সর্বশেষ সংবাদ
সাক্ষাৎকার
ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণের মানদণ্ড নেই সারা বছর বসিয়ে রেখে ভাড়াভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় পরিশোধ কাম্য নয় : ম তামিম অসামঞ্জস্য চুক্তি করে এখন গ্রাহকদের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে :
গার্মেন্টস ব্যবসা, কাঠের ব্যবসা করেছেন এমন কোম্পানিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। আর এসব কোম্পানি থেকে বিদ্যুৎ না পেলেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলীয় বিবেচনায় রেন্টাল ও কুইন রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়ে এবং ওই সব কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কারণে দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসার উপক্রম হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে কার স্বার্থে? এ দিকে আরো তিনটি কোম্পানিকে এ সুবিধায়ার আওতায় আনা হচ্ছে। জানতে চাইলে ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিকে অসামঞ্জস্য। চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যারা চুক্তি করেছেন তাদের সততা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যথাযথ ভাবে চুক্তি না হওয়া বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এখন দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের ওপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম ইনকিলাবকে বলেন, চলমান লোডশেডিং জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য করা হচ্ছে। সারা বছর কোনোভাবে ব্যবহার না করে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হলে সেটি সমস্যার। কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রকে সারা বছর বসিয়ে রেখে বা খুব কম চালিয়ে সক্ষমতা ব্যয় পরিশোধ করা হলে বুঝতে হবে ওই কেন্দ্রটির দরকার নেই। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২০০৯-১০ সালের বিদ্যুৎ খাত এবং এখনকার বিদ্যুৎ খাত এক নয়। তখন জরুরিভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তিগুলো ছিল তিন থেকে পাঁচ বছরের। কিন্তু এরপর এগুলোর সাথে একই শর্তে কেন চুক্তি নবায়ন করা হলোÑ আমি বুঝতে পারছি না। সম্প্রতি আরো পাঁচটির সাথে চুক্তি করা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুবিধা দিতে করা হয়েছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের গড়ে সাড়ে সাত থেকে আট টাকা যায়। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রভিত্তিক হিসাবের সাথে কুইক রেন্টালযুক্ত করা হয়, তাহলে কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে সরকারকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ কিনতে হয় ৬০০ টাকায়। এটা বসিয়ে রেখে ভাড়া দেয়ার কারণে হচ্ছে। আর এর চাপ কিন্তু দেশের মানুষকে নিতে হচ্ছে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও সঙ্কটের কারণে সারা দেশে এখন এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের রাত ৮টার পর শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। তবে ব্যবহার হয় মাত্র সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। অতিরিক্ত সক্ষমতা বসিয়ে রাখতে হয়। ১৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ সরকারকে দিতে হচ্ছে। দেশে বিদ্যুৎ নতুন কেন্দ্র স্থাপন ও সেগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদর্শ কোনো মানদণ্ডও নেই। ২০১২ সালে একটি বিবিয়ানা-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। একটিমাত্র কোম্পানি (সামিট গ্রুপ) দরপত্রে অংশ নেওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি ধরা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে ‘বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এক্সটার্নাল ডেবট বা বিডব্লিউজিইডি’ এই তথ্য জানায়। দেশের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত অবস্থা বসে বসে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা আদায় করা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অর্থনীতির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্ত, সরকার কোম্পানিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে আসছে। যার ফলে বিদ্যুৎ খাতে বিশাল অর্থনৈতিক বোঝা সরকারকে বহন করতে হচ্ছে।
বিডব্লিউজিইডি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিপিডিবি ৩৭টি কোম্পানিকে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করেছে সরকার। বর্তমান মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করার পরও এই ব্যয়ের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিপিডিবির বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। যা বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ৫৪.৫ শতাংশ বেশি। ৬৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন-ক্ষমতাসম্পন্ন শীর্ষ ১২টি কোম্পানি ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে। যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রদত্ত মোট ক্যাপাসিটি চার্জের ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ তালিকার এক নম্বরে রয়েছে সামিট গ্রুপ। তাদের পরে পর্যায়ক্রমে রয়েছে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, ইডিআরএ পাওয়ার হোল্ডিং, ইউনাইটেড গ্রুপ, কেপিসিএল, বাংলা ট্র্যাক, ওরিয়ন গ্রুপ, হোসাফ গ্রুপ, মোহাম্মদী গ্রুপ, ম্যাক্স গ্রুপ, শিকদার গ্রুপ ও এপিআর এনার্জি।
বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র-এর মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ সম্পর্কে অনেকের ধারণা পরিষ্কার নয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের খরচ রয়েছে, সেই বিনিয়োগের সঙ্গে ব্যাংক ঋণের অন্যান্য চার্জযুক্ত হয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়। অনেক দেশেই এই চর্চ্চা রয়েছে। সরকার যদি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করত, সেখানে বিনিয়োগ করতে হত। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অবশ্যই সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দর চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র চলুক আর না চলুক প্রত্যেক মাসে এই টাকা (ক্যাপাসিটি) দিতেই হবে। এরমধ্যে বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৫ বছর মেয়াদি। অর্থাৎ আগামী ১৫ বছর এই ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা এতই প্রভাব বিস্তার করছে অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের দেখানো পথেই ছুটছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা না দেখলেও দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ। কিছু কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা নিয়েও স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নিয়েও রয়েছে নানান গুঞ্জন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতে সবার শীর্ষে রয়েছে সামিট গ্রুপ। কোম্পাটির মালিকানাধীন ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ২ হাজার ২৫৫ মেগাওয়াট। বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৯ শতাংশ তার হাতে। শিগগিরই আরও এক হাজার মেগাওয়াটযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে সামিট পাওয়ার, সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল) নামে তিনটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
কয়েক বছর আগেও ছোটখাটো ব্যবসায়ী থাকলেও এখন সিঙ্গাপুরের মতো জায়গাতেও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। সিঙ্গাপুরের সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল ভারতের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে। কোরিয়া, নেপাল ও ভুটানে বিনিয়োগের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশের বাইরে কোম্পানি খোলা ও টাকা নিয়ে যাওয়া নিয়ে রয়েছে নানা রকম বিতর্ক। অনেক সময় ওভার ইনভয়েজ ও আন্ডার ইনভয়েজের মাধ্যমে টাকার পাচারের অভিযোগ রয়েছে সামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে। বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতেও এখন একচেটিয়া দৌরাত্ম্য লক্ষ্যণীয়। ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নিয়েও নানা রকম মুখরোচক আলোচনা রয়েছে বাজারে।
সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন ১৮ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের তথ্য পাওয়া গেছে। ১৩২৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে প্রতিমাসে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে ১২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার উপরে। ওই ৭ বিদ্যুতের কেন্দ্রের বিপরীতে জুলাই/২১- মার্চ/২২ (৯ মাস) ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাট্রাকের মালিকানায় রয়েছে ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রতি মাসে ১০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। গত ৯ মাসে বাংলাট্রাকের ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানাধীন ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে ১০৮ কোটি টাকা। বিগত ৯ মাসে কোম্পানিটি ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পেয়েছে ৯৮৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার উপরে।বিএনপি ঘরানার কোম্পানি খ্যাত ওরিয়ন গ্রুপ চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে বর্তমান সরকারের সময়েও। অনেক সময়ে আওয়ামী ঘরানারা কোম্পানির চেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে এসেছে। ওরিয়ন সর্বপ্রথম কয়লাভিত্তিক ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ছাড়পত্র পায়। ওই ৩টি আলোর মুখ না দেখতেই আরও ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলওআই ইস্যু করা হয়। প্রথম ধাপের ৩টি ২০১৬ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসতে না পারলে এলডি (জরিমানা) করার কথা। পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল করার কথা। কিন্তু এখানে বিদ্যুৎ বিভাগ পুরাই নীরব। ৬ বছর ধরে শুধু সময় বাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ওরিয়ন গ্রুপ কয়লার ব্যর্থ হলেও তেলভিত্তিক ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক বলে জানা গেছে। যার বিপরীতে প্রতিমাসে ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার উপরে। ৯ মাসের চার্জ এসেছে ২৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস এসোসিয়েশনের (বিপপার) সভাপতি পদে রয়েছে কনফিডেন্স গ্রুপের মালিক ইমরান করিম। কনফিডেন্স গ্রুপের রয়েছে ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বগুড়ায় দু’টি এবং রংপুরে অবস্থিত একটি। প্রত্যেকটির উৎপাদন ক্ষমতা ১১৩ মেগাওয়াট করে। তেলভিত্তিক ওই তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাসিক ক্যাপাসিটি চার্জ ৩৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ৩টির উৎপাদন ক্ষমতা একই হলেও চার্জের ব্যাপক তারতম্য লক্ষ্যণীয়। রংপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মাসে ১১ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার ৪৩০ টাকা দেওয়া হলেও একই ক্ষমতার বগুড়া ইউনিট-২-এর বিপরীতে দেওয়া হচ্ছে ১৩ কোটি ২২ লাখ ২৯ হাজার ৩৮৮ টাকা। সিকদার গ্রুপের মালিকাধীন রয়েছে ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে। পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট ও পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারা জামালপুর ৯৫ মেগাওয়াট। এ দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র খুব একটা চালাতে দেখা না গেলেও প্রতিমাসে গুণতে হচ্ছে ১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত ৯ মাসে ১১৫ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হয়েছে। ডরিন গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে ৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এগুলো টাঙ্গাইল, ফেনী ও নরসিংদীতে অবস্থিত। প্রত্যেকটির উৎপাদন ক্ষমতা ২২ মেগাওয়াট করে। ডরিনকে প্রত্যেক মাসে ক্যাপাসিটি বাবদ দিতে হচ্ছে ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার উপরে। ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর ওই কোম্পানিটি শেয়ারবাজারেও কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত। এক দফায় জরিমানাও গুণতে হয়েছে।
এর বাইরে ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র মরহুম আনিসুল হকের দেশ এনার্জি, এনার্জিপ্যাক, ডরিন গ্রুপ, সিনহা গ্রুপ, রিজেন্ট গ্রুপ, আনলিমা গ্রুপ রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক তথ্যে দেখা গেছে, গত ৯ মাসে (জুলাই/২১-মার্চ/২২) ৬১টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ১১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা। একই সময়ে ১২টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিপরীতে দিতে হয়েছে ৬৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ১৬টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থ বছরের হিসেবে দেখা গেছে ৬২টি আইপিপি ও এসআইপিপি ১১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। ওই অর্থ বছরে ১৯টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চার্জ দিতে হয়েছে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি, ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ৯৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে।
গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ এ সময়সীমার মধ্যে ১৬টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ব্যয় হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড দক্ষিণকে ৪১৩ কোটি টাকা, ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) সিদ্ধিরগঞ্জকে ৩৩৯ কোটি, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ভেড়ামারাকে ৩২৬ কোটি, আশুগঞ্জ ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে ২৪৮ কোটি, আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড উত্তরকে ২৭২ কোটি, আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে (৫৭৩ মেগাওয়াট) ১৭৭ কোটি, এনডব্লিউপিজিসিএল সিরাজগঞ্জ ইউনিট-১-কে ১২১ কোটি, এনডব্লিউপিজিসিএল সিরাজগঞ্জ ইউনিট-২-কে ২১৪ কোটি, এনডব্লিউপিজিসিএল সিরাজগঞ্জ ইউনিট-৩-কে ২২১ কোটি, এনডব্লিউপিজিসিএল মধুমতিকে ১০২ কোটি, এনডব্লিউপিজিসিএল খুলনাকে ২৫৩ কোটি, ইজিসিবি হরিপুরকে ২২৫ কোটি, বিআর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডকে ১৭৪ কোটি, ইজিসিবি সিদ্ধিরগঞ্জকে (২১০ মেগাওয়াট) ১১২ কোটি, আশুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে ১৬ কোটি ও এনডব্লিউপিজিসিএল সোলার কোম্পানিকে ৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্টের সুযোগ রাখা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী এ অর্থ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এখন নতুন করে যেসব চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে, সেখানে এ বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে নেয়া হচ্ছে। এখন নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্টএ রকম করে চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে।
এসএম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল