এম.পলাশ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক বাগেরহাটঃ
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে অর্ধশতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপুর্ণ ভবনে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন। অধিকাংশ এ ভবনগুলোর আনুষ্ঠানিক পরিত্যাক্ত ঘোষণা না হলেও বিকল্প টিনের ছাপড়া ঘরে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিশু শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যাক্তিরা কাগজে কলমে কয়েকটি স্কুল পরিত্যাক্ত ভবন দেখালেও এখন পর্যন্ত অপসারণ করা হয়নি এ ভবনগুলো। দেখা মিলছেনা নতুর ভবনের, যে কোন সময়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকায় শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
সরেজমিন ও সংশ্লিস্ট অফিসসুত্রে জানা গেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তালিকা অনুযায়ী এ উপজেলার ৩৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঝুকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাক্ত তালিকায় থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়নি।
সরেজমিনে এ চিত্র রয়েছে ভিন্ন, অর্ধশতাধিকেরও উর্ধে স্কুল ভবন রয়েছে ঝুঁকিপূর্ন। ১৭৬ নং হরতকিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৩। এ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ন ভবনটি ২০১৮ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে কর্র্তৃপক্ষ। দু’বারে সয়েল টেষ্ট করানো হয়েছে নতুন ভবনের জন্য। তবে অদ্যাবধি পর্যন্ত নেই কোন অগ্রগতি। দেখা মিলছেনা নতুন ভবনের। শিক্ষার্থীদের বিকল্প ছাপড়া টিনসেড ঘরে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। পরিত্যাক্ত ভবনে টানানো হয়েছে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। ১৮২নং বারইখালী সুতালড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ৪ বছর পূর্বে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হলেও মিলছেনা নতুন ভবনের। বিকল্প ছাপড়া ঘরেই চলছে পাঠদান। ১৬৪নং দক্ষিণ গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূন ভবনটি ২০১৮ সালেও পরিত্যাক্ত ভবন ঘোষনা হলেও অদ্যাবদি পর্যন্ত পরিত্যাক্ত ভবনটি অপসারণ করা হয়নি। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকায়। ৬৩নং শ্রীপুর জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন কাম স্কুল ভবন ২০০৮ সালে নির্মাণ হলেও ২/৩ বছর যেতে না যেতেই ভবনটির বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খসে খসে পড়ে ২০১১ সাল থেকে ঝুঁকিনিয়ে ওই ভবনের মধ্যেই পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষকরা। বর্তমানে বিকল্প ক্লাস হচ্ছে টিনের ছাপড়া ঘরে। স্থানীয় অভিভাবকদের দাবি ভবনটি অপসারণ করে নতুন ভবন নির্মানের।
২৯৮ সূর্যমুখী হালদারবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝঁিুকপুর্ন ভবনটি ১ বছর পূর্বে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হলেও অপসারণ করেনি কর্তৃপক্ষ। ১৮৬ নং বারইখালী মনিক মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪৩ নং এস.জি মিস্ত্রডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ৫/৭বছর পূর্বে পরিত্যাক্ত ঘোষনা হলেও ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা, ৯৩ নং ডুমুরিয়া সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূন ভবনের বারান্দায় চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, অনুরুপ ২৯১ নং মঠবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২নং মালমগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯০নং দক্ষিণ তেলিগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮১নং হরগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৭৪ নং দক্ষিন সুতালড়ী শাহজাহান মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৮নং চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬৭নং এস বড়পরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬৮নং ছোটপরী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪৪ নং গাজী আজিজুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫৫নং উত্তর সুর্যমূখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫৮ নং পূর্ব বহরবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ একাধিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনগুলোকে অনতিবিলম্বে অপসারন করে নতুন ভবনের দাবী জানিয়েছেন শিক্ষকমন্ডলীসহ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ সর্ম্পকে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০টি পরিত্যাক্ত ভবনের তালিকা
রয়েছে। ইতোপূর্বে ৫৩টি বিদ্যালয়ের মাটি পরীক্ষা সম্পন্ন করে নতুন ভবনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২৫টি বিদ্যালয় নতুন ভবনের কাজ মাঠপর্যায়ে চলমান রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দিন বলেন, এ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ন পরিত্যক্ত স্কুল ভবনগুলোর তালিকা করে শিক্ষা
কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। অপসারনের জন্য নির্দেশনা অপেক্ষা রয়েছে। প্রতি বছরই নতুন করে তালিকায় যাচ্ছে অনুপযোগী বিদ্যালয়ের ভবনগুলোর।
এ সর্ম্পকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ২০টি ভবনের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে নিলাম দেওয়া হয়েছে। অনুপযোগী বাকি ভবনগুলোর তালিকা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে পর্যায়ক্রমে নিলামের ব্যবস্থা করা হবে।
এমআই