মাহমুদুল হাসান, কুমিল্লা:
গ্রাহকদের সঞ্চিত প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড কুমিল্লা জাফরগঞ্জ শাখার এক কর্মকর্তা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জীবনের শেষ সম্বল হিসেবে টাকা জমা রাখা গ্রাহকরা।
অভিযুক্ত ঐ কর্মকর্তা আবদুস সাত্তারের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার মুগসাইর গ্রামে। কথিত ব্যাংক কুমিল্লা জাফরগঞ্জ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো দেবিদ্বার উপজেলার এগারগ্রাম বাজার থেকে। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা , গ্রাহকের কাছ থেকে ফিক্সড ডিপোজিট ও ডিপিএস নামে টাকা গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দুই বছর আগে এগারগ্রাম বাজারে প্রতিষ্ঠিত হওয়া শাখাটি বন্ধ রয়েছে তিনদিন যাবৎ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুরুজ মিয়ার ছেলে কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার পরিবার নিয়ে পলাতক রয়েছেন। বিধবা খোসনেয়ারা একমাত্র সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করছেন কোন রকম। শেষ সম্বল জমানো দুই লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন ঐ কর্মকর্তার খপ্পরে পড়ে। টাকা হারিয়ে এখন খোসনেয়ারা পাগল প্রায়। কান্না চোখে বলেন, ‘আমার ছেলেকে নিয়ে কি করবো, কোথায় যাবো, আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুগসাইর গ্রামের তাজুল ইসলাম। পেনশনের দুই লাখ টাকা শেষ সম্বল হিসেবে জমা রেখেছিলেন প্রতারিত প্রতিষ্ঠানটিতে। পেনশনের জমানো টাকা হারিয়ে তিনি এখন বাকরুদ্ধ। বলেন, ‘বিশ্বাস করে টাকা জমা রেখেছিলাম। এভাবে প্রতারিত হবো বুঝতে পারিনি।’
এগারগ্রাম বাজারে ফার্মেসী ব্যবসা করেন আবদুল কাদির। তিনি দুই নামে দশ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। অসহায় দৃষ্টিতে তিনি বলেন, ‘গ্রামের সহজ-সরল মানুষ বিশ্বাস করে টাকা জমা রেখেছে। আমিও রেখেছি, এখন মানুষকে নিঃস্ব করে সে পালিয়ে গেছে।’
সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিল তিল করে জমানো সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন মুগসাইর এগারগ্রামের শারমিন আক্তার। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, সাইনবোর্ডে ব্যাংক লেখা দেখে টাকা জমা রেখেছিলাম। এটি যে ধোকা বুঝিনি।’
এমনি করে এক থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রেখে প্রতারিত হয়েছেন প্রায় ৬০ জন গ্রাহক। এই বিষয়ে অভিযুক্ত আবদুস সাত্তারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক উন নবী তালুকদার বলেন, ঘটনাটি জানা ছিল না। প্রতারিত গ্রাহকরা যদি আমাদের সহায়তা চান, আমরা সব ধরনের সহায়তা করবো।
উল্লেখ্য, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেড কথিত ব্যাংকটি জাফরগঞ্জ শাখা হিসেবে কুমিল্লা জাফরগঞ্জে পরিচালিত হতো। পরবর্তিতে দেবিদ্বার এগারগ্রাম বাজারে সেটি স্থানান্তরিত হয়ে জাফরগঞ্জ শাখা হিসেবেই পরিচালিত হতে থাকে। কিন্তু গ্রাহকদের রসিদে এগারগ্রাম বাজার শাখা হিসেবে সিল মারা হতো।
এমআই