মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন ৭২ প্রকল্প,চলছে উৎসবের আমেজ

সোমবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন ৭২ প্রকল্প,চলছে উৎসবের আমেজ

গোলাম আজম খান, কক্সবাজার:

পর্যটন রাজধানীর পূর্ণ বাস্তবায়নে কয়েকটি মেগা প্রকল্প এখন দৃশ্যমান। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় কি পেয়েছে কক্সবাজারবাসী আরো কি পেতে যাচ্ছে। এইসব বিষয় নিয়ে কাল (৭ ডিসেম্বর)  বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি শেষ। প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মী ও সমর্থকের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে রাতদিন কাজ করছেন।

এর আগে সকালে সেতুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং তিনদিনের নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ আমন্ত্রিত ৪১টি দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৬টি দেশ অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ উপলক্ষে ইনানী পাটোয়ারটেক সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে সাগরের জলরাশির ওপর দীর্ঘ একটি সেতু তৈরি হয়েছে। 

‘পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ’ হিসেবে স্বীকৃতি থাকলেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে ছিলো কক্সবাজার। তবে টানা একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করে উন্নয়নের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে কক্সবাজার। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের শুরুতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

অক্টোবর নাগাদ শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ।

টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, খুরুশকুলে পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাটবাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে।

তাছাড়া আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠে জনসভা থেকে ১০ টি মেগা প্রকল্পসহ ৭২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
  
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কক্সবাজার পৌরসভা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কক্সবাজার এলজিডি, গণপূর্তসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবায়িত প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ, লিংকরোড় থেকে হলিডে মোড় সড়ক এবং মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ডে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে জনগণ। 

৮৫৮.০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রামুতে বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কক্সবাজারে ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম উন্নয়ন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কুতুবদিয়ায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ও বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ এবং কলাতলী উদ্যান নির্মাণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতায় জোয়ারিনালা শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন নির্মাণ, আব্দুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, উখিায়ায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক বহির্বিভাগ ভবন নির্মাণ, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালযয়ের আওতায় জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ হাড়িয়াখালী হতে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কক্সবাজার টেকনাফস্থ শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮ এর সি-ডাইক অংশের বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ণ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন রামু উপজেলাধীন কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাকঁখালী নদীর উপর ৩৯৯.০০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রিজ, নবনির্মিত ৬ ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, রামু উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ, উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, বিমান বন্দর হতে নুনিয়ারছড়া সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ, শহীদ সরণী সড়ক এবং ৩টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ, সদর থানা হতে খুররুকুল পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ, সুগন্ধা পয়েন্ট হতে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক এবং ৪টি সংযোগ সড়ক আরসিসিকরণ এবং কক্সবাজার প্রধান সড়ক হতে খরুশকুল রোড হয়ে তারাবনিয়ারছড়া পর্যন্ত আরসিসি সড়ক নির্মাণ।

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে গণপূর্ত বিভাগের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, ১৩৫.৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের মধ্যে ১০টি শেষ হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, কক্সবাজারকে একটি উন্নত ও পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে। 

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফরকে কেন্দ্র করে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছি, সেটা বাস্তবায়ন করব। তাতে পুলিশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘অপ্রীতিকর কিছু হবে না, আমরা আশাবাদি। অনুষ্ঠান সফল করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে কক্সবাজার। এতে পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাভিত্তিক প্রচারণা চলছে। অনুষ্ঠানস্থ থেকে শুরু করে পুরো শহর সজ্জিত করা হচ্ছে। নিরলস কাজ করছে দলীয় নেতাকর্মীরা। নেত্রীর আগমন ঘিরে সবাই উজ্জীবিত।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরকে ঘিরে পুরো শহর সাজানো হচ্ছে নানা আঙ্গিকে। তাকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড-পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক। সৈকত সড়কে বসানো হয়েছে বড় বিলর্বোড। ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার, ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, সড়কে লাইটিং ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে সমানতালে। প্রধান সড়কের অসম্পূর্ণ কাজও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।

বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার সড়কে তোরণ নির্মাণের ধুম পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক তোরণ তৈরি হয়েছে। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে জনসভায় বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে। জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলাতলী সৈকত সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ব্যানার-বিলবোর্ড টাঙিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার জেলা পরিষদ, হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। দলীয় নেতাদের ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়ার মতো।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে এসে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দলীয় জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তখন কক্সবাজারের উন্নয়নে যেসব প্রতিশ্রুতি (উন্নয়ন প্রকল্প) ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন তার সব কটি দৃশ্যমান। সরকারের এই মহাউন্নয়ন এবারের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।

ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ৭ ডিসেম্বরের দলীয় জনসভা থেকে কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন কিছু ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কক্সবাজারকে যা দিয়েছেন, অতীতে কোনো সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।


এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল