বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

কাশিয়ানীতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ে অনিয়ম

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২২
কাশিয়ানীতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ে অনিয়ম

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কাশিয়ানীতে ১৬৯টি বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়। ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব মেশিন ক্রয় করা হলেও কাজে আসেনি। তিন বছর পরও অচল হয়ে পড়ে আছে ১৬৯টি বিদ্যালয়েরই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। ফলে গচ্চা গেছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া এসব মেশিন ক্রয় নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উপজেলার ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনা করা হয়। এসব মেশিন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল্লাহ আল বাকি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহার নির্দিষ্ট করে দেওয়া কোম্পানি থেকে ক্রয় করা হয়।

 ‘এইচআর অটোমেশন’ নামে একটি কোম্পানি ‘ইনোভয়েস’ ব্র্যান্ডের ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সরবরাহ করে। বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে মেশিন কেনার টাকা কোম্পানিকে পরিশোধ করেন শিক্ষকরা। প্রতিটি মেশিন ২২ হাজার টাকা মূল্যে কেনা হয়। যদিও বাজারে এ মেশিনের দাম ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা। জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশে নির্ধারিত কোম্পানি থেকে মেশিন কেনায় বাজার যাচাইয়ের সুযোগ পাননি শিক্ষকরা।

এভাবে বড় ধরনের দুর্নীতি করে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে একটি সিন্ডিকেট। অথচ মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের পছন্দমতো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করে স্কুলে স্থাপন করবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ উপেক্ষা করে কেনা এসব মেশিন কিছুসংখ্যক বিদ্যালয়ে চালু হলেও কয়েক দিনের মধ্যে তা অকেজো হয়ে পড়ে।

 তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মেশিনগুলো সচল হয়নি। উপজেলার অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে কোথাও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সচল পাওয়া যায়নি। কাশিয়ানী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল্লাহ আল বাকি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা স্যার এইচআর অটোমেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। তাদের নির্দেশে স্কুল উন্নয়নের স্লিপ ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে ২২ হাজার টাকা কোম্পানিকে পরিশোধ করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেশিনটি চালু হয়নি। অকেজো হয়ে পড়ে আছে।’ কাশিয়ানী উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমি ১৫টি বিদ্যালয় ঘুরে দেখেছি, যার সবগুলো মেশিন অকেজো।

 মেশিনগুলো অত্যন্ত নিুমানের। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ মোতাবেক আমরা শিক্ষকরা মেশিন ক্রয় করেছিলাম। আমাদের সেখানে কোনো কিছু বলার ছিল না।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচআর অটোমেশনের স্বত্বাধিকারী মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এখানে কোম্পানির গাফিলতি ও কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। মেশিনগুলো মানসম্পন্ন। মেশিন স্থাপনের পর ইন্টারনেট সংযোগ লাগে। এ জন্য ৩ হাজার টাকা রিচার্জ, সার্ভার এবং সার্ভিস চার্জ রয়েছে। শিক্ষকরা এ টাকা না দেওয়ায় ডিজিটাল হাজিরা মেশিনগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’
 
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র বালা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি ক্রয় কমিটিতে ছিলাম না। তৎকালীন এডিসি ও ডিপিও স্যারের সমন্বয়ে ক্রয় কমিটি করা হয়। ওই কমিটির মাধ্যমে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করা হয়। এখানে আমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই।’ তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কুমার সাহা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুল্লাহ আল বাকির নির্দেশ জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫টি কোম্পানি মেশিন সরবরাহ করে। কাশিয়ানীতে এইচআর অটোমেশন কোম্পানি ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সরবরাহ করে। কোনো কোম্পানির সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। গোপালগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি যোগদানের পূর্বে। তাই ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারব না। তবে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সময় জার্না/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল