সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল ডেস্ক: ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা তুলে নিয়েছিলেন এই সময়ের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের। দেশের শেয়ারবাজারে হিরো নামে বেশি পরিচিত এই বিনিয়োগকারী ও তাঁর স্বজন-সহযোগীরা গত বছরের নভেম্বরে মাত্র ১৫ দিনের কারসাজিতে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেনে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা তুলে নেন। নিজেদের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে এই মুনাফা তুলে নেন তাঁরা। আর কারসাজির জন্য হিরো তাঁর নিজের, বাবার, স্ত্রীর ও বোনের এবং বন্ধুবান্ধব ও অনুসারীদের মোট ১৪টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) ব্যবহার করেন। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক অনুসন্ধানে কারসাজির এমন তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে। এ ঘটনার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি হিরোসহ অন্য সবাইকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। জরিমানার অর্থ আদায়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে আদেশও জারি করা হয়েছে। ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন ও বিএসইসির জরিমানার আদেশ থেকে জানা যায়, গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিরো তাঁর স্বজন, সহযোগী ও অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় ব্যাপক কারসাজি করেন। ওই ১৫ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ৭ টাকা বা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাতে হিরো, তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ এবং তাঁর সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার্সসহ একাধিক অনুসারী ও সহযোগীর ১৪টি বিও হিসাবে প্রায় ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা হয়। একই সময়ে ১৪টি বিও হিসাবে অনাদায়ি (আনরিয়ালাইজড) মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দামে বড় ধরনের উত্থানের সময় ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিল ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে আবুল খায়ের হিরো, তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতবর, বোন কনিকা আফরোজ; তাঁর সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্ডেলস্টোন ইনভেস্টমেন্টস পার্টনার্স; বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান; শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস, ফরচুন শুজ ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস; আবু নাসের দুলাল, খোরশেদ আলম ও সানোয়ার খান। এর মধ্যে আবুল খায়ের হিরো, আবুল কালাম মাতবর, খোরশেদ আলমের একাধিক বিও হিসাব ব্যবহার করা হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, জেনেক্স ইনফোসিস, ফরচুন শুজ ও সোনালী পেপারের নামে শেয়ার কেনাবেচার কাজটি তদারকি করেছিলেন হিরো। ডিএসই ও বিএসইসির নথিপত্রে দেখা যায়, উল্লিখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিও হিসাব থেকে ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের ১৪ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার শেয়ার কেনা হয়। এর মধ্য থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়া হয়। ব্যাংক কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারে গড়ে দুই টাকা করে মুনাফা হয়েছে বিও হিসাবগুলোতে। তখন বাজারে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের যত লেনদেন হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে করেছে। এসব লেনদেনকে ‘সিরিজ লেনদেন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএসইসি ও ডিএসই। এ ধরনের লেনদেন সিকিউরিটিজ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কারসাজির ঘটনায় জরিমানাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারও বিরুদ্ধে কারসাজির তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে আইন মেনে তা নিষ্পত্তি করা হয়। বাজারের শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এ ধরনের ব্যবস্থা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। সিরিজ লেনদেনে দাম বাড়ল গত বছরের ১৮ নভেম্বর শেয়ারবাজারে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেন শুরু হয় ১৩ টাকা ৪০ পয়সায়। তবে বেলা ১টা ৪৩ মিনিট থেকে ১টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে কোম্পানিটির ২ কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার শেয়ার কেনাবেচা করেন হিরো ও তাঁর স্বজন-সহযোগীরা। হিরোদের মাত্র ১০ মিনিটের এমন লেনদেনের কারণে ওই দিন ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১ টাকা ৩০ পয়সা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে ওই দিন শেয়ারবাজারে ওয়ান ব্যাংকের ২ কোটি ৬১ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ লেনদেনই করেছেন হিরো ও তাঁর স্বজন-সহযোগীরা। একইভাবে ২২ নভেম্বর বাজারে ওয়ান ব্যাংকের ৮ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ারের লেনদেন হয়। এর মধ্যে হিরো ও তাঁর লোকজন মিলে লেনদেন করেন সাড়ে ৩ কোটি শেয়ার। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর ১০টা ১ মিনিট থেকে ১০টা ৬ মিনিটের মধ্যে হিরো ও তাঁর স্বজন-সহযোগীরা নিজেদের মধ্যে বিপুল শেয়ারের হাতবদল করেন। এর মাত্র ১৪ মিনিট পর ১০টা ২০ মিনিট থেকে ১০টা ২৮ মিনিটের মধ্যেও তাঁরা আবার বিপুল শেয়ারের হাতবদল করেন নিজেদের মধ্যে। এতে ওই দিন বাজারে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ (বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা) বা ১ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৭০ পয়সা। তবে দিনের শেষে দাম কিছুটা কমে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২২ নভেম্বর হিরো তাঁর বাবা আবুল কালাম মাতবরের বিও হিসাব থেকে মাত্র এক মিনিটে ১৩টি লেনদেনের (হাওলা) মাধ্যমে ১০ লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল করেন। একই দিন হিরো তাঁর নিজের দুটি বিও হিসাবেও ৪ লাখের বেশি শেয়ার কেনাবেচা করেন। অর্থাৎ নিজের এক বিও হিসাব থেকে অন্য হিসাবে এসব শেয়ার কিনে নেন। মূলত বাজারে শেয়ারের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করতেই নিজেদের মধ্যে শেয়ার হাতবদল করা হয়ে থাকে। ২৮ নভেম্বর নিজের বোনের নামে থাকা বিও হিসাব থেকে ২৫টি লেনদেনের মাধ্যমে ৫ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি শেয়ার নিজের বিও হিসাবে কিনে নেন। আর ৩০ নভেম্বর ১০টি হাওলার মাধ্যমে স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের বিও হিসাব থেকে নিজের বিও হিসাবে ৯৯ লাখ শেয়ার হাতবদল করেন হিরো। এভাবে নিজেদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল করে কৃত্রিম চাহিদা তৈরির মাধ্যমে মাত্র ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের ৬০ শতাংশ দাম বাড়ান তিনি। জরিমানা ও কারসাজির বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল খায়ের হিরো বলেন, আমি এখনো এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পাইনি। এই শেয়ার কিনে আমরা বড় ধরনের লোকসান করেছি। তবে বিএসইসির শুনানীতে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের খারাপ বা কারসাজির উদ্দেশ্য ছাড়াই আমরা আমাদের ট্রেডারকে শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ দিয়ে থাকি। সব সময় আমরা আইন মেনে চলার চেষ্টা করি। আমার লেনদেনে বাজারের সার্বিক লেনদেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।’ এসএম
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল