সময় জার্নাল ডেস্ক:
গরিবের আমিষ বলে খ্যাত ডাল এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। প্রতি কেজি মোটা দানার মসুর ডাল এখন ১১০ টাকায় উঠে গেছে। মাঝারি দানা ১২০ টাকা এবং ছোট দানার মসুর ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে চিনি নেই। কারণ প্রতিদিনি চিনির চাহিদা যেখানে ৫ হাজার টন, সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ থেকে ২ হাজার টন।
আর যাওবা সরবরাহ করা হচ্ছে তাও ডেমারেজ দিয়ে আনতে হচ্ছে। এক ট্রাক চিনি আনতে মিল গেটে ১০ দিন বসে থাকতে হয়। এতে ট্রাক ভাড়া ডেমারেজ দিতে হয়। ডেমারেজ দিয়ে কেউ এখন আর চিনি আনছে না। ফলে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, সরকার খোলা প্রতি কেজি চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১০২ টাকা এবং প্যাকেট নির্ধারণ করেছে ১০৫ টাকা। কিন্তু এই দামে কোথাও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া বেশি দামে চিনি এনে বেশি দামে বিক্রি করতে গেলে জরিমানা গুনতে হয়। আর এ কারণেই পাইকাররা মিল থেকে চিনি আনতে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। তারা কর্মচারীদের বসিয়ে রাখছেন। সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করলে তখন হয়তো পাইকারি বাজারে চিনি আনা যাবে।
চিনির দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডালের দামও বেড়ে গেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। এ কারণে মাছ, গোশতসহ অন্যান্য আমিষের চাহিদা মেটাতে পারছে না। প্রায় সব ধরনের মানুষ আমিষের চাহিদা মিটিয়ে থাকে ডাল দিয়ে। অথচ এই ডালের দামই এখন গরিবের নাগালের বাইরে। খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে বড়, মাঝারি ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে যথাক্রমে ৮, ৯ ও ৮ শতাংশ বেড়েছে। আর গত এক সপ্তাহেই প্রতি কেজি বড় ও মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। ছোট দানার ডালে বেড়েছে ১০ টাকা। টিসিবির হিসাব মতে, বাজারে এখন প্রতি কেজি বড় দানার মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং মাঝারি দানার মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দানার মসুর ডালের দাম রাখা হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকা। বাজারে খোলা মসুর ডালের পাশাপাশি সুপারশপ বা বড় দোকানে প্যাকেটজাত ডাল পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে ডলার সঙ্কটের কারণে ডাল আমদানিও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে বেশি আমদানি কমেছে ডাল ও মটরের। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে সোয়া লাখ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছিল, সেখানে এবার একই সময়ে হয়েছে ৮৬ হাজার টন। অর্থাৎ তিন মাসে মসুর ডাল আমদানি কমেছে ৩১ শতাংশ। চাহিদানুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় দেশে বছরে ১৩-১৪ লাখ টন ডাল আমদানি করতে হয়। আর তিন মাসে মটরের আমদানি কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।
ডাল, চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে নির্ধারিত আয়সহ নিম্ন আয়ের মানুষ। এমনিতেই এর আগে কয়েক দফা সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। আয় দিয়ে তারা আর ব্যয় কুলাতে পারছেন না। ব্যক্তি পর্যায়ে পণ্যের রেশনিং করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে তিনটি পণ্য কিনতে হবে, কিন্তু হাতে থাকা অর্থ দিয়ে বড়জোর একটি পণ্য কিনতে পারছেন। বাকি দুটি পণ্য আর কিনতে পারছেন না।
সময় জার্নাল/এলআর