ডা. অরুন্ধতী মজুমদার :
বিস্ময়কর একটা প্রজাতির কৌতুককর একটা অংশ হলো বাংলাদেশের বাঙ্গালী জাতি।
এরা লকডাউন ঘোষনা হবে শুনে দ্রুত গাট্টি-বোঁচকা বেঁধে-ছেদে তৈরী ছিল।
ভাবটা এমন যে, লকডাউন তো নয়, যেন তাদেরকে লক-আপে পুরতে আসছে সরকার!
আগের রাতেই তাই সবাই জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে যে যা বাহন পেয়েছে, তাতে চেপে পগার পার!
যেন ঈদের আগে প্রি-ঈদ ভ্যাকেশন!
কিছুটা অকস্মাৎ, কিন্ত কাঙ্ক্ষিত!
কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!
কয়েকটা কথা আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি।
যারা এই লেখা পড়বেন, তারা কষ্ট করে আপনজনদের জানিয়ে দিতে পারেনঃ-
এই সময়টিতে আপনার আশেপাশে বা এলাকায় পরিচিত/স্বল্পপরিচিত/অপরিচিত যত মানুষের মৃত্যু ঘটছে, শুধুমাত্র দুর্ঘটনায় মৃত্যুগুলো ছাড়া আর সবগুলোই কিন্তু কোভিড-মৃত্যু।
কিভাবে?
যারা এখন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, পালমোনারী এম্বোলিজম, হঠাৎ রেনাল ফেইলিউর বা যেকোনও রকমের শরীরের ভেতরের কোনো রোগে মারা যাচ্ছেন, তাদের মৃত্যুগুলোকেও উন্নত দেশগুলোতে কোভিড-ডেথ হিসাবে ধরা হচ্ছে। এবং এটাই উচিৎ।
কারন, দেখা যাচ্ছে, ভাইরাসটা অত্যধিক ইতর প্রকৃতির এবং সে শরীরে আগে থেকে বিদ্যমান ছিল এমন সকল রোগকে এক্সট্রিম পর্যায়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে, যেখান থেকে আর ফিরে আসা বেশীরভাগেরই হয়ে উঠছে না। বা চেষ্টা করার সময়টাও মিলছে না।
এমনকি, অনেকের শরীরে অনেক ভয়ানক রোগের সম্ভাবনা নীরবে থেকে থাকে, যেগুলো অনেকের ক্ষেত্রেই আমৃত্যু সম্ভাবনা হিসেবে রয়ে যায়, রোগ তৈরী করে না। সেইগুলোকে উস্কে দিচ্ছে করোনা ভাইরাস।
ক্যান্সার হঠাৎ দেখা দেয়া এবং দ্রুত শেষ দিকের স্টেজে পৌঁছে যাওয়া এখন এক বছর ধরে একটা বড় বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছে মেডিক্যাল গবেষকদের।
কিশোর-যুবক, যাদের নিজেদের ইম্যুনিটির উপরে খুব ভরসা, তাদের বলি, -
অনেকেই নিজে মরতে ভয় পায় না।
কিন্তু আপনজনের মৃত্যুকে সবাই ভয় পায়।
আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে বা উদাসীনতার জন্য, বা খামখেয়ালিপনায়, "ধুর,কী আর হবে" ভেবে এই ভাইরাস নিজের বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন, আপনার বাসায় থাকা শিশু-তরুন-বৃদ্ধ যে কেউ ভাইরাসটির আভ্যন্তরীণ ধ্বংসলীলার অকস্মাৎ শিকার হয়ে মারা যেতে পারেন।
এর নিমিত্ত হবেন আপনি।
এই খুনের দায় আপনার।
গত ৮ই এপ্রিল ৭৪ জন, ৯ তারিখ ৭৮ জন, ১০ তারিখ ৮৩ জন এভাবে গতকাল ৯৪ জন বাংলাদেশে কোভিড-ডেথ রেকর্ডেড হয়েছে।
মৃত্যুর মিছিলে এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছেই।
প্রতিদিন আগের দিনের রেকর্ড ভেঙ্গে যাচ্ছে!
মিউজিক্যাল চেয়ার যেন!
কখন কার পালা আসে, কার বেলা মিউজিক বন্ধ হয়ে যায়, জানা নেই যেহেতু..
প্রতিরোধই সর্বোত্তম।
সুতরাং, আপনার চেনাজানা যারা মারা যাচ্ছেন, করোনার টেস্ট নেগেটিভ এসে থাকলেও, মৃত্যুটি কিন্তু ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্টলি করোনাঘটিত।
তাই, আমার এলাকায় করোনায় কেউ মারা যায় নি-- এই কথাটা বলবার আগে দুইবার না, দশবার ভাববেন।
আর, কোভিড টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসা তেমন গুরুত্ব এখন আর বহন করে না। কারন, ভাইরাসটির অজস্রবার মিউটেশন হয়ে যাওয়াতে বর্তমানে বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাওয়া এক বা একাধিক স্ট্রেইন সরাসরি ফুসফুসে আক্রমন করছে। এই স্ট্রেইনগুলো তাই ন্যাজোফ্যারিংক্স বা ন্যাজাল মিউকোসায় খুব একটা অবস্থান না করায়, অর্থাৎ এই জায়গাগুলোতে ভাইরাল লোড কম থাকায় কালেক্টেড স্যাম্পলে আসবে না, সেটাই স্বাভাবিক।
তাই টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে।
সেই সময়ে সে হয়তো লাংসের টিস্যু ধ্বংস করছে।
দক্ষিন আফ্রিকান এই স্ট্রেইনটি খুব বেশী জ্বর, কাশি, হাঁচি তৈরীও করছে না। করলেও খুব অল্প সময়ের জন্য। সে ডাইরেক্ট অ্যাটাক করছে লাংসে।
পরে প্রকাশিত হচ্ছে নিউমোনিক ফিচার নিয়ে।
এখন আপনি ভ্যাক্সিনেটেড হলেও জেনে রাখুন, ভ্যাকসিনটি করোনা ভাইরাসের কিছু স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর। আপনার ভাগ্য ভাল হলে আপনার সাক্ষাৎ হয়তো সেই ভাইরাল স্ট্রেইনের সাথে হতে পারে, যার বিরুদ্ধে এই ভ্যাক্সিন ডিজাইনড।
সেক্ষেত্রে আপনার আক্রান্ত না হওয়া আশা করা যেতে পারে।
কিন্তু, সাউথ আফ্রিকান ভ্যারাইটি কিংবা U.K. ভ্যারাইটির সাথে মোলাকাত হলে ভাইরাস তো আর আপনাকে ডেকে বলবে না -
-" ভাই, আমি কিন্তু আফ্রিকান। মাস্কটা নাকের উপরে উঠান!"
সে তার কাজ করবে।
আপনি আপনার কাজ করুন।
গ্যাদারিং এভয়েড করুন।
বাজার-হাট, দোকানপাট যেখানেই যান, পারফেক্টলি মাস্ক পরুন।
উপরে সৃষ্টিকর্তা আর মর্ত্যে মাস্ক ছাড়া আপনার-আমার রক্ষাকর্তা আর কেউ নেই।
|
|
ও, হ্যাঁ।
শুভ নববর্ষ!❤