বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কম, পাঠদানে ঘাটতি

অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম

শুক্রবার, আগস্ট ২৬, ২০২২
অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম

সময় জার্নাল ডেস্ক:দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংকটজনক সময় পার করছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি। গবেষক তৈরির প্রস্তুতি হিসাবে আগে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা হয়।তাদের একটি অংশ কর্মজগতে প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দেন। আরেকটি অংশ গবেষণায় নিয়োজিত হন। এই পাঠদান আর গবেষণার নেপথ্য কারিগর শিক্ষক। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।


অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের মতো সিনিয়র শিক্ষক ছাড়াও চলছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম খণ্ডকালীন শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। অথচ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। 


অধ্যাপক-সহযোগী অধ্যাপকের সংকট  অবসরপ্রাপ্ত সুনামধারী অধ্যাপকদের নিয়োগে নীতিমালা হচ্ছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে সাড়ে ৬শ। তাদের পড়ানোর জন্য ৪৪ জন শিক্ষক আছেন। তাদের মধ্যে ২৬ জন সহকারী অধ্যাপক, ১৮ জন প্রভাষক। নেই কোনো সহযোগী অধ্যাপক। দুজন অধ্যাপক থাকলেও তাদের একজন উপাচার্য, অপরজন ডিন-যাদের ক্লাসের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।


প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, তিন দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সহযোগী অধ্যাপকসহ সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ করা যায়নি। আসলে প্রান্তিক পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো শিক্ষকদের কেউ যেতে চান না। এর চেয়ে ঢাকা বা বড় শহরে ভালো কলেজেও অনেকে চাকরি করতে চান। বর্তমানে ১৮ জন প্রভাষক আর ২৬ জন সহকারী অধ্যাপক আছেন। তবে খুব শিগগিরই অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া হবে। 


শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ঢাকার বাইরে ছোট শহর বা জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কমবেশি একই চিত্র। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও করুণ। শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি আছে অবকাঠামোগত সমস্যাও। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই ভাড়া বাড়িতে চলছে। কোথাও শিক্ষক নিয়োগের আগেই শুরু হয়েছে শিক্ষাক্রম। ফলে কেবল ক্যাম্পাস নয়, অনেক স্থানে ভাড়ার শিক্ষক দিয়েও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলেও আসলে গবেষণা নেই কোথাও। কেবল পাঠদানেই সীমিত উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। ছাত্রভর্তির পর ভবন ভাড়া, ডেকোরেশন, জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে ভয়ংকর অভিযোগ উঠছে একের পর এক। সর্বশেষ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নিয়ে ওঠা অভিযোগ আলোচনা সৃষ্টি করে।


এ প্রসঙ্গে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি জানান, গত কয়েক দশকে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এর প্রতিটির ক্ষেত্রেই সমস্যা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে নয় বছর পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয়তা নিরূপণে সময় ব্যয় হয়েছে নাথান কমিশনের। এখন আইন পাশের পরই উপাচার্য নিযুক্ত হন। এরপর কয়েকটি ভবন ভাড়া করেই ছাত্রছাত্রী ভর্তি চলে। ধীরে ধীরে শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। উপাচার্যই হন প্রকল্প পরিচালক। ফলে উচ্চশিক্ষা বলতে যা হওয়ার কথা, তা হয় না। উলটো কখনো উপাচার্যদের বিরুদ্ধে মাথা হেঁট করার মতো অভিযোগ আসছে। আইন পাশের পর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিলে তিনি ক্যাম্পাস তৈরি করতেন। সেটা হস্তান্তরের পর উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে আজকে এত প্রশ্ন উঠত না।ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৭তম প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অধ্যাপক নেই। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আছেন ২ জন আর পাবনায় ৩ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৬টিতে সহযোগী অধ্যাপক নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খণ্ডকালীন বা ভাড়া করা অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক দিয়ে কাজ চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।


জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৬টি বিভাগে অনার্স পাঠদান চলছে। এগুলো ফিশারিজ, গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ত্রিপল-ই), ব্যবস্থাপনা ও সমাজকল্যাণ। মাস্টার্স কার্যক্রম নেই। প্রতিষ্ঠানটি ফিশারিজ সংক্রান্ত একটি বেসরকারি কলেজের ওপর ভর করে যাত্রা শুরু করে। ওই কলেজের কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে।এ প্রসঙ্গে উপাচার্য যুগান্তরকে জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের এসব বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকমতো চালাতে চাইলে স্বতন্ত্র পে-স্কেলের আওতায় শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। ত্রিপল-ই’র একজন ভালো অধ্যাপক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিলে ৫ লাখ টাকা পান। এখন তাকে যদি ৩ লাখও দেওয়া না হয় তাহলে তিনি কেন আসবেন এই মফস্বলে। আবার একটি ভালো ফলধারী ছাত্রকে পর্যাপ্ত সুবিধা না দিলে প্রভাষক হওয়ার চেয়ে তিনি ঢাকায় একটি কলেজে চাকরি করাকে শ্রেয় মনে করবেন।


নাম প্রকাশ না করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বলেন, মফস্বলের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাছাই করা শিক্ষক পাওয়া খুবই দুষ্কর। এলাকার রাজনৈতিক নেতারা আর উপাচার্যের পছন্দের তালিকার ব্যক্তিরা প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পান। বারবার বিজ্ঞাপন দিয়েও সিনিয়র শিক্ষক পাওয়া যায় না। বিশেষ করে পিএইচডি ডিগ্রিধারী পাওয়া খুবই দুষ্কর। প্রস্তুতি আর সমীক্ষা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে জাতির লাভ খুব একটা হবে না।ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান সম্প্রতি যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ঢাকার বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের ঘাটতি আছে। বিশেষ করে নতুন প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় ও যোগ্য শিক্ষক ছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বছরের পর বছর সিনিয়র শিক্ষকের ঘাটতি উপলব্ধি করে ইউজিসি একটি নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা রেখে বিধান প্রস্তাব করার কথা ভাবছে কমিটি, যাতে শিক্ষকদের আকৃষ্ট করা যায়।


ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করছেন। ঢাকার বাইরের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষকের সংকট। এসব প্রতিষ্ঠান অনেকটাই স্নাতক ডিগ্রি দেওয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এই ডিগ্রিটাও যদি ভালো করে পড়িয়ে দিতে হয় তাহলে ভালো শিক্ষকও দিতেই হবে। কিন্তু ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, বেতন-ভাতাসহ নাগরিক সুবিধার অভাব অনেককে আকৃষ্ট করছে না। সবমিলে মফস্বলে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া খুব কঠিন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চিন্তাভাবনা চলছে।খণ্ডকালীন শিক্ষকই ভরসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে৩৯টিতে উপাচার্য, ৭২ উপ-উপাচার্য আর ৪৩টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই * ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিসেম্বর পর্যন্ত আলটিমেটামদেশের অর্ধেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা এক থেকে ৫ জন। সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যাও প্রায় একই রকম। ৪টিতে কোনো অধ্যাপক নেই, সহযোগী অধ্যাপক ছাড়া চলছিল ১১টি প্রতিষ্ঠান। শুধু প্রভাষক দিয়ে চলছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও খুঁজে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দেশে বর্তমানে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে চালু আছে ১০৩টি। দেশে ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ শুরু হয়। ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অবস্থা বিরাজ করছে। করোনার ডামাডোলে আরও অবনতি হয়েছে। বেতন-ভাতা অনিয়মিত হওয়ায় করোনার আগের তুলনায় শিক্ষক কমেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আয় কমে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া ক্যাম্পাস ছেড়ে দিয়ে কার্যক্রম গুটিয়ে এনেছে। ইতোমধ্যে একটি বিক্রির খবরও বেরিয়েছে। কয়েকটি বন্ধের পথে বলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সূত্রে জানা গেছে। 


এ অবস্থার মধ্যেই ২১ আগস্ট ইউজিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমানে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। উপ-উপাচার্য নেই ৭২ আর কোষাধ্যক্ষ ৪৩টিতে। প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি)। এতে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। ঢাকার সেন্ট্রাল ইউমেন্স ইউনিভার্সিটি একবার সরকার বন্ধ করে দেয়। পরে মামলায় জিতে ফের চালু করে। এখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের একজনও নেই। একই অবস্থা বিখ্যাত আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), পিপলস ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।


সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শিক্ষক ও প্রশাসনে শীর্ষ কর্মকর্তার ছাড়াও, নানা সংকটে জর্জরিত বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের পর বছর এরা অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। আইন অনুযায়ী, ১০৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পরও অন্তত ২৫টি ভাড়া বাড়িতে আছে। এগুলোকে অবশ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। আছে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ। অনেকটা নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই চালানো হচ্ছে। কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যরা দৈনিক অফিস করেন। উপাচার্যসহ বিভিন্ন লাভজনক পদ দখল করে আছেন তারা। এর আড়ালে মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা গ্রহণসহ দামি গাড়ি, বাসার কর্মচারী সবই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে মেটানো হয়। 


বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মূহূর্তে ৪৫ লাখের মতো উচ্চশিক্ষার্থী আছেন। যেহেতু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম, তাই প্রয়োজনের তাগিদেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু যেভাবে এগুলো চলছে তাতে শিক্ষার মান অর্জিত হচ্ছে না। শুধু সনদধারী গ্র্যাজুয়েট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে চাকরি বাজারে এরা উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে দেশের শ্রমবাজারে বিদেশিরা জায়গা করে নিচ্ছেন। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে মোট শিক্ষক ছিলেন ১৫২৭৭ জন, যাদের মধ্যে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করেন ৩৫৬৫ জন। বাকি ১১৭১২ জন পূর্ণকালীন। অর্থাৎ, খণ্ডকালীন শিক্ষক ২৩ শতাংশ আর পূর্ণকালীন ৭৭ শতাংশ। স্বনির্ধারিত পদ্ধতিতে সংস্থাটি এই তথ্য নিয়ে থাকে। সে অনুযায়ী পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে ৮৪১ জন অধ্যাপক, সহযোগী ৮৪৫, সহকারী ২৯৫৪ আর প্রভাষক ৬৯১০ জন। আর খণ্ডকালীন আছেন অধ্যাপক ১০৩২ জন, সহযোগী ৫০৯ জন, ৬৪৬ জন সহকারী অধ্যাপক এবং ১২৬৪ জন প্রভাষক। অন্য ধরনের শিক্ষক আছেন ২৭৬ জন। 


আইন অনুযায়ী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক প্রতি তিনজনের মধ্যে ১ জন নেওয়ার কথা। উল্লিখিত সামস্টিক হিসাবে শিক্ষকের চিত্র ঠিক আছে বলে দেখা যাচ্ছে। মূলত নর্থ সাউথ, ঢাকার আহসানউল্লাহ, আইইউবিএটি কিংবা ইস্টওয়েস্ট, এআইইউবি, ব্র্যাক বা ইউল্যাব কিংবা ইনডিপেনডেন্ট, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ও সোনারগাঁওয়ের মতো আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি শিক্ষক আছেন। ওইসব প্রতিষ্ঠানে নামকরা শিক্ষক এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করায় সামস্টিক সংখ্যায় আইনের দৃষ্টি পূর্ণকালীন আর খণ্ডকালীন সংখ্যার অনুপাত যথাযথ মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অবস্থা খুবই করুণ। বরিশালের গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি শুধু প্রভাষক দিয়ে চলছে। জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকই নেই। টাইমস ইউনিভার্সিটি চলছে মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে। সবমিলে ৯৬টির মধ্যে ৪৮টিতেই অধ্যাপক মাত্র ১ জন থেকে সর্বোচ্চ ৫ জন। একইসংখ্যক সহযোগী অধ্যাপক নিয়ে চলছে ৪৩টি। ৪টিতে কোনো অধ্যাপকই নেই আর সহযোগী অধ্যাপক ছাড়া চলছিল ১১টি।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ লেখাপড়া ও গবেষণা। কিন্তু ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য কর্তৃপক্ষ এদিকটি উপেক্ষা করছেন। সে কারণে প্রয়োজনের চেয়ে স্থায়ী শিক্ষক অনেক কম। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খণ্ডকালীন হিসাবে শিক্ষক ভাড়ার রেওয়াজ পুরোনো। এ কারণে একদিকে খুব কম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠেছে। এতে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বাইরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, সেখানে সংকট আরও বেশি। মফস্বল এলাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকের ঘাটতি আছে।


তাই ওই সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাড়া করা শিক্ষকও মেলে না। ইউজিসির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮-১০ হাজার টাকা বেতনে শিক্ষক নিয়োগের ঘটনাও আছে। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছরে ইউজিসি অন্তত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৯টিতে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও বেশকিছু।ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) মো. ওমর ফারুখ যুগান্তরকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিই তার নিজের শত্রু। যেসব প্রতিষ্ঠান সনদ ব্যবসা করে, শিক্ষক নিয়োগ করে না, অবৈধ প্রোগ্রাম বা ক্যাম্পাস পরিচালনা করে সেগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। লেখাপড়া করতে চায় এমন শিক্ষার্থীরা সেখানে ভর্তি হয় না। 

 















এসএম



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল