মাইদুল ইসলাম:
কবিতা বইয়ের পাতায় দেখেই অভ্যস্ত আমরা। সাধারণত বইয়ের বাহিরে কবিতা কল্পনা করতে দেখা যায়না। কিন্তু ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ দেখা গেছে শরীয়তপুরে। যেখানে তৈরি করা হয়েছে অন্যরকম এক দেয়াল। যে দেয়াল মানুষকে কবিতা পড়তে উদ্বুদ্ধ করে, আকৃষ্ট করে কবিতার মায়ায়। যার নাম দেয়া হয়েছে কাব্যমায়া। দেয়ালিকা, দেয়াল পত্রিকা পূর্বে দেখা গেলেও কবিতার দেয়াল, 'কাব্যমায়া' দেশে এই প্রথম এধরনের অনন্য উদ্যোগ।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গেলেই দেখা মিলবে এই কবিতার দেয়াল কাব্যমায়া। যেখানে স্থান পেয়েছে বাংলার খ্যাতিমান কবিদের পাশাপাশি তরুণদের লেখা নিয়ে সবধরনের ১৩৬টি কবিতা। দেশে প্রথম কবিতার দেয়াল করার এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই।
১৫ ফুট চওড়া আর ১২ ফুট উচ্চতার দেয়ালটি এক মাস ধরে তৈরি করা হয়েছে। দেওয়ালের ওপর সাদা টাইলসে খোদাই করে লেখা হয়েছে কবিতাগুলো। দেয়ালটি শুক্রবার (২৬ আগস্ট) সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর থেকে সারাদিনই কাব্যমায়ার সামনে শিশু, তরুণ-তরুণী ও বৃদ্ধদেরও পড়তে দেখা যায় কবিতাগুলো। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যায় তরুণ-তরুণীদের।
এই জায়গা একসময় পরিতক্ত পড়ে ছিলো, ফেলা হতো ময়লা-আবর্জনা সেখানেই মনদীপ ঘরাই গড়ে তুলেছেন কবিতার দেয়াল। যেখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত, শামসুর রহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, হেলাল হাফিজ, আহমদ ছফা, নির্মলেন্দু গুণ, অতুল প্রসাদ সেন প্রমুখ বরেণ্য কবি থেকে শুরু করে এ প্রজন্মের জনপ্রিয় কবি টোকন ঠাকুর, আখতারুজ্জামান আজাদ, সাদাত হোসাইন, মারজুক রাসেল, রোমেন রায়হান প্রমুখদের কবিতা স্থান পেয়েছে।
শরীয়তপুর জেলার মাটিতে যেহেতু গড়ে উঠেছে, তাই এ মাটির কবিদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অতুল প্রসাদ সেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি মফিজুল ইসলাম (কবি ভাই), শ্যামসুন্দর দেবনাথসহ শরীয়তপুরের ১৩ জন কবির কবিতা গাঁথা আছে এ দেওয়ালে।
কাব্যমায়ার উদ্যোক্তা শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই বলেন, আমরা চিন্তা করে দেখেছি পরিষদের এই জায়গাটায় মানুষের আনাগোনা বাড়ুক, সেটা অনেক ভাবেই বাড়ানো যায় কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে একটা বক্তব্য থাকা জরুরি আর সেজন্যই দেয়ালটা তৈরি করা। কবিতা শুধুই বইয়ের মলাটে কিংবা খাতার পাতায় আটকে থাকার প্রথা ভাঙতে এই উদ্যোগ। কবিতার প্রতি, মননশীল কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর দায়বদ্ধতা থেকেই এধরণের উদ্যোগটির স্বপ্ন দেখেছিলাম। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমার স্বপ্নটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা অনেক বেশি প্রশান্তির।
তিনি বলেন, প্রতিদিন এখানে প্রচুর মানুষ আসেন ছবি তুলেন, কবিতা পড়েন এতে লাভ হচ্ছে কিন্তু কবিতার।
এক মাস ধরে এই দেয়ালের জন্য কবিতা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান তিনি। সব বিষয়ের ওপর কবিতা আছে দেয়ালে, তবে পরিচিত কবিদের অপরিচিত কবিতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যাতে মানুষ পড়ার আগ্রহ পায়।
মনদীপ ঘরাই জানান, সারাদিনই কাব্যমায়ার সামনে মানুষ থাকে। তরুনরা বেশি আগ্রহী। তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক বলেও জানান তিনি।
সরকারি কর্মকর্তার পাশাপাশি তিনি নিজে একজন কবি হলেও কাব্যমায়ায় রাখেননি তার কোনো কবিতা। তার মতে, এ অনুপস্থিতিই হবে গাঢ় উপস্থিতি।
এর আগে যশোরের অভয়নগরে ভূমি অফিসে দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক থিমপার্ক স্বাধীনতা অঙ্গণ নির্মাণ করেছিলেন মনদীপ ঘরাই। গত বছর তার হাত দিয়েই তার বাংলোর দেওয়ালে গড়ে তোলেন দেশের প্রথম উন্মুক্ত দেওয়াল পাঠাগার ‘একুশ’।
এমআই