স্পোর্টস ডেস্ক:
ইনিংসের শুরুতে কুসাল মেন্ডিসকে ‘লাইফ’ দেন মুশফিকুর রহীম। মেন্ডিস তার ইনিংসে জীবন পান একে একে চারবার। শেষ পর্যন্ত ৬০ রানের ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। ভুল এবং বোকামি শেষে পরাজিত হয়ে ছিটকে পড়লো সাকিব আল হাসানের দল। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিলো বাংলাদেশ। গতকাল দুবাইয়ে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ২ উইকেটে হেরে যায় টাইগাররা। টসে হেরে আগে ব্যাটিং শেষে বড় পুঁজিই পেয়েছিল টিম টাইগার্স। ব্যাটারদের একাট্টা নৈপুণ্যে ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ১৮৩/৭-এ। কিন্তু জবাবে ৪ বল বাকি রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ক্যাচ মিস, রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, রানআউটের সুযোগ মিস এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ৪টি নো ও ৬টি ওয়াইড বলের কারণে এদিন ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনা মাঠে মারা যায়।
গতকাল দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে তাসকিন আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লঙ্কান ওপেনার কুসাল মেন্ডিস।
বিজ্ঞাপন
তা ধরতে পারেননি মুশফিক। এরপর তার উইকেট নেন শেখ মেহেদী। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার জানান ওটা ছিল ‘নো’ বল। ইবাদতের এক ডেলিভারিতে মেন্ডিসের গ্লাভস ছুঁয়ে বল মুশফিকের হাতে জমা পড়লেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। এরপর আরও একবার লাইফ পান মেন্ডিস। তিনি ক্রিজ ছেড়ে বের হলেও তাকে রানআউট করতে ব্যর্থ হন সাব্বির রহমান। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৬০ রানে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দেন মেন্ডিস। ৩৭ বলের ইনিংসে চারটি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকান লঙ্কান ওপেনার। এদিন অভিষেকে শুরুতে বল হাতে আলো ছড়ান ইবাদত হোসেন। নিজের প্রথম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এ টাইগার পেসার। কিন্তু স্পেলে তিন উইকেট পেলেও শেষটায় তার নাম উঠে যায় অভিষেকে খরুচে বোলারের তালিকায়। চার ওভারে ৫১ রান দেন ইবাদত।
গতকাল একাদশে তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। বাদ পড়েন নাঈম শেখ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও এনামুল হক বিজয়। সুযোগ আসে সাব্বির রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইবাদত হোসেনের। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে পরাজিত হয় শ্রীলঙ্কা। আর বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে আফগানদের কাছে হার দেখে ৭ উইকেটে।
এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাটিং শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ১৮৩/৭-এ। তিন বছর পর জাতীয় দলের একাদশে ফেরেন সাব্বির রহমান। সবশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। তবে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি সাব্বির।
যদিও তার শুরুটা ছিল দারুণ। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে প্রথম বলেই স্কুপ করে চার হাঁকান তিনি। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। আসিথা ফার্নান্দোকে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন কুশল মেন্ডিসের হাতে। ৬ বলে সাব্বির করেন ৫ রান। দলীয় ১৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে ঝড়ো ইনিংস খেলেন মিরাজ। নিজের উইকেট হারানোর আগে ২৬ বলে ৩৮ রান করেন তিনি। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হয়ে যান মিরাজ। পাওয়ার প্লেতে ৫৫ রান তোলে বাংলাদেশ। ৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৫/১। পাওয়ার প্লেতে চলতি এশিয়া কাপে আগে ব্যাট করা কোনো দলের যা সর্বোচ্চ।
ব্যাট হাতে আরও একবার ব্যর্থ মুশফিকুর রহীম। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার গতকাল করেন ৫ বলে ৪ রান। প্রথম ম্যাচে মুশফিকুর রহীম করেছিলেন ১ রান। দলীয় ৬৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। চামিকা করুণারত্নের করা অষ্টম ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক। তবে ১০ ওভার শেষে ৮৫/৩ সংগ্রহ নিয়ে বড় সংগ্রহের পথেই ছিল টাইগাররা। কিন্তু এরপরই সাকিবের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
মহেশ থিকশানাকে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান সাকিব আল হাসান। ২২ বলে ৩ চারে ২৪ রান করেন সাকিব। সাজঘরে ফেরার আগে টি-টোয়েন্টিতে ৬ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই অলরাউন্ডার। এতে অনন্য এক তালিকায় নাম ওঠে এ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে (ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে) ৪০০ উইকেট ও ৬০০০ রান পূর্ণ হলো তার। এমন কৃতিত্ব দেখানো মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার তিনি। সাকিবের আগে এমন কৃতিত্ব রয়েছে শুধু ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভোর। দলীয় ৮৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় লাল সবুজের দল। এরপর কার্যকরী জুটি গড়ে তোলেন সহঅধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব ও অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৩তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে পরপর দুই বলে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দলীয় সংগ্রহটা ১০০ পার করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ১৫তম ওভারে হাসারাঙ্গার ওপর চড়াও হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। একটি করে চার-ছয়ে ১৪ রান তুলে নেন রিয়াদ। পরের ওভারে আক্রমণে আসা আসিথা ফার্নান্দোর দ্বিতীয় বলে ছয় ও তৃতীয় বলে চার মারেন আফিফ। ১৫ রান আসে ওই ওভার থেকে।
তবে অল্প ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন দুজনেই। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে আফিফকে সাজঘরে ফেরান দিলশান মাদুশঙ্ক। ২২ বলের ইনিংসে আফিফ করেন ৩৯ রান। ৪টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি। হাসারাঙ্গার করা পরের ওভারে আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। ২২ বলে একটি করে চার-ছয়ে ২৭ রানে করেন তিনি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩৭ বলে ৫৭ রান যোগ করেন এ দুজন। ১৮তম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৯/৬-এ।
শেষ দিকে ১৫ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারালেও রানের চাকা থেমে থাকেনি বাংলাদেশের। ১৯ ওভারের প্রথম বলে আউট হন শেখ মেহেদী (১)। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আসিথাকে ছক্কা হাঁকান তাসকিন আহমেদ। এতে আরব আমিরাতের মাটিতে নিজেদের টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ স্কোর পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ তিন বলে ১০ রান নিয়ে দলের সংগ্রহটাকে ১৮৩তে নিয়ে যান মোসাদ্দেক। বিধ্বংসী ইনিংসে ৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তাসকিনের ব্যাট থেকে আসে ৬ বলে ১১*। শেষ ৫ ওভারে ৬০ রান যোগ হয় বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে।