সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার কারণে এক ব্যাংকের রপ্তানি বিল আরেক ব্যাংক কিনতে পারছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক লেনদেনে দর নিয়ন্ত্রণ করায় এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে ডলারও বিক্রি করছে না। এ অবস্থায় ডলারের চাহিদা মেটানোর বড় ভরসা এখন প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। ফলে রেমিট্যান্স নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোতে কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। এ সুযোগে প্রতিদিনই দর বাড়াচ্ছে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে গতকাল সর্বোচ্চ ১০৮ টাকায় ডলার কিনেছে কোনো কোনো ব্যাংক, আগের দিন যা ছিল ১০৬ টাকা। শুধু রেমিট্যান্স নয়; আমদানি-রপ্তানি ও নগদ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, ডলারের ওপর চাপ কমাতে আমদানি কমানোর উদ্যোগের সুফল এখনও বাজারে তেমন পড়েনি। ডলারের চাহিদা এখনও ব্যাপক। ব্যাংকগুলো যাতে দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি এক্সচেঞ্জ হাউসে ধরনা দিচ্ছে। এ সুযোগে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো দর বাড়াচ্ছে। যেসব ব্যাংকের সংকট বেশি তাদের এই বাড়তি দরে না কিনে কোনো উপায় নেই। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১০২ থেকে ১০৩ টাকায় রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছিল ব্যাংকগুলো।গত ২৬ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে সব ব্যাংক অভিন্ন দরে ডলার কিনবে। বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। বরং পরিমাণ, ব্যাংক ও দেশভেদে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ভিন্ন ভিন্ন দর নিচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম সমকালকে বলেন, এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে 'এক দেশ এক রেট' কার্যকরের আলোচনা হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা কঠিন। ব্যাংকের ক্রয় দর দেখেও প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার উপায় নেই। কেননা, কেউ হয়তো কিনেছে ১০৪ টাকায়; দেখাচ্ছে ১০২ টাকা। বাকি ২ টাকা হয়তো অন্যভাবে সমন্বয় করবে। তিনি বলেন, প্রবাসী আয় সংগ্রহে ব্যাংকগুলো এখন প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বাড়তি দরের সুবিধা রেমিট্যান্স গ্রহীতারা পাচ্ছেন না। প্রবাসী বাংলাদেশিরা একটা দরে এক্সচেঞ্জ হাউসে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করছেন। এক্সচেঞ্জ হাউস বিভিন্ন ব্যাংকে দর কষাকষি করে এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে অতিরিক্ত দরের সুবিধা নিচ্ছে এক্সচেঞ্জ হাউস। তিনি বলেন, এ প্রবণতা ঠেকাতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। হুন্ডি কমানোর উপায় বের করতে হবে।
রেমিট্যান্সের প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে আরও বাড়ানো যায় কিনা, দেখতে হবে।সংশ্নিষ্টরা জানান, বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেই। আবার বিভিন্ন দেশে ব্যাংকগুলোর হাতেগোনা নিজস্ব যে এক্সচেঞ্জ হাউস রয়েছে, তা অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। যে কারণে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামের মতো এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে ব্যাংকগুলো চুক্তি করে। এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে দুই উপায়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে। প্রথমত, প্রবাসী বাংলাদেশি এখানে যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতে চান তার বিপরীতে। দ্বিতীয়ত, ক্যাশ অন কাউন্টার (সিওসি) তথা কাউন্টারে বসে নগদ ডলার সংগ্রহ। উভয়ভাবে সংগ্রহ করা অর্থ নিয়ে ব্যাংকের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ হাউসের দর কষাকষির সুযোগ রয়েছে। কেননা, কোনো একজন প্রবাসী হয়তো এখানকার 'এ' ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রেমিট্যান্স পাঠালেন।
তবে 'এ' ব্যাংকের তুলনায় 'সি' ব্যাংক হয়তো দর বেশি দিচ্ছে। তখন এক্সচেঞ্জ হাউস 'সি' ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে 'এ' ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বলছে। আর নগদ ডলার নিয়ে বিভিন্ন দর কষাকষি করছে।বেসরকারি একটি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধান সমকালকে বলেন, দরের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে আন্তঃব্যাংকে ডলার বেচাকেনা এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। এক ব্যাংকের রপ্তানি বিল আরেক ব্যাংকে বিক্রির সুযোগ কমায় সেখান থেকেও ডলার সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ রকম অবস্থায় ডলারের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিচ্ছে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ এলসিতে কিছু সহায়তা করছে। ফলে বাকি চাহিদা মেটাতে এখন ব্যাংকগুলোকেও ছুটতে হচ্ছে এক্সচেঞ্জ হাউসে।
এদিকে ব্যাংকগুলো আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে ১০২ থেকে ১০৩ টাকা পর্যন্ত দর নিচ্ছে। রপ্তানিকারকরা ৯৮ থেকে ১০০ টাকা দর পাচ্ছেন। আর ব্যাংকভেদে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দরে। ব্যাংকগুলো গতকাল নগদ ডলার বিক্রি করেছে গড়ে ১০১ থেকে ১০৭ টাকায়। আগের দিন সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৬ টাকা।খোলাবাজারে ডলারের দরও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক দিনে প্রতি ডলারে ৮ টাকা বেড়ে মঙ্গলবার খোলাবাজারে সর্বোচ্চ ১১২ টাকায় বেচাকেনা হয়। গতকাল অবশ্য দর নেমেছে ১০৭ টাকায়। খোলাবাজারে এভাবে ডলারের দর বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ মনে করছেন বিশ্নেষকরা। তাঁরা বলছেন, এক শ্রেণির ব্যক্তি ডলার কিনে মজুত করছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, দর আরও বাড়বে। এমন ধারণা থেকে শেয়ারবাজারের মতো ডলারে বিনিয়োগ করছেন। পাচারের কারণে হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় এমন হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী :জানা গেছে, ডলারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আবার তৎপরতা শুরু করেছে। গতকাল একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন মানিচেঞ্জারে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। ব্যাংকগুলো খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছে কিনা, সে তথ্যও খতিয়ে দেখছে। বেশ আগে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর তদারকি করছে। ডলারের খরচ কমাতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। ৫০ লাখ ডলারের বেশি অংকের এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য দিতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ নির্দেশনা অমান্য করলে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলার বিক্রি একশ কোটির ঘর পেরোল :বুধবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে আরও ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস শেষ হওয়ার আগেই বিক্রি একশ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। গতকাল পর্যন্ত মোট বিক্রি করা হয়েছে ১০৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ৩৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়নে নেমেছে।
ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছে। সর্বশেষ গত সোমবার প্রতি ডলারে ২৫ পয়সা বাড়িয়ে এ রকম দর নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে গত এক বছরে প্রতি ডলারে বাড়ানো হয় ৯ টাকা ৯০ পয়সা।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস পর্যন্ত আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। একই সময় পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে চার হাজার ৪৫৮ কোটি ডলারের। এতে করে প্রথম ১১ মাসে রেকর্ড তিন হাজার ৮২ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রায় ১৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ডলারে নেমেছে। যে কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নেওয়া উদ্যোগে আমদানি ব্যয় কমলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল