স্পোর্টস ডেস্ক:
ছন্নছাড়া ব্যাটিং যাকে বলে, অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। এমন হতশ্রী ব্যাটিংয়ের পর গোটা দলের মনোবল ভেঙে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে উইন্ডিজের পেসাররা যেমন দাপট দেখিয়েছেন, পরে বল করতে নেমে একইরকমভাবে চোখ রাঙিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান-এবাদত হোসেনরা। তবে দিন শেষে ব্যাটিং ব্যর্থতার সঙ্গে আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে একাধিক ক্যাচ মিসের জন্য।
অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৯৫ রান তুলেছে উইন্ডিজ। যেখানে হাতে ৮ উইকেট রেখে বাংলাদেশের থেকে আর ৮ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিক শিবির। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ১৪৯ বলে ৪২ এবং এনক্রুমার বোনার ৪৩ বলে ১২ রান নিয়ে আগামীকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
বাংলাদেশ দল যেখানে ১০৩ রান করতে ব্যয় করেছে ৩২ ওভার ৫ বল। সেখানে উইন্ডিজ ৪৮ ওভার ব্যাট করে তুলেছে ৯৫ রান। পিচের মান বিচার করে খেলে ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা যেখানে তালগোল পাকিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন, সেখানে খুব হিসেবী ব্যাট চলেছে ক্যারিবীয়দের।
একই সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও সেই পুরোনো রোগ ফুটে উঠেছে। হাত গলিয়ে বের হয়ে গেছে একাধিক ক্যাচ। না হলে দিনের খেলা শেষে সুবিধাজনক অবস্থানেই থাকতে পারত বাংলাদেশ দল। মুমিনুল হক, লিটন দাসদের জন্য মুস্তাফিজ, এবাদতের নিয়ন্ত্রিত বোলিং রঙ হারিয়েছে, ধূসর হয়েছে।
উইন্ডিজের ইনিংসের তৃতীয় ও মুস্তাফিজের দ্বিতীয় ওভারের একটি বল লেগে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। ব্যাটে-বলে ঠিকমত সংযোগ হয়নি। ক্যাচ যায় লেগ গালিতে, কিন্তু মুমিনুল ধরতে ব্যর্থ হন। শূন্য রানে জীবন পান উইন্ডিজ অধিনায়ক। পরে ইনিংসের ২৮তম ওভারের মুস্তাফিকের করা চতুর্থ বলে ফিরতে পারতেন রেমন রেইফার। প্রথম স্লিপে ক্যাচ মিস করেন লিটন। যদিও একটু কঠিন ছিল। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও ধরতে পারেননি ক্যাচ। ৪ রানে বেঁচে যান তিনি।
ওই ওভারের পরের বলেই দ্বিতীয় জীবন পান ব্র্যাথওয়েট। এবারও ক্যাচ হাতছাড়া লিটনের। এটিও কঠিন ছিল কিন্তু অসম্ভব নয়। লেগ সাইডের বল ফ্লিক করার চেষ্টা করছিলেন ব্র্যাথওয়েট, বল যায় গালিতে। লিটন বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি। শূন্য রানের পর এবার ১৫ রানে জীবন পান উইন্ডিজ অধিনায়ক।
তবে বল হাতে দাপট দেখান বোলাররা। টাইগার পেসারদের আগুনে বোলিংয়ে উইন্ডিজ প্রথম ৫ ওভারে কোনো রান তুলতে পারেনি। ৬ষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে ওপেনার জন ক্যাম্পবেলের ব্যাটে প্রথম রান আসে। দুই ওপেনারই খেলতে থাকেন সাবধানে। এতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৫ ওভার ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ১৫ রান তুলে চা বিরতিতে যায় ব্র্যাথওয়েটের দল।
বাংলাদেশ থেকে ৮৮ রানে পিছিয়ে থেকে ব্র্যাথওয়েট ৯ এবং ক্যাম্পবেল ১ রান নিয়ে দিনের তৃতীয় ও শেষ সেশনের খেলা শুরু করেন। এই সেশনের শুরুতে সফরকারীদের ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করেন দুই অপরাজির ব্যাটসম্যান। তাতে কিছুটা সফলই বলতে হবে তাদের। কিন্তু প্রায় দেড় বছর টেস্টে ফেরা মুস্তাফিজকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের। এই বাঁহাতি পেসারের হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য।
ইনিংসের ২৬তম ওভারে ক্যাম্পবেলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। এক্ষেত্রে কিছুটা আনলাকি-ই বলা যায় ব্যাটসম্যানকে। আউটসাইড অফের বল ডিফেন্স করেছিলেন, কিন্তু ইনসাইড এজ হন তিনি। বল সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার আগেই বেল পড়ে যায়। ৭২ বলে ১ চারে ২৪ রান করেন এই ওপেনার।
এরপর ধৈর্য হারিয়ে একবার রিভিউ নিয়ে নষ্ট করে বাংলাদেশ দল। খানিক পর অবশ্য দলকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন এবাদত। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে এবাদতের করা স্টাম্প বরাবর ফুলার লেন্থের বল রেইফার আড়াআড়ি শট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায় উইকেটের পেছনে। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ ধরেন নুরুল হাসান সোহান। ২৬ বলে ১১ রান করেন রেইফার। ভাঙে ২৮ রানের জুটি।
দিনের শেষদিকে আরো একটি রিভিউ নষ্ট করে বাংলাদেশ দল। বোনারকে ফেরাতে মুস্তাফিকের বলে চ্যালেঞ্জ হারেন অধিনায়ক সাকিব। এতে ৩টি রিভিউয়ের দুইটিই নষ্ট করে বসে সফরকারীরা।
প্রথম দিনের খেলা শেষে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৯৫ রান তুলেছে উইন্ডিজ। যেখানে হাতে ৮ উইকেট রেখে বাংলাদেশের থেকে আর ৮ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিক শিবির। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ১৪৯ বলে ৪২ এবং এনক্রুমার বোনার ৪৩ বলে ১২ রান নিয়ে আগামীকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
বল হাতে প্রত্যাবর্তনে দারুণ করেছেন মুস্তাফিজ। ১২ ওভার বল করে মাত্র ১০ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। যেখানে ৬টা মেডেন দিয়েছেন তিনি। এবাদত হোসেন ১২ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট, মেডেন ৪টা। সমান ৪টা মেডেন দিয়েছেন খালেদ আহমেদ। ৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন তিনি।
এমআই