ইসাহাক আলী, নাটোরঃ
নাটোর সদরের হয়বতপুর গো.ই সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জাফর বরকত নামে ইংরেজী বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপককে পেটাতে পেটাতে মাদরাসা থেকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে । এ ঘটনায় এলাকার অভিভাবক ও স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
তবে চেয়ারম্যান কালুর দাবি, ওই শিক্ষকই সাধারণ মানুষ ও তার উপর চেয়ার নিয়ে মারতে উদ্দ্যত হওয়ায় বিক্ষুদ্ধরা তাকে মারপিট করে। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে ও জনরোষ ঠেকাতে শিক্ষককে ইউনিয়ন পরিষদে নিরাপত্তার কারণে রক্ষা করেছেন। এ ঘটনার পর পরই জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ ও পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঘটনাস্থল পরিদর্শন
করেছেন।
এদিকে এ ঘটনায় থানায় প্রতিষ্ঠান ও ওই শিক্ষক বাদী হয়ে দুটি পৃথক মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ , প্রত্যক্ষদর্শি ও স্থানীয়রা জানান , তিনমাস আগে নাটোর সদর উপজেলার হয়বতপুর গোলাম ইয়াসিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুমকে। সে সময় সভাপতি প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় লক্ষীপুর- খোলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু। সভাপতির পদ নিয়ে মাঝে মধ্যে ওই মাদ্রাসায় বিশৃংঙ্খলা তৈরী হয়। সম্প্রতি তা নিয়ে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকা। চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা কমিটি পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান বা স্থানীয় কাউকে সভাপতি করে পুনরায় কমিটি করার দাবি করে আসছে। এজন্য তারা অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন দূর্ণীতির অভিযোগও আনেন। এরই অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুর নেতৃত্বে তার লোকজন মাদরাসায় ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ছবি তুলতে থাকে। এ সময় ওই মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকত বাধা দেয় প্রদান করে। এ সময় চেয়ারম্যানের লোকজনের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারপিট করে চেয়ারম্যানের লোকজন।
এ সময় অপর শিক্ষকরা জাফর বরকতেকে উদ্ধার করে মাদরাসার একটি শ্রেণী কক্ষে আটকে রাখে। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন দরজায় কড়া নাড়লে ওই শিক্ষক স্টাফের লোকজন মনে করে দরজা খুলতেই চেয়ারম্যান সমর্থকরা শ্রেণী কক্ষে থেকে বের করে আবার মারতে মারতে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। আটকে রাখা অবস্থায়ও তাকে মারপিট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষকের স্বজনরা।
এছাড়া এ সময় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন মাদরাসার শিক্ষার্থীদেরও বের করে দিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষককে উদ্ধার করে। পরে জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিভাবক , শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে
উঠলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রায় তিন মাসে আগে এমপি শিমুল সাহেব ডিও দিয়ে রিয়াজুল ইসলাম মাসুমকে মাদরাসার সভাপতি করেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু মাঝে মধ্যেই এসে মাদ্রাসায় বিশৃঙ্খলা তৈরী করে।
এটা নিয়ে বারবার শিক্ষকরা সমাধান করার কথাও বলেছে। আজকে হঠাৎ করে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন মাদ্রাসায় এসে হট্টগোল সৃষ্টি করে। এ সময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক বাধা দিতে গেলে তাকে চেয়ারম্যানের লোকজন মারপিট করে। পরে
আমরা তাকে উদ্ধার করে শ্রেণী কক্ষে আটকে রাখি। কিন্তু আবার চেয়ারম্যানের লোকজন সেখান থেকে বের করে মারতে মারতে তাকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে আটকে রাখে। আমরা এই পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারছি না, আমরা এর সমাধান চাই।
অপর একজন শিক্ষকও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ক্লাস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এর সমাধান হওয়া উচিত। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এক নারী অভিভাবক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু অবস্থায় যারা এমন পরিস্থিতি করে শিক্ষককে মারপিট করে তাদের বিচার করা দরকার। তারা কিভাবে এমন কাজের সাহস পায়। সবাই কেন প্রতিরোধ করছেনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় অভিভাবক বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন নিয়মিতই এমন অরাজকতা করছে এর প্রতিবাদ করলে লাঞ্চিত হওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, সকালে তিনি বাড়ি থেকে এক মেম্বারকে সাথে নিয়ে মাদরাসার পাশ দিয়ে ইউনিয়ণ পরিষদে যাওয়ার সময় মাদরাসার ভিতর লোকজনের হট্টগোল দেখে এগিয়ে যান। এ সময় সেখানে গেলে শিক্ষক জাফর বরকত সাধারণ মানুষ ও তাকে চেয়ার উঠিয়ে মারার জন্য উদ্দ্যত হন। এ সময় বিক্ষুদ্ধরা প্রতিবাদ করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জনরোষ ঠেকাতে লোকজন তাকে ধরে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখে। তার নিরাপত্তার কারণে আটকে রাখা হয়েছে কোন মারপিট করা হয়নি। বিক্ষুদ্ধরা তাকে হাতে পেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতো।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজনই ওই শিক্ষককে মারপিট করেছে। আমরা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। থানায় এজাহার দেওয়া মাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআই