল।
বাংলা সাহিত্যে দ্রোহ, প্রেম ও মানবিকতায় শ্রেষ্ঠতম প্রথম রোম্যান্টিক কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যিনি এক হাতে বাঁশের বাঁশরী রেখে আরেক হাতে রণতুর্য রাখতে জানতেন। আমরা তাকে বিদ্রোহী বলেই জানি ও চিনি। কবি শামসুর রাহমান তার ”স্বাধীনতা তুমি ” কবিতায় কবিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, স্বাধীনতা তুমি, কবি নজরুলের ঝাঁকরা চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ। সে মহান পুরুষ নজরুল তিনি একদিনে হয়ে ওঠেননি। এজন্য তাকে একাধারে হতে হয়েছে-দুখু মিয়া, দুরন্ত-দুষ্টু-স্কুলপালানো বালক, বংশীবাদক, মক্তবের শিক্ষক, মসজিদের মোয়াজ্জিন, পুঁথি পাঠক, ঘাটুগান লেখক, রুটির দোকানের কর্মচারী, জায়গীর বা লজিংমাস্টার, নাট্যকার, সৈনিক, রাগ সঙ্গীতে চরম দক্ষতা অর্জনকারী, সুরকার, অভিনেতা, প্রেমিক, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, ইসলামি গান, শ্যামা সংগীত, দ্রোহ সংগীত, গজল রচয়িতা, আদর্শ পিতা, রাজনীতিবিদ, আদর্শ স্বামী, সাংবাদিক, সম্পাদক ইত্যাদি বহুমাত্রিক গুনের অধিকারী। রনতুর্যবাদক নজরুলের অমিত প্রতিভার পটভূমি রচিত হয়েছিল খাল, বিল, নদী-নালা, বন-বনানী, সবুজ পত্র-পল্লবে সুশভিত দিগন্ত প্রসারী ফসলের মাঠ আর রাখালীয়া বাশির সুর মোহিত শিক্ষা, সাহিত্য সংস্কৃতির চারণভূমি; পাহাড় টিলা হাওর-মহিষের শিং এই মিলে মমিশিং অর্থ্যাৎ ত্রিশাল তথা ময়মনসিংহের মাটিতে। তাঁর রচিত ছড়া কবিতা, গান, গল্প, নাটক সব কিছুতেই এ মাটি ও মানুষের জীবনের চালচিত্র কৃষ্টি-কালচার জীবনবোধ-বিশ্বাস ফোটে উঠেছে তাঁর কলমের আচড়ে শিল্পসুশমায়।
ত্রিশালে নজরুলের শৈশবের স্মৃতিকে ধরে রাখতে কাজীর শিমলা গ্রামের দারোগা রফিজউল্লাহর বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে কবি নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র। শকুনীবিলে বটতলা যেখানে তিনি বাশি বাজাতেন সেখানটায় তৈরি হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। নামাপাড়া গ্রামের বিচ্যুতিয়া বেপারী বাড়িতেও নির্মিত হয়েছে কবি নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র ও আর্কাইভ। ত্রিশাল দরিরামপুর একাডেমির নামকরণ করা হয়েছে নজরুল একাডেমি, সেখানে তৈরী করা হয়েছে নজরুল মঞ্চ ও নজরুল রেস্ট হাউস। ডিগ্র কলেজের নাম করা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরকারি ডিগ্রী কলেজ, এসব কারণে এক সময়কার অজ পাড়াগাঁয়ের ত্রিশাল আজ নজরুল ভক্ত পাঠক গবেষকদের কাছে চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
তথ্যসূত্র-
১. কাজী নজরুল ইসলাম-জীবন সৃষ্টি, এবং নজরুলের বাংলাদেশে আগমনের শতবষর্- –প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম।
২। দরিরামপুরে নজরুল-পিএ নাজির, প্রবন্ধ, দৈনিক ইনকিলাব ।
৩। জবুধঁষ কধৎরস ঞধষঁশফধৎ, ঘধুৎঁষ, ঃযব মরভঃ ড়ভ ঃযব পবহঃঁৎু।
৪। ময়মনসিংহে বালক নজরুল- ড. আলী নওয়াাজ ।
৫। কাজীর শিমলা ও দরিরামপুরে নজরুল-মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ।
৬। শিউলিমালা গ্রন্থ-কাজী নজরুল ইসলাম।
৭। আজহারউদ্দীন-নজরুলের জীবনী ।
৮। অনলাইনে ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন মান্য ও গুনীজনের লেখা প্রবন্ধ
৯। কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল-মো.আশিকুর রহমান সৈকত।
১০। রাশেদুল আনাম, নজরুল জীবনের ত্রিশাল অধ্যায়,পৃষ্ঠা নং-৪৯,৯৭,
১১। ত্রিশাল কোর্ট ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণ, ১৯৮৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। লিখিত কপি ও রেকর্ড করা স্মৃতিকথা থেকে ।
১২। মানুষের মুখেমুখে শোনা লৌকিক প্রচলিত মিথ বা গল্প সমূহ।
* লেখক : ইতিহাস-ঐতিহ্য সন্ধাানী লেখক ও কবি, বার্তা প্রযেজক একুশে টেলিভিশন।