ইসাহাক আলী, নাটোর প্রতিনিধি:
এক সময়ের মঞ্চ মাতানো অভিনয় শিল্পী ললিতা অবহেলার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন করার খবরে তার সার্বিক দায়িত্ব নিলেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। বুধবার বিকালে তিনি তার কার্যালয়ে ললিতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার খোঁজ নেন তিনি। পরে তিনি তার সার্বিক দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাকে নগদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি ভূমিহীন হওয়ায় তাকে আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর প্রদানেরও আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। এ সময় আবেগে আল্পুত ললিতা আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, দেশের ঐতিহ্যের ধারক যাত্রা নাটকে যারা অভিনয় করতেন তাদের অবহেলা কখনোই কাম্য নয়। বিষয়টি তার নজরে আসায় তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। কোন শিল্পীই যেন সমাজের অবহেলার পাত্র না হন সে ব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকার বা প্রশাসন নয় সমাজের বিত্তবানদেরও নাগরিক দায়িত্ব থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তার দায়িত্বকালিন সময়ে জেলার কোন শিল্পীই যেন এমন অনাদরে দিন না কাটান, সে ব্যাপারে তিনি খোঁজ খবর রাখবেন। তার অগোচরে এমন কেউ থাকলে তা সংবাদকর্মি ও সংশ্লিষ্টদের তাকে অবহিত করার আহবান জানান।
ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন অভিনয় শিল্পী ললিতা রানী। পিতা খোকন ও মাতা উমা রানীর ঘর আলোকিত করে তিনি এসেছিলেন পৃথিবীতে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ললিতার বয়স ছিল ১৩ বছর। জীবন যুদ্ধে লড়ে যাওয়া ললিতার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তার ঠাঁই হয়েছিল ফুপুর সংসারে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ফুপুর মৃত্যুর পরে সংগ্রামী এই অভিনেত্রীকে ভিটাছাড়া হতে হয়। অভাব অনটনে জর্জরিত ললিতার কপালে জোটেনি লেখাপড়ার সুযোগ।
এখন রোদে পুড়ে শরীরের রং তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে। কিছুটা জলেও ঝুলে গেছে তার গাল দুটি, কুঁচকে গেছে শরীরের চামড়া। মাথায় চুল গুলো অনেকটা শরতের মেঘের মত সাদা।
একমাত্র সন্তানটি বিয়ে করে আলাদা জীবন যাপন করে। এক সময় বেসরকারী ক্লিনিকে পরিচ্ছন্ন কর্মির কাজ করলেও বয়সের ভারে তাও ঠিকমতো করতে না পারায় চলে গেছে আয়ের মাধ্যমটিও। ফলে অন্যের দ্বার হাত পেতেই সময় কাটাতে হতো তাকে। যার অভিনয়ে এক সময়ে দুই হাতে করতালির ফোঁয়ারা ফুটাকতো মানুষ সেই মানুষগুলোই তার হাতে সামান্য অন্য বা সাহায্য তুলে দিতে এগিয়ে আসেনি।
ললিতা জানান, বয়স্ক ভাতার জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম কাউন্সিলর বলেছেন বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বয়স আমার হয় নাই। অসচ্ছল সংস্কৃতিক শিল্পী হিসেবেও আবেদন করেছিলাম, তারও কোন আশ্বাস পাইনি।
ললিতার জীবনের সেই করুণ পরিণতি নাঁড়া দিয়েছে জেলা প্রশাসককে। কিছু আর্থিক অনুদানের সাথে সম্পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহণের আশ্বাসটি পরিপূর্ণতা পেলে ললিতারা আর সমাজের বোঝা হবে না। তাই ললিতাদের মতো অন্যদেরও খুজেঁ বের করে একটু হলেও খেয়েপড়ে বাঁচার মতো নিশ্চয়তাই হতে পারে প্রকৃতভাবে শিল্পীর প্রকৃত মূল্যায়ন এমনটাই মনে করেন সংস্কৃতিবোদ্ধারা।
সময় জার্নাল/এলআর