জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদেরের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও কয়েকটি ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল। তাদের অপপ্রচারের বিষয়গুলোও বেশ হাস্যকর এবং নিতান্তই হয়রানি ছাড়া অন্যকিছু নয় বলে মন্তুব্য করেছেন সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদের।
অপপ্রচার হিসেবে তারা বলছেন, পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন হওয়ার আগেই গত কয়েকমাস ধরে তিনি ডক্টরেট লিখেছেন, যা সত্য নয়। এ বিষয়ে ড. আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার পিএইচডি অর্জিত হয়েছে গত ২৮ এপ্রিল। পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির নিয়মকানুন বিভিন্ন রকম। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছি সেখানে দুই ধরণের ডিফেন্স হয়। একটা হলো পাবলিক ডিফেন্স আরেকটা প্রাইভেট ডিফেন্স। আমার প্রাইভেট ডিফেন্সে আটজন জুরিবোর্ডের সদস্য ছিল, সেখানে আমেরিকান প্রফেসরও ছিল। প্রাইভেট ডিফেন্সের দুইমাস পর পাবলিক ডিফেন্স হয়। আমার পাবলিক ডিফেন্সে বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশর রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ উপস্থিত ছিলেন। যেদিন পাবলিক ডিফেন্স হয়ে যাবে ঐদিন থেকে ডক্টরেট লেখা যায়। এটার সাথে সার্টিফিকেটের কোন সম্পর্ক নাই। আমি বেলজিয়ামে ছিলাম সেখান থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছি মাত্র একমাস হলো তাই সার্টিফিকেট আসার কয়েকমাস আগে ডক্টরেট লিখার বিষয়টা সত্যি নয়।’
তার বিরুদ্ধে আরেকটি অপপ্রচার হলো, তিনি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট জমা দেননি। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর পিএইচডি সনদ গত ৩ মে ২০২২ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যু করা হয় এবং জুন এর ৫ তারিখ তিনি হাতে পেয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি জমা দিয়েছেন।
ড. আব্দুল কাদের আরো বলেন, 'পিএইচডি সার্টিফিকেট এমনতো নয় যে, হাতে পেলেই সবাইকে দেখানো লাগবে। যারা এসব বলছেন তারা না জেনে এবং ধারণা নির্ভর এসব কথা বলছেন। এটা একান্তই অপপ্রচার। পিএইচডি সনদ আসার আগেই অধ্যাপক পদে আবেদন করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। '
জানা যায়, গত ৩ মে, ২০২২ তিনি সার্টিফিকেট পান এবং এর ১ মাস ১৭ দিন পর ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক পদের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল সে অনুযায়ী তিনি ১৮ জুন, ২০২২ তারিখে আবেদন করেছেন। সুতরাং সনদপ্রাপ্তির পূর্বেই অধ্যাপক পদে আবেদন করেছেন সংবাদটি সঠিক নয় বরং বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ড. আব্দুল কাদের বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং তিন মাস বা ছয় মাসের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন কিংবা সনদ প্রদানের কোনো কথা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে সেখানেও বলার সুযোগ নাই। সুতরাং এটি সম্পূর্ণ অবান্তর এবং অসৎ মানসিকতাপূর্ণ মিথ্যাচার।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা বলছেন আমি প্রভাষক হতে ২ বছর সময় নিয়েছি তাদের জ্ঞাতার্তে জানাতে চাই, আমার সহকারী অধ্যাপক হতে সাড়ে তিন বছর লেগেছে। আমি ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। ফলে প্রভাষক পদে ২ বছর ১৪ দিনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে সেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ সময় যোগ হয়েছে। এতে আমার সাড়ে ৩ বছর সময় হয়েছিল।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. আব্দুল কাদের ২০১৩ সালে বেলজিয়ামে ২ বছরের একটি মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ এনভারনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) এর মর্যাদাপূর্ণ ফিলোশীপ অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বেলজিয়ামের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ভিএলআইআর-ইউওএস আইসিপি ফেলোশীপ অর্জন করেন। ইতোমধ্যই তার ২০ টি পাবলিকেশন আছে। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় অর্ধশতাধিক আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিয়েছেন তিনি।’
প্লানিং কমিটির বিষয়টি জানতে চাইলে প্লানিং কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ড. আব্দুল কাদের-এর বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার কোন ভিত্তি নেই। প্লানিং কমিটিতে সংখ্যা গরিষ্ঠের ভিত্তিতে তার সব ডকুমেন্টস গ্রহণ করে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া যারা বিভাগের প্লানিং কমিটির সিদ্ধান্ত সাংবাদিককে বলতে পারেন তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এটি একটি গোপনীয় বিষয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আব্দুল কাদের বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক ও তাদের মদদপুষ্ট ভূঁইফোড় অনলাইন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি সবাইকে এসব অপপ্রচার বিষয় সাবধান ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।’
এবিষয়ে ভূগোল পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্লানিং কমিটির ড. মোঃ আল আমীন হক বলেন, ‘উনি পিএইচডি সম্পন্ন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সকল তথ্য প্রমাণ জমা দেওয়ার পর ডক্টরেট পরিচয় ব্যবহার করছেন। যার সকল এভিডেন্স আমি দেখেছি। যেটা হচ্ছে সম্পূর্ণ অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন।’
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মালেক বলেন, ‘মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এটি। যে বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি দিচ্ছে তারা অনুমতি দিচ্ছে পদবী ব্যবহারের। সেটা জগন্নাথে জমা দেওয়ার আগে বা পরে বিষয় না, ডিগ্রী পাওয়ার পরই পদবী ব্যবহার করা যাবে। ২৮ এপ্রিল তিনি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন ও মে মাসে সার্টিফিকেট পান। যারা তার বিরুদ্ধে এগুলো লিখছে তাদের জানার ভুলও আছে। এগুলো সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।
এমআই