শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট: সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে জেলায় প্রধান অর্থকারী ফসল হলো ভুট্টা। এ বছর জেলায় ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলা শুরু হবে। ফলে এখন কৃষকরা তাদের ভুট্টা ক্ষেতে গাছের মাথা ও পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চর অঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজন ভুট্টা গাছের পাতা বিক্রি করে কিছুদিন জীবন-জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।
প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু তা এখন আর লাগছে না। নিম্ন আয়ের লোকজন বিনামূল্যে পাতা ছিঁড়ে ও মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখন মাঠে কাজ না থাকায় দিনমজুর শ্রেণির লোকজন পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছে। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গো-খাদ্য হিসেবে ভূট্টা’র পাতা কিনছেন। এতে একদিকে নিম্ন আয়ের লোকজনের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গবাদিপশু খামারিরা পশুর খাদ্য পাচ্ছে ও কৃষকদের ভুট্টা উৎপাদনে খরচও কমে যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধাহাট, কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্ল্যারহাট, ভোটমারীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে।
উপজেলার ভোটমারী এলাকার দিনমজুর কোনা বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিদিন সকালে ডাউয়াবাড়ীর চরে গিয়ে ভুট্টা পাতা ছিঁড়ে ভোটমারী বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২৫০থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে। পাতার জন্য ক্ষেত মালিকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। কয়েকদিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করবো।
ভোটমারী বাজার ঘুড়ে দেখা যায় সাদেকুল নামে এক দিনমজুরের ছেলে যার এখন খেলাধুলা করার কথা কিন্তু তার বাবা মা সংসার চালাতে হিমসিম খাওয়ায় বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করছে। বাজারে ভূট্টা পাতা বিক্রি করতে আসা সজীব বলেন, আমি ভোটমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পরি, অভাবের সংসার বাবা মাসহ সারাদিন ভূট্টা গাছের পাতা ছিড়ে স্কুল বন্ধ থাকায় বিকালে ভূট্টা পাতা নিয়ে বাজারে এসে সেটি বিক্রি করি।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, ভুট্টা তোলার ১৫/২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং ভালো হয়। প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতে পাতা ও মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু এখন তা লাগছে না। অনেকেই পাতা ও গাছের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের লোকজন তাদের জীবিকা চলার পথ পেয়েছে।
ডাউয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েদ জানান, এ সময়টা কাজ না থাকায় চর অঞ্চলের নিম্ন আয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- ভুট্টার পাতা ও ভুট্টা গাছের মাথা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছু লোকজন কয়েক দিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান পায়। অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশু খামারিরা কম দামে তাদের গো-খাদ্য কিনতে পারছে।
সময় জার্নাল/এমআই