নিজস্ব প্রতিবেদক:
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের আজকের দিনে ৩ জুলাই মারা যান তিনি। ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তার প্রথম উপন্যাস তেইশ নম্বর তৈলচিত্র ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালে উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়। ছায়াছবিটির শিরোনাম ছিল বসুন্ধরা, পরিচালনায় ছিলেন সুভাষ দত্ত। আশাবাদী ও সংগ্রামী মনোভাব তার রচনার বৈশিষ্ট্য। এটি বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ হয়। বুলগেরীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে "পোত্রেৎ দুবাতসাৎ ত্রি" শিরোনামে। তিনি ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
আলাউদ্দিন আল আজাদের পিতা গাজী আব্দুস সোবহান ও মাতা মোসাম্মাৎ আমেনা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ (১৯৫৫), ঢাকা জগন্নাথ কলেজ (১৯৫৬-৬১), সিলেট এমসি কলেজ (১৯৬২-৬৮) এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৬৪-৬৭)-এ অধ্যাপনা করেন।
তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন এক বছর (১৯৭৪-৭৫) এবং পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর মধ্যে সক্রিয়ভাবে লেখালেখি করেছেন। তার বহুল পঠিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- তেইশ নম্বর তৈলচিত্র, শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথম দিন, কর্ণফুলী, যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, অপর যোদ্ধারা প্রভৃতি।
আলাউদ্দিন আল আজাদ ছিলেন বাস্তব জীবনের রূপকার। বাস্তবতার রূপ নিয়ে নির্মাণে করেছেন তার সাহিত্য ভাষা। বলা যায় সংস্কৃতাশ্রয়ী শব্দ তিনি পরিহার করেছেন। তিনি প্রধানত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সমাজের রূপকার। তার গল্প নাতিদীর্ঘ কিন্তু আগ্রহ তৈরি করে।
ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। একুশের রক্তাক্ত ঘটনার পর তারই উদ্যোগে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় বুলেটিন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা নিয়ে রচিত ‘ফেরারি ডায়েরি’ সমকালীন ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দলিল।
তিনি নিবিড়ভাবে জড়িত থেকে দেশ ও জাতির জন্য সেবামূলক কাজ করে গেছেন। আর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আবুল কালাম শামসুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেছেন।
এমআই