সর্বশেষ সংবাদ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার , এ তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর। এটি কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি সমর্থিত নয় :টিআইবি
সময় জার্নাল ডেস্ক : বাংলাদেশের ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’র আওতায় নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে-বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ হলে, দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে রোববার প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনে কম্পিউটারের তথ্যের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপনে পুরো প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে। এরফলে সাংবাদিকতার পথ আরও রুদ্ধ হলো। কারণ গণমাধ্যম এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোন বিবেচনায় এ তালিকা করা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। এ সিদ্ধান্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার। এটি নিরাপত্তার পরিবর্তে নিবর্তনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের আরও একটি উদাহরণ। তবে এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৫ ধারা অনুসারে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসাবে ঘোষণা করা হলো। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড, সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডাটা সেন্টার (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়), সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইমিগ্রেশন (বাংলাদেশ পুলিশ), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ, রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। আইনের ১৫ ধারায় উল্লেখ আছে, আইনটির উদ্দেশ্য পূরণে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কোনো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য পরিকাঠামোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসাবে ঘোষণা করতে পারবে। আইনটির ১৭ (১) ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে (ক) বেআইনি প্রবেশ করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইনের ধারায় বলা আছে, (খ) বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন বা করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই অপরাধ কেউ দ্বিতীয়বার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড হইবেন। আইনের ১৮ ধারায় উল্লেখ আছে, বেআইনিভাবে প্রবেশে কেউ সহায়তা করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আইনটির ১৬ (৩) ধারায় উল্লেখ আছে, মহাপরিচালকের নিকট যদি বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে তাহার অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তির কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর জন্য হুমকিস্বরূপ বা ক্ষতিকর, তাহা হইলে তিনি স্ব-প্রণোদিতভাবে বা কাহারও নিকট হইতে অভিযোগ প্রাপ্ত হইয়া উহার অনুসন্ধান করিতে পারিবেন। সাধারণত সাংবাদিকরা সোর্সের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করেন। ফলে প্রজ্ঞাপনটির কারণে সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদিকে মঙ্গলবার টিআইবি এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে-এ তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ ও বিভ্রান্তিকর। এটি কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি সমর্থিত নয়। এরফলে বেশকিছু মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আমূল সংস্কারে যৌক্তিকতা আরও একবার প্রমাণিত। বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোন বিবেচনায় এই তালিকা করা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। কারণ জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলা হলেও-প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী এই তালিকার বাইরে রয়ে গেছে। একইভাবে বাদ পড়েছে জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ, অডিট বিভাগ, স্বাস্থ্য খাত, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি। চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ছাড়া বাকি কোনো ব্যাংকই এই তালিকায় স্থান পায়নি। আরও অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়। ফলে এর মাধ্যমে নিশ্চিত করে বলা যায়, তালিকাটি প্রশ্নবিদ্ধ ও অবিবেচনাপ্রসূত। না হলে ধরে নিতে হবে, নির্ধারিত এই কটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার নেটওয়ার্কের পরিবর্তে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো বলা হয়েছে। এতে নতুন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আরও একটি দুর্বলতা সামনে চলে এসেছে। । এসএম
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল