শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ঘরে-বাইরে পানি থইথই, বিভীষিকাময় রাত পার করলো সুনামগঞ্জের মানুষ

বৃহস্পতিবার, জুন ১৬, ২০২২
ঘরে-বাইরে পানি থইথই, বিভীষিকাময় রাত পার করলো সুনামগঞ্জের মানুষ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

টানা ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে ডুবেছে সুনামগঞ্জ। বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতেরও যেন বিরাম নেই। সময়ের সাথে সাথে বন্যা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে বানের জলের উচ্চতা। বাসাবাড়ির ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে আগেই। ইট, কাঠসহ নানা জিনিস ব্যবহার করে অনেকেই তাদের ঘরের খাটটি উঁচু করার চেষ্টা করেছেন, সেই খাটও তলিয়ে গেছে পানিতে। বন্যার পানির সঙ্গে ঘরে প্রবেশ করছে মাছ, বিষাক্ত পোকামাকড় ও সাপ। দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে অন্ধকার রাতে বিভীষিকাময় সময় পার করেছেন সুনামগঞ্জের মানুষ।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা থেকেই সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এসময় সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সুনামগঞ্জ শহরের উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মধ্যবাজার, কাজির পয়েন্ট, হাসন নগর, জগন্নাথবাড়ি রোড, নতুনপাড়া, উকিল পাড়া, ষোলঘর, নবীনগর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে আগেই। ক্রমেই পানির স্রোত বাড়ছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সকাল থেকেই পানি বাড়তে থাকায় অনেকেই বাসা থেকে বের হতে পারেননি। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তাদের প্রায় সকলকেই কোমর পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরিজীবী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দাবি করেছেন, সুনামগঞ্জকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে যেন সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়। এসএসসি পরীক্ষা পেছানোরও দাবি উঠেছে।

সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সেসময় বলা হয়, ছাতক গ্রীড উপকেন্দ্রে সুনামগঞ্জের ১৩২ কেভি মেইন লাইনের ব্রেকারে কাছাকাছি চলে এসেছে পানি। পানিতে তার, খুটি বা মিটার খুলে পড়ে থাকতে দেখলে তা হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিপদজনক কিছু দেখলে বা দূর্ঘটনার আশঙ্কা করলে ০১৭১৪০৬৯৩৭৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

গত বুধবার (১৫ জুন) সুনামগঞ্জের ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক ও সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সুরমা নদীর তীর উপচে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা পুরোটাই বন্যাকবলিত। ছাতক উপজেলায় ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যেই সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সাংবাদিকদের জানান, 'আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যে সুনামগঞ্জে আরও ২ দিন বৃষ্টিপাত থাকবে, এ সময় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।' সন্ধ্যা থেকে বিরমাহীন বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে, যাতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে আগামী ৭২ ঘণ্টায় সুরমায় পানি বাড়তে পারে। এমনটা ঘটলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশের সব প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সোমবার নাগাদ দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারী কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী শনিবার নাগাদ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ-নদীসমুহের পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

বিভিন্ন পূর্বাভাস বলছে, শুক্রবার (১৭ জুন) নাগাদ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এই সময়ে তিস্তা নদীর পানির সমতল বিপৎসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে। বর্তমানে সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণাধীন বিভিন্ন নদ-নদীর ১০৯টি পয়েন্টের মধ্যে পানির সমতল বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বেড়েছে ৮৬টিতে, কমেছে ২০টিতে, অপরিবর্তিত আছে তিনটি পয়েন্টের পানির সমতল। আর পাঁচটি পয়েন্টে পানির সমতল প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে।

এদিকে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি ত্রাণসহায়তা পাঠাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, ১২টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ২০ মেট্রিকটন করে খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

গত এপ্রিলে সিলেট অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে অসময়ে বন্যা দেখা দেয়। এরপর মে মাসের মাঝামাঝিতে সময়ে বিগত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই ফের বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা। সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা হয় গত ১৩ মে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় এখন শহরের সড়কে চলছে নৌকা, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় চার্জের অভাবে মুঠোফোনও বন্ধ হয়ে আছে অনেকের। কারোর ঘরে খাবার নেই, রান্নাঘর ডুবে যাওয়ায় আগুন জ্বলছে না চুলায়। সবমিলিয়ে বানের জলে দুঃস্বপ্নের রাত কাটিয়েছেন জেলাবাসী। যে কয়টি ঘরে পানি ওঠা বাকি ছিল, সেগুলোও এখন পানিতে থইথই।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল