কাওছার আলী, ডিআইইউ প্রতিনিধি:
সাংবাদিক! শব্দটির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। কিছু সংখ্যাক সাহসী, মেধাবী এবং কঠোর পরিশ্রমীদের জন্য সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতা অন্যরকম এক গ্রহণযোগ্যতার বিষয়। একই ভাবে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আরো এক ধাপ এগিয়ে। পড়াশোনা অবস্থায় অনেকেই চায় ক্যাম্পাস সাংবাদিক হতে। সবাই চাইলেও কিছু সংখ্যক সাহসী, মেধাবী এবং কঠোর পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরাই হতে পারে ক্যাম্পাস সাংবাদিক। সময়ের চাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সুবিধা, অসুবিধা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার নানান দিক নিয়ে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। তাদের কথা তুলেধরেছেন সময় জার্নাল এর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি কাওছার আলী।
আগ্রহের পূর্ণতা দিয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা
মো. আজহারুল হক মিজান,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় সংবাদিকরা হলো ক্যাম্পাসের দর্পণ। সাংবাদিকতা আর লেখালেখির প্রতি প্রবল আগ্রহ আমার ছোট বেলা থেকেই। ছোট বেলা থেকেই গল্প, কবিতা লিখতাম আর ভাবতাম একদিন সংবাদপত্রে এসব প্রকাশিত হবে। আমার এই আগ্রহের পূর্ণতা দিয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে জেনেছি অজানা অনেক কিছু। শিখেছি কলমের শক্তিকে উপলব্ধি করতে। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে। আর এই ভালো লাগা ও ভালোবাসা থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছি।
সাংবাদিকতার আঁতুড়ঘর ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা
জুবায়েদুল হক রবিন,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
যেখান থেকে দেশ বরেণ্য ও নামকরা সাংবাদিকের জন্ম হয় তা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে বলা হয়ে থাকে সাংবাদিকতার আঁতুড়ঘর। বিশ্ববিদ্যালগুলোতে যারা সাংবাদিকতা করেন সাংবাদিকতার তেমন কোনো ধরনের জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজেকে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় নিযুক্ত করেন। শুরুর দিকে সংবাদ নির্বাচন ও লেখায় অপরিপক্বতার পরিচয় দিলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে নিজেকে নিয়ে যেতে পারেনসাফল্যের চূড়ায়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সাথে জড়িত অনেকেই স্বপ্ন দেখেন দেশসেরা সাংবাদিক হওয়ার। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা, যেখান থেকে একজন সাংবাদিকের মাঝে জন্ম নেয় সততা, দায়বদ্ধতা এবং নিষ্ঠায় দেশপ্রেমে নিজেকে ধাবিত করার এক অপ্রতিরোধ্য আবেগ। যে আবেগকে মনে ধারণ করতে হলে আসতে হবে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায়।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা শিক্ষার একটি বড় মাধ্যম
সাব্বির আহমেদ,
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা মেধার বিকাশ ঘটায় এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের চর্চা শেখায়। শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করলে কিভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হয় সেটা জানা যায়। সারাদেশের সাংবাদিকদের সাথে একটি যোগাযোগ সৃষ্টি হয় এতে করে যোগাযোগ দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্যদের কাছে নিজের একটা আলাদা পরিচিতি গড়ে ওঠে। সুযোগ হয় অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলাত ও চলাফেরা করার। তাতে পাবলিক স্পিকিং দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা শিক্ষার একটি বড় মাধ্যম বলা যেতে পারে। যারা ভবিষ্যতে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা করতে চায় তাদের জন্য ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা তাদের ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার ভীত শক্ত করে।
নানা সংগঠনের নেতৃত্ব দিতেপারে সাংবাদিকরা
যায়েদ হোসেন মিশু,
কবি নজরুল সরকারি কলেজ
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আপনার ক্যাম্পাস জীবন আনন্দময় করে তুলবে।সাংবাদিকরা ক্যাম্পাসের উন্নতি,অগ্রগতি,অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা বিষয় তুলে ধরে।এতে করে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী থাকে। আবার শত্রুরও অভাব নেই।কলেজ প্রশাসনের অনিয়মের নিউজ প্রকাশ হলে নানা হুমকি ধমকি শুনতে হয়।ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন গুলোর অনিয়মের নিউজ প্রকাশ হলে সাংবাদিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য এমনকি মারধরে শিকার হতে হয়।
নিউজের জন্য একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকে ঐ ক্যাম্পাসের উপাচার্য,অধ্যক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকলের সাথে প্রায়ই সাক্ষাত করতে হয়।এতে করে সবার সাথে ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।
একটি ক্যাম্পাসে সব ধরনের নিউজ থাকে।ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন।একটি সংবাদ কার পক্ষের আর কার বিপক্ষের সেটি দেখার বিষয় নয়।বস্তুনিষ্ঠ সংবা পরিবেশনই মূল কথা।আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বড় বড় কলেজ ক্যাম্পাস গুলোতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করার সুযোগ রয়েছে।ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের নিয়ে গড়ে উঠেছে সাংবাদিক সমিতিসহ নানা সংগঠন।বস্তুনিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হয়ে ওঠেন একজন দক্ষ সংবাদকর্মী।
ইমাম ইমু,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা- এই শব্দ দু'টির সাথে আমরা বেশ পরিচিত। প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে এই ধারাটি নতুনভাবে ধরা দিয়েছে মানুষের কাছে। গঠে উঠেছে এক নতুন পরিবেশ। কিন্তু কী সেই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা? কেন-ই বা দরকার সেটি?
একটু সংক্ষেপে বলি, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পত্রিকায় বা অনলাইন পোর্টালে নিযুক্ত সংবাদদাতা কিংবা প্রতিনিধিরা সাংবাদিকতার বাজারে একেবারেই নবাগত। সাংবাদিকতার এই অধ্যায় হলো কেবলই হাতেখড়ির। আবার ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাকে বলা হয় সাংবাদিকতার আঁতুড়ঘর। প্রথম দিকে সংবাদ সংগ্রহ, নির্বাচন ও লেখায় অপরিপক্কতার পরিচয় দিলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিখতে গিয়ে কেউ কেউ একসময় দেশের খ্যাতনামা সাংবাদিকে পরিণত হন। বাস্তব অবস্থা ও একনিষ্ঠ একাগ্রতাই তাঁদের এমনভাবে গড়ে তোলে।
এসব রিপোর্টাররা একসঙ্গে দুইটা পরিচয় বহন করেন। একটা হলো শিক্ষার্থী, আরেকটা শিক্ষানবিশ সাংবাদিক। এই যে, শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নিজের একটা পরিচয় দাঁড় হয়, এটা শুধু ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মধ্যেই সম্ভব৷
একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিককে সব ধরনের সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। যার কারণে সব বিষয়ে তার একটা সম্যক ধারণা তৈরি হয়ে যায়৷ অনেক সময় তাকে বড় সিদ্ধান্ত নিতে। সংবাদের দিক নির্ধারণ করতে হয়৷ যার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের দু:সাহসিক ব্যাপার৷ সত্যনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরতে গিয়ে সয়তে হয় নানা সমস্যাও৷ তবু চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় আসা উচিত।
পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করাটা যথেষ্ট নয়
মো. বরাতুজ্জামান স্পন্দন,
গণ বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করাটা যথেষ্ট নয়। এখানে সততা, নেতৃত্বদান, সকলের সাথে মিশতে পারা সহ আরো নানান সামাজিক গুণাবলী অর্জনের যথেষ্ট সুযোগ থাকে। যেকোনো উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক সংগঠনের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে এইসব গুণাবলী সহজেই রপ্ত করা যায়। ক্যাম্পাস
সাংবাদিকতার মাধ্যমে সততার সাথে যেকোনো বিষয় সবার সামনে তুলে ধরা যায়। এতে নির্ভরযোগ্যতা ও নেতৃত্বদানের সুযোগ তৈরি হয়। যেকোনো খবরের তথ্য সংগ্রহ করতে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এমনকি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সাথে মিশতে হয়, যা মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য গুণ। পাশাপশি লেখালেখির হাত পাকা করতে ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে পরিপূর্ন জ্ঞান রাখতে এই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা অতুলনীয়। এক কথায় নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় আসা উচিত।
সাংবাদিকতার প্রাথমিক স্কুল হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা
আবুল কালাম,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
যখন সাংবাদিক শব্দটার পরিপূর্ণ অর্থ খুঁজে বিশ্লেষণ করবেন তখন, নিজের অন্তর থেকে দৃঢ় ইচ্ছা হবে সাংবাদিকতা করার। আপনি যখন সাংবাদিকতা করার জন্য উন্মাদ হয়ে খুঁজে বেড়াবেন কিভাবে সাংবাদিকতা করা যায়? ঠিক তখন আপনি উপলব্ধি করি যে, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতাই হলো সবচেয়ে উত্তম পথ। সময়ের সাথে আপনার স্নায়ুতে সাংবাদিকতার নেশা প্রকট হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় আসে সেই সুবর্ণ সুযোগ। একজন সাংবাদিক কে সার্বিক ভাবে চপল থাকতে হয়। আর সেই কাজের প্রথম শিক্ষাক্ষেত্র হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা।
যদি একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক তার কাজ, লেখা, চিন্তা-চেতনা, যুক্তিবিদ্যা কিংবা দূরদর্শিতা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে তাকে আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয় না। ভবিষ্যতে যে কোন কঠিন কাজে সে সবসময় সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে। আমি মনে করি সাংবাদিকতার প্রাথমিক স্কুল হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা।
এমআই