স্পোর্টস ডেস্ক:
কমনওয়েলথ গেমসকে ঘিরে বার্মিংহামে উৎসবের আমেজ। উৎসবটা মূলত সিটি সেন্টারের আশপাশে। বার্মিংহাম শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত এই সিটি সেন্টার। তার চারপাশের বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এবারের কমনওয়েলথ গেমস। এখান থেকে সড়ক পথে ২০ মিনিটের দূরত্বে আলেকজান্ডার স্টেডিয়াম। সেখানে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় মার্চপাস্টের মাধ্যমে পর্দা ওঠে ২২তম কমনওয়েলথ গেমসের। ৭২ দেশের ৫০৫৪ জনের মার্চপাস্টে ছিলেন বাংলাদেশের ৩০জন ক্রীড়াবিদ। গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন গতকাল হলেও ময়দানের লড়াই শুরু হবে আজ।
একযোগে ১১ ডিসিপ্লিন মাঠে গড়াবে প্রথম দিনে। যেখানে চার ডিসিপ্লিনে লড়াই করবে বাংলাদেশের ১২ অ্যাথলেট। এরমধ্যে সম্ভাবনার জিমন্যাস্টিকসে প্রথম দিনেই দুই ইভেন্টে রিংয়ে নামবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কমনওয়েলথ গেমস বাংলাদেশকে দিয়েছে অন্যরকম পরিচিতি। যতিও সেটা এসেছে শুটারদের কল্যাণে। এই আসরে পাওয়া আট পদকের সবক’টিই এনে দিয়েছেন শুটাররা। ১৯৯০ অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে দুই বাংলাদেশি শুটার আতিকুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার নিনি ১০ মিটার এয়ার পিস্তল দ্বৈত ইভেন্টের ফাইনালে ফেভারিট অস্ট্রেলীয় জুটিকে হারিয়ে চমক দেখান। কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে দেশ পায় প্রথম পদকের দেখা। আতিক-নিনির সোনায় মোড়ানো সাফল্য সাহস দিয়েছিল অনুজদের। এরপর থেকে তাদের পথ অনুসরণ করে শুটাররা। ব্যতিক্রম কেবল এবার। নিরাপত্তা ভাবনায় এবারের কমনওয়েলথ গেমসে শুটিং ইভেন্ট রাখেননি আয়োজকরা। বাংলাদেশের আরেক সম্ভাবনাময় খেলা আরচারিও জায়গা পায়নি ১৯টি খেলার তালিকায়। নারী ক্রিকেটের স্বপ্ন বাছাইয়েই সমাধি হয়ে গেছে। তবে ১১ দিনের এই আসরে পুরোপুরি নিরাশ হতে বার্মিংহামে ৫০ সদস্যের বাংলাদেশ বহর পাঠায়নি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। খুব জোর গলায় না হলেও ব্যক্তিগত কয়েক ইভেন্টে ভালো কিছুর প্রত্যাশা তাদের। বিশেষ করে জিমন্যাস্ট আলী কাদের হক ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমানকে নিয়ে আশা অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্তারা। এছাড়া হাই জাম্পে মাহফুজুর রহমান ও উম্মে হাফসারাও আশা দেখাচ্ছেন। ১৯ ডিসিপ্লিনের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা এবার অংশ নেবেন সাতটি ডিসিপ্লিনে। দুই মাদার ইভেন্ট অ্যাথলেটিক্স ও সাঁতার ছাড়াও ভারোত্তোলন, জিমন্যাস্টিকস, কুস্তি, বক্সিং ও টেবিল টেনিসে থাকছে বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব। এই সাত ডিসিপ্লিনের আজ চারটিতে নামছে বাংলাদেশ। বক্সিংয়ে মো. হোসেন আলী, সুর কৃষ্ণ চাকমা ও সেলিম হোসেন আজ রিংয়ে দাঁড়াবেন। এদের মধ্যে হোসেন আলী ৬৩.৫-৬৭ কেজি ওজন শ্রেণিতে, সুর কৃষ্ণ ৬০-৬৩ কেজিতে এবং ৫৪-৫৭ কেজি শ্রেণিতে সেলিম হোসেন লড়াই করবেন। এনইসি হলের চার নম্বর ফ্লোরে হবে বক্সিং। বাস্তবতার নিরিক্ষে বক্সার সুর কৃষ্ণ চাকমা বলেন, ‘বৈশ্বিক এসব আসরে ভালো করতে হলে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা দরকার তার ধারে কাছে নেই আমরা। সত্যি বলতে আমরা এটাকে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ হিসেবে ধরে নিয়ে রিংয়ে দাঁড়াবো। চেষ্টা করবো নিজেদের সর্বোচ্চটা দেয়ার। গতকাল গেমসের মূল ভেন্যু বার্মিংহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে বিকাল চারটায় শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রায় ছয় ঘন্টার অনুষ্ঠানের কারণে সকালেই অনুশীলন সেরে নেয় বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। সকালে অনুশীলনের ভেন্যু থেকে আক্ষেপ করে ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বলেন, ‘গোল্ডকোস্ট (অস্ট্রেলিয়া) কমনওয়েলথ গেমসে আমি ষষ্ঠ হয়েছিলাম। এবার তার চেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা কম। এর কারণ হিসেবে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী এই ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘আমরা মাত্র চার মাসের অনুশীলনে এখানে খেলতে এসেছি। অন্য প্রতিযোগীরা চার বছর প্রস্তুতি নিয়ে এখানে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরা কিভাবে কুলিয়ে উঠবো? আগামী ১লা আগষ্ট ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে লড়াই করবেন মাবিয়া। তার আগে আজ সুর কৃষ্ণদের সঙ্গে প্রথম দিনেই জিমন্যাস্টিকসে পুরুষ দলগত ইভেন্টে রিংয়ে নামবে বাংলাদেশ দল। যেখানে শিশির আহমেদ, আবু সাইদ রাফির সঙ্গে থাকছেন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আলী কাদের হক। দলগত ইভেন্টের পাশে আলী কাদের লড়াই করবেন ফ্লোর এক্সারসাইজ ও ভল্টিং টেবিলে। এই আসরে তার এই দুই ইভেন্টের দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশ। যদিও আলী কাদের নিজে খুব একটা আশা দেখছেন না। এই জিমন্যাস্ট বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আসর এটি। চেষ্টা করবো বেটার করার।’ এছাড়া পুরুষ টেবিল টেনিসে দলগত ইভেন্টে আজ টেবিলের লড়াই শুরু করবেন মোহতাসিন আহমেদ, রামহীম লিয়ন বর্ম, রিফাত মাহমুদ ও মুফরাদুল কায়ের হামজা। সাঁতারে প্রথম দিনে ৫০ মিটার ব্যাটারফ্লাইয়ে মাহমুদুন নবী নাহিদ ও ৫০ মিটার ব্রেস্টস্টোকে পুলে নামবেন মরিয়ম আক্তার।
এমআই