স্পোর্টস ডেস্ক:
সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করলো পর্তুগাল। পর্তুগালের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন বিশ্বকাপে আজকের ম্যাচে অভিষেক হওয়া গন্সালো রামোস। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ১৯৫৮ সালে করা পেলের রেকর্ডের পর রামোসই হলেন সবচেয়ে কম বয়সী হ্যাকট্রিকধারী।
বাকি তিনটি গোল করেছেন পেপে, রাফায়েল গেরেরা ও রাফায়েল লিয়াও।
লুসাইল স্টেডিয়ামে গ্রুপ ‘এইচ’ বিজয়ী পর্তুগাল আজ মুখোমুখি হয়েছিল গ্রুপ ‘জি’ রানার্সআপ সুইজারল্যান্ডের। কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের দু’টি করে জিতে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল দুই দল। ফ্রান্স-পোল্যান্ড ম্যাচের পর এটি ছিল চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় অল-ইউরোপিয়ান নকআউট ম্যাচ।
আজকের ম্যাচের সবচেয়ে বড় চমক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে শুরুর একাদশে রাখেননি পর্তুগিজদের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস। তার পরিবর্তে আজ দলে জায়গা পেয়েছেন বেনফিকার ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার গন্সালো রামোস। এছাড়া রোনালদোর পরিবর্তে আজ দলের নেতৃত্বের ভার সান্তোস তুলে দিয়েছেন দলটির ৩৮ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক পেপের কাঁধে।
ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিট খুব শ্লথগতিতে খেলা চললেও, সময়ের সাথে বাড়তে থাকে খেলার উত্তাপও। সুইজারল্যান্ডের রক্ষণভাগে ক্ষুরধার আক্রমণ চালানো শুরু করে পর্তুগাল। অতঃপর ম্যাচের ১৭ মিনিটের মাথায় গন্সালো রামোসের পা থেকেই আসে আজকের ম্যাচের প্রথম গোল। থ্রো বল থেকে বল পেয়েছিলেন হোয়াও ফেলিক্স। তিনি বল বাড়িয়ে দেন গন্সালো রামোসের দিকে।
ফেলিক্সের বাড়ানো পাস রিসিভ করে গোলবার লক্ষ্য করে শট নেন গন্সালো। ঠিক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেও রিফ্লেক্স দেখিয়ে বল আটকাতে পারেননি ইয়ান সোমার। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো খেলোয়াড়ের পরিবর্তে খেলতে নামায় যেকোনো খেলোয়াড়েরই নিজের ওপর অত্যন্ত চাপ অনুভব করার কথা। অথচ পূর্বসূরির সামনেই তিনি গোল করলেন, সমালোচকদের চুপ করিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে গন্সালো রামোসের সময় লাগল মাত্র ১৭ মিনিট। অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি তিনি।
৩৩ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আজকের ম্যাচে পর্তুগিজদের অধিনায়ক পেপে। কর্নার থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজের উড়িয়ে মারা শটে লাফিয়ে উঠে বলে মাথা ঠেকিয়ে হেডে দারুণ এক গোল করেন তিনি। এই গোলে দারুণ একটি রেকর্ডও গড়লেন এই ডিফেন্ডার। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বয়সী ফুটবলার (৩৯ বছর ৩৮৩ দিন) হিসেবে নকআউট পর্বে গোল করার কীর্তি গড়লেন তিনি।
৭৫ মিনিটের মাথায় পর্তুগিজ দলে আসে পরিবর্তন। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় গন্সালো রামোস ও হোয়াও ফেলিক্স এবং ওটাভিয়ার পরিবর্তে খেলতে নামেন রিকার্ডো হোর্টা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ভিটিনহা। রোনালদো মাঠে নামার সাথেসাথেই করতালিমুখর হয়ে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম।
ঠিক তখনই একটি ফ্রি কিক পেয়েছিল পর্তুগাল। মাঠে নেমেই সেই ফ্রি কিকটি নিতে আসেন রোনালদো। কিন্তু দর্শকদের হতাশ করেন তিনি। তার নেয়া শটে বারের ওপর দিয়ে চলে যায় বলটি। তিন মিনিট পরেই অবশ্য গোল করেছিলেন রোনালদো। কিন্তু রেফারি বাঁশি বাজিয়ে পতাকা তুলে অফসাইডের সংকেত দিয়ে নিরাশ করেন তাকে।
৮৭ মিনিট সময়ে ব্রুনো ফার্নান্দেজের পরিবর্তে খেলতে নামেন রাফায়েল লিয়াও। খেলার অতিরিক্ত সময়ে রাফায়েল গেরেরার অ্যাসিস্টে গোল করে সুইজারল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন তিনি।
আজ দারুণভাবে পর্তুগিজ কোচ সান্তোসের ভরসার প্রতিদান দিলেন গন্সালো রামোস ও পেপে। কাতার বিশ্বকাপ নকআউট পর্বেই পেয়ে গেল নতুন তারকা। পর্তুগিজ ঝড়ে বিধ্বস্ত সুইজারল্যান্ডের বিশ্বকাপ যাত্রা এখানেই শেষ হলো।
আর ২০০৬ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল পর্তুগাল।
সময় জার্নাল/এলআর