এস কে দোয়েল :
অবাক হলেও সত্য যে, ঘরে ঘরে স্ত্রীদের দ্বারা পুরুষ নির্যাতিত হলেও সে নির্যাতনের কোন অভিযোগ উঠে আসে না। যার কারণে পুরুষ নির্যাতনের কোন খবর সংবাদ মাধ্যমেও আসে না। দেখাও যায় না।
পুরুষ শাসিত সমাজে আলোচনা সব সময় উঠে আসে নারী নির্যাতনের বিষয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিদিন নারী নির্যাতনের খবর ফলাওভাবে প্রকাশিত হলেও সেভাবে প্রকাশ পায় না পুরুষ নির্যাতনের কথা। কোন না পুরুষ যেকোনভাবে শারীরিক,মানসিক, দৈহিক-আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপমান, অপদস্ত হয়ে নির্যাতিত হচ্ছেন। ঘরের বাইরে এ ধরনের নির্যাতন অহরহ ঘটলেও তা অগোচরেই থেকে যায়। যার কারণে নির্যাতিত পুরুষ নীরব যন্ত্রণায় চোখের জলে বুকের বন্যা হলেও বর্ষার প্লাবন দেখা যায় না। সে নিভৃত কান্না দেখা যায় না। শোনা যায় না। তা নিয়ে কোন লিখিত অভিযোগও হয় না।
অথচ হওয়া উচিত ছিল।
আইনের চোখে সবার সমান হলেও নারীর জন্য সুরক্ষা, নির্যাতন দমন আইন থাকলেও পুরুষের জন্য নেই। অথচ পুরুষ শাসিত সমাজ। বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনে ৫টি ট্রাইব্যুনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য নেই একটিও। এ কারণে আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী। একটা বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
অথচ সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে অনুযায়ী রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বাধ্য। একই সাথে,২৬ (২)অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাষ্ট্র সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্য কোন আইন প্রণয়ন করবে না এবং অনুরূপ কোন আইন প্রণীত হলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তাছাড়া,২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী বলে ঘোষনা করেছে।
সাংবাদিকরা তাহলে কী করবে? তারা কি পুরুষ নির্যাতনের অভিযোগ ছাড়াই নির্যাতনের খবর করতে পারবেন? যেমন আইন চায় প্রমাণ,তেমনি সাংবাদিকরাও চান প্রমাণ স্বরূপ অভিযোগ। সে অভিযোগের ভিত্তিতে তারা রিপোর্ট করে থাকেন। যেহেতু সাংবাদিকদের রিপোর্টের ক্ষেত্রে কোন নিজস্ব মতামতের স্থান নেই,তারা সকল অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদ তৈরি করে থাকেন।
গত বছর (২০২০) ৫ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মেনস রাইটস ফাউন্ডশন। সে মানববন্ধনে মেনস রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম বলেছিলেন, ঘরে বাইরে সব জায়গায় পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পুরুষ নির্যাতন দমন আইন না থাকায় পুরুষরা আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না। সেজন্য অনেক পুরুষ নিরবে কাঁদছে। অনেকে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এ খবরগুলো সাংবাদিকরা গুরুত্বের সাথে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।