মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৩ জন থেকে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সুমাইয়া আক্তার নামে এক নারীকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বীথি রানী চক্রবর্তী আটক করে ওই প্রতারক থেকে থানায় সোপর্দ না করে টাকা ফেরত দেয়ার মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুরে উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি গ্রামের কাজী ফরহাদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার
বিভিন্ন সময় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার চৌদ্দগ্রাম অফিসে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে পাঁচরা
গ্রামের নজির আহমেদের ছেলে আহমেদ অলি থেকে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা, একই গ্রামের আহমেদ উল্যাহর মেয়ে
আয়েশা আক্তার থেকে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা, পাঁচরা ব্যাপারী বাড়ির নাছরিন আক্তার থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে
নেয়।
ভুক্তভোগীরা চাকরির জন্য সুমাইয়া আক্তারকে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি তাদেরকে বিভিন্ন সময় অজুহাত দেখিয়ে
সময় ক্ষেপন করতো। এক পর্যায়ে আয়েশা আক্তারকে অফিস সহায়ক পদে চাকরিতে যোগদানের জন্য ২০২১ সালের ১
জুন একটি যোগদান পত্রে তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা এবং পৌরসভার তৎকালিন সচিব
হারুনুর রশীদের স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেয়। আয়েশা আক্তার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগদান করতে
আসলে দেখা যায়, যোগদান পত্রটি সম্পূর্ণ ভুয়া। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হারুনুর রশীদ নামে ওই
কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সীলগুলো জাল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই প্রতারক সুমাইয়া আক্তার তাদেরকে
বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে চুপ থাকতে বলে। রোববার চাকরি প্রার্থীরা কৌশলে সুমাইয়া আক্তারকে উপজেলা
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে এসে আটক করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বীথী
রানী চক্রবর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত না করে প্রতারক ওই মহিলা থেকে চাকরি প্রার্থীদের টাকা
ফেরত দেয়ার মুচলেখা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বীথী রানী চক্রবর্তী বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে আমার এবং অফিসের নাম ভাঙিয়ে সুমাইয়া আক্তার বিভিন্ন লোকজন থেকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সীল ও স্বাক্ষর জাল করে যোগদানপত্র দেয়। তাকে কেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা পুলিশের সোপর্দ করা হলো না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্যার বিষয়টি পরে জানাব। এ চক্রের সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তাদের নাম ঠিকানা বের করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
চাকরি প্রার্থী আয়েশা আক্তার বলেন, সুমাইয়া আক্তার নিজেকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বীথী রানী
চক্রবর্তী পরিচয় দিয়ে আমাকে এ অফিসের অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় আমার মা
সাজেদা বেগম থেকে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে কর্মকর্তাদের সীল ও স্বাক্ষর জাল করে একটি ভুয়া
যোগদানপত্র দেয়। আমি যোগদানপত্র নিয়ে অফিসে যোগদান করতে গিয়ে জানতে পারি, আমাকে দেওয়া
যোগদানপত্রটি ভুয়া। এ যোগদানপত্রে যে সকল কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সীল রয়েছে সেগুলোও ভুয়া।
একই গ্রামের নজির আহমেদের ছেলে আবদুল ওলি বলেন, অফিস সহায়ক পদে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার আশ^াস দিয়ে
১ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি না দিয়ে বিভিন্ন টালবাহান করতে থাকে। পরে বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরে
তাকে কৌশলে আজকে(রোববার) আটক করে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসলে সে আমাদের টাকা
ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে মুচলেখা দেয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি মাত্র জানতে পেরেছি। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে কথা বিষয়টি জেনে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
এমআই