সময় জার্নাল ডেস্ক: এখনো ধর্মঘটে চা শ্রমিকরা। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল প্রতিটি বাগান। শ্রমিকরা এখন নেতাদের বিশ্বাস করছেন না। মৌলভীবাজারের ৯২টি, সিলেটের ১৯টি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। শ্রমিকদের কথা- নেতারা প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করছেন। শ্রমিকদের সমর্থন দিয়েছে পঞ্চায়েত ও ভ্যালি কমিটি।
সিলেটে ১৯ বাগানের শ্রমিকরা আন্দোলনে: সিলেটে চা বাগান পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন বাগান পঞ্চায়েতের মধ্যে দিনভর আলোচনার পরও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার না করে তা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকরা। গতকাল দুপুরে সিলেট গলফ ক্লাবে সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের পঞ্চায়েত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা। এ সময় গলফ ক্লাবের বাইরে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিভিন্ন বাগান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা জড়ো হন এখানে।
একইসঙ্গে সিলেট ভ্যালির সবক’টি চা বাগানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি পালন করে। এরআগে গত সোমবার সকাল থেকে সিলেট ভ্যালির ২৩টি চা বাগানের মধ্যে ৪টি বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগদেন। আর ১৯ বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন। তবে গতকাল ফের ২৩ বাগানের শ্রমিকরা কাজে না গিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। কামাইছড়া বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি বিমল ভর জানিয়েছেন- শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তারা কোনো অবস্থায়ই মানছেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজে আশ্বাস দিয়েছেন কিনা সেটি তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তারা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে কেউ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাই ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সিলেট ভ্যালি চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু গোয়ালা জানিয়েছেন- সিলেটের ২৩টি বাগানের মধ্যে ১৯টি বাগানের শ্রমিকরা কাজে নামেনি। চারটিতে নেমেছে। যেসব বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি তাদের সঙ্গেও আমরা আছি। তবে- পঞ্চায়েত বৈঠকে কোনো কোনো পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন তারা কাজে যোগ দেবেন।
১১তম দিনের মতো গতকাল শ্রীমঙ্গলের অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে নামেন নি। দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সাধারণ শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। জেলা প্রশাসকের এ আহ্বানে জেরিন ও ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকরা সাড়া দিলেও আর কোনো বাগানের শ্রমিক তাতে সাড়া দেয়নি।
মঙ্গলবার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকরা জড়ো হয়ে মিটিং মিছিল অব্যাহত রেখেছে। জেলা প্রশাসক ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, এএসপি (সার্কেল) শহিদুল হক মুন্সি, জেরিন চা বাগানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সেলিম রেজা, ফিনলে চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার জিএম শিবলী, এসিল্যান্ড সন্দ্বীপ তালুকদার, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীর অর রশিদ তালুকদার, ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির এবং চা বাগানগুলোর পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতিগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় জেরিন চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি গোয়ালা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুরোধক্রমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে কাজে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই কথা বলেন ভাড়াউড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নূর মিয়া।
এদিকে মঙ্গলবার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায় শ্রমিকরা জড়ো হয়ে মিটিং মিছিল অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিক সমাবেশে সাধারণ শ্রমিকরা বলেছেন, ‘আলোচনার নামে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে আমাদের ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। আমরা ১৪৫ টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত মানি না’। কালিঘাট চা বাগানের শ্রমিক চন্দ্রা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্বাস করি না’।
সময় জার্নাল/এলআর