নিজস্ব প্রতিনিধি: সমুদ্রে মাছ ধরার নৌযানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যাবে নৌযানের সার্বিক তথ্য। কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে এবং সীমারেখা পেরিয়ে নৌযানগুলো মাছ ধরছে কি না তাও নির্ণয় করা যাবে। এমনকি কোনো নৌযান দুর্ঘটনায় পড়লে তার অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত উদ্ধার করা যাবে জেলেদের। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার নৌযানে বসানো হবে এসব প্রযুক্তি। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এসব ডিভাইসের কার্যকারিতা।
বর্তমানে সারাদেশে ২৫০টি বাণিজ্যিক মৎস্য ট্রলার রয়েছে। আর আর্টিসেনাল ও ভার্টিসেনাল যান্ত্রিক নৌযান রয়েছে ৩০ হাজার। সমুদ্রের ২০-৩০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে মাছ ধরা নৌযানকে বলা হয় আর্টিসেনাল। আর্টিসেনাল নৌযানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড় যান্ত্রিক নৌযানের নাম ভার্টিসেনাল। এ ধরনের নৌযানে করে সমুদ্রের আরও গভীরে গিয়ে মাছ ধরেন জেলেরা।
এসব নৌযানে তিন ধরনের প্রযুক্তি বসানো হবে। এগুলো হলো গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন (জিএসএম), অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এআইএস) ও ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম (ভিএমএস)।
মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আওতায় বসবে এসব প্রযুক্তি। প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে সাড়ে আট হাজার আর্টিসেনাল নৌযানে জিএসএম, দেড় হাজার ভার্টিসেনাল নৌযানে এআইএস ও পাঁচটি বাণিজ্যিক মৎস্য ট্রলারে ভিএমএস বসানো হবে।
এসব ডিভাইস পেতে আগে রেজিস্ট্রেশন করেছে এমন ১০ হাজার পাঁচটি নৌযানকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে এগুলো। এর বাইরে বাকিদের সমুদ্রে মাছ ধরতে হলে এসব ডিভাইস কিনে ব্যবহার করতে হবে। সামুদ্রিক মৎস্য আইনের বিধিতে সব নৌযানে এ ধরনের ডিভাইস সংযুক্ত করার বিধান থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মূলত নৌযানগুলো নজরদারিতে রাখা হবে। মাছ ধরার ক্ষেত্রে সরকারের যে বিধিবিধান সেটি তারা মানছে কি না হবে তা দেখা। মেরিন প্রোটেকটিভ এলাকা আছে যেখানে মাছ ধরায় বিধিনিষেধ থাকে, সেখানে কেউ মাছ ধরছে কি না তা নির্ণয় করা হবে। বর্তমানে এসব এলাকায় মাছ ধরলেও তা ধরা কঠিন। কিন্তু প্রযুক্তি বসানোর পর জেলেরা এসব কার্যক্রম করলে সেই তথ্য চলে আসবে। ফলে সেই নৌযানকে মেসেজ পাঠিয়ে করা হবে সতর্ক।
এরপরও কোনো নৌযান সতর্কবার্তা না মানলে তথ্য-প্রমাণ সংশ্লিষ্টদের কাছে থাকবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব সময় সচল রাখতে হবে ডিভাইসগুলো। এগুলো বন্ধ রাখলে বা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করলে সেন্টারে অ্যালার্ট চলে যাবে। তখন নৌযান মালিকদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা। এছাড়া সমুদ্রে যে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, তখন যাতে কেউ মাছ ধরতে যেতে না পারে সেটি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে এসব ডিভাইস দিয়ে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, আর্টিসেনাল নৌযানে জিএসএম প্রযুক্তি বসানো হবে। প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে সাড়ে আট হাজার নৌযানে ইনস্টল করা হবে এ ডিভাইস। এগুলো দিয়ে তারা কোথায় কোথায় মাছ ধরছে, যানের স্পিড কত সেটি ট্র্যাক করা যাবে। এর মাধ্যমে জেলেদের সঙ্গে আদান-প্রদান করা যাবে বার্তা। জিএসএম ডিভাইসের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাক করার সুযোগ থাকবে। ডিভাইসে থাকবে ছোট একটি ব্যাটারি, যেখান থেকে পাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। জেলেরা যদি রেঞ্জের বাইরে চলে যায় সেটির ডাটাও থাকবে।
অন্যদিকে দেড় হাজার ভার্টিসেনাল নৌযানে বিনামূল্যে সেট করা হবে এআইএস প্রযুক্তি। ফলে তাদের অবস্থানসহ সার্বিক বিষয়ে নজরদারি করা যাবে।
আর মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে যাতায়াত করা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারে বসানো হবে ভিএমএস প্রযুক্তি। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের এমন পাঁচটি ট্রলারের ভিএমএস প্রযুক্তি বসানো হবে। এগুলো ঠিকভাবে কাজ করলে পরবর্তীসময়ে সব নৌযানে ব্যবহারের জন্য বলা হবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মূলত পাওয়া যাবে সব তথ্য। তবে অন্য কেউ এসব তথ্য পাবে না।
এজন্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় সার্ভেয়ার চেকপোস্টে জয়েন্ট মনিটরিং সেন্টার করা হয়েছে। যেসব নৌযানে এই সিস্টেম বসানো হবে সেগুলোর সঙ্গে কানেক্ট করা হবে মনিটরিং সেন্টারকে। তখন সব নৌযান আর সীমানা ম্যাপের নিচের দিকে দেখাবে। সেখানে স্ক্রিনে প্রদর্শিত নৌযানে ক্লিক করলে দেখা যাবে যাবতীয় তথ্য। ২৪ ঘণ্টায় কত মাছ ধরেছে সেটিও দেখা যাবে। মূলত যারা মাছ ধরবে তারা একটি রিপোর্ট সেখানে এন্ট্রি করবে। এই সিস্টেমের মধ্যে থাকবে ই-রিপোর্টিং। এর মাধ্যমে কোন নৌযান কত পরিমাণ মাছ ধরেছে সেটির তথ্য এন্ট্রি করবে। ভিএমএস প্রযুক্তিটির মাধ্যমে নৌযানের তথ্য প্রথমে যাবে স্যাটেলাইটে। সেখান থেকে যাবে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে। এসব তথ্য মৎস্য বিভাগের সার্ভার থেকে মনিটর করা যাবে।
সময় জার্নাল/এলআর