সময় জার্নাল ডেস্ক: কিভাবে সংসার চলবে তার কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না মানুষ। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এর প্রভাবে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বাড়ছে পরিবহন ভাড়া। এমনিতেই
গত দুই বছরের করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। আবার যাদের কাজ আছে তাদের অনেকেই নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছেন না। সংসার চালানো হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে। এমনই এক কঠিন মুহূর্তে অস্বাভাবিক হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ কী করবেন তা এখন ভেবে পাচ্ছেন না। শুধু সাধারণ মানুষই নন, শিল্পোদ্যোক্তারা পড়েছেন মহাবিপাকে।
এমনিতেই জ্বালানি সঙ্কটে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে বেড়েছে লোডশেডিং। এর ফলে ডিজেল কিনে জেনারেটর চালিয়ে শিল্পকারখানা চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেকেই লোকসান গুনছিলেন, এরওপর নতুন করে অস্বাভাবিক হারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের সামনে শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই বলে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, এমনিতেই কয়েক দিন আগে সারের দাম বেড়েছিল, এখন আবার ডিজেল করোসিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা পড়ে গেছেন মহাবিপাকে। বাড়তি দামে ডিজেল কিনে কিভাবে সেচকার্য চালাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে এমনটা ধারণায় থাকলেও এত বাড়বে এটা তারা চিন্তাও করেননি। একাধিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলছেন, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার আরো সহনীয় হতে পারত। কারণ এত বেশি তেলের দাম একসাথে আগে কখনো বাড়ানো হয়েছে বলে তাদেরও জানা নেই। যদিও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, পেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিগত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
জনগণের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা, প্রস্তুতি ছাড়াই রাতের অন্ধকারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়া হলো। গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় গণশুনানি হয়। কিন্তু তেলের দামের ক্ষেত্রে এই লুকোচুরিটা কেন? হঠাৎ করে গভীর রাতে ভোক্তা পর্যায়ে কারো সাথে কোনো পরামর্শ না করে হুট করে ইচ্ছেমতো একটা দাম নির্ধারণ করে দিলাম। তেলের দাম যখন দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম ছিল আমরা তো কম দামে তেল কিনিনি। ওই টাকা যদি হিসাব করা হয়, তাহলে লাভের কত টাকা জমা আছে বিপিসির কাছে। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেই টাকাটা কি সমন্বয় করা যায় না। দাম বাড়বে তাই বলে এত অস্বাভাবিক?’
সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে সমন্বয় করার কথা বলছে। ভালো কথা। কিন্তু এখন কেন? বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম তো আরো আগেই বেড়েছিল। তখন সরকার কেন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখন তো বিশ্ববাজারে দাম কমেছে। সময়ক্ষেপণ করে অস্থিরতা তৈরি করার কোনো মানে হয় না। অনেক দেরিতে আমরা দাম বাড়াই। আবার দাম কমলে আমরা আর সমন্বয় করি না। এই প্রবণতা থেকে তো বেরিয়ে আসা দরকার।
সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই বাজারে যেতে পারছে না। এমন কোনো পণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এই দাম আরো অসহনীয় করে তুলবে। মধ্যবিত্তরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে মানুষ আর ভালো থাকতে পারে না।
সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে অর্থনীতি, রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। করোনার পর থেকে মানুষ এমনিতেই দিশেহারা।
সরকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে এই মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছে। যদি খাবারই না পাই, তাহলে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার কী ফল আসবে! মানুষ যদি না খেয়ে মরে, তাহলে সরকারের নীতি তো জনবিরোধী নীতি বলেই বিবেচ্য হবে। সাধারণ মানুষ তো এত রাজনীতি বোঝে না। মানুষ চালের মূল্য কত বাড়ল বা কমলো তা ভালো বোঝে। জ্বালানির এই মূল্য প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়াবে।
সরকারের লোকজন শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন? এশিয়ার আরো দেশ আছে। তাদের সাথেও তো তুলনা করা যায়। সরকারের লোকজন সিঙ্গাপুরের সাথেও তুলনা করে। এত দ্রুত শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করবে কেন?
চরম অব্যস্থাপনা আর ঘাটতি নিয়ে সরকার বড় বড় চিন্তা করতে অভ্যস্ত। এই বড় বড় চিন্তা বন্ধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য যা যা করার তাই করা দরকার। জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করার সুযোগ আছে বলে মনে করি। ক্রয়ক্ষমতা সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখতে হবে। মানুষের জীবনমানের দিক বিবেচনা করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
সময় জার্নাল/এলআর