মো. আলাউদ্দিন: সবুজ আচরণ বলতে প্রধানত বুঝানো হয় কোন প্রকার হিংসা, বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব, রাগের বশবর্তী না হয়ে স্বাভাবিক সুন্দর কাঙ্ক্ষিত আচরণ করা। সবুজ আচরণের মূল ভিত্তি হলো doing good and avoiding bad অর্থাৎ ভালো জিনিস দেখে আচরণ করুন, খারাপ বিষয়গুলো পরিহার করুন।
মানুষ স্বভাবগতভাবে সব সময় এগ্রেসিভ আচরণ করতে বেশি পছন্দ করে। শিক্ষা পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবার পদ, পদবি, পজিশন এবং প্রেক্ষিত মানুষের আগ্রেসিভ আচরণকে বন্ধুসুলভ আচরণ এ রুপান্তর করে। বাংলাদেশের শিক্ষা, পরিবেশ, পরিবার, পজিশন কোনটাই বাংলাদেশী মানুষের আচরণকে পরিপূর্ণরূপে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করতে পারে না। তাতে সমাজের অধিকাংশ মানুষের মাঝে প্রত্যাশিত আচার-আচরণ কথাবার্তা পাওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত বলা যায়, অধিকাংশ ধর্মীয় গ্রন্থে ভালো আচরণ করার জন্য মানুষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ১৪টি সূরায় আচরণ সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় সেটা বাস্তবে দেখা যায় না।
ফলশ্রুতিতে জেনারেশনের টু জেনারেশন একই ধরনের আচরণ চলে আসছে। আমাদের বর্তমান শিশুদের জন্য যারা পিতা- মাতা ভাই-বোন চাচা-মামা দাদা-দাদী নানা-নানি এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন আছেন প্রত্যেককেই সবুজ আচরণে উদ্বুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
শিশুদের সামনে বা তাদের সাথে মারমুখী, রাগান্বিত অভিযোগ বা short-tempered কথাবার্তা বললে শিশুদের মনে দারুণ প্রভাব পড়ে। তাদের আত্মা মন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। প্রকাশ করতে পারে না কিন্তু বড়দের এই আচরণ তাদের মনে ছাপা অক্ষরের মত হয়ে যায়। তাতে তার পারিবারিক সামাজিক স্কুল এবং পারিপার্শ্বিক আচরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
শিশুটির শারীরিক মানসিক এবং শিক্ষাগত বিকাশে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হয়। পিতা মাতা আত্মীয়-স্বজনের অবাঞ্চিত অথবা যুদ্ধংদেহী আচরণের জন্য শিশুটি ভবিষ্যৎ ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে আসে। স্বজন, পিতা-মাতা এবং হিতাকাঙ্খিদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তা শিশুর ভবিষ্যৎ অপরাধ গন্ডীর মধ্যে বন্দী হয়ে যায়। তাতে পরিবার গোষ্ঠী সমাজ সর্বোপরি রাষ্ট্র বঞ্চিত হয়। শিশুটি পরবর্তী জীবনে সামাজিক যোগাযোগ পারিবারিক যোগাযোগ, ব্যক্তিগত ,স্বামী-স্ত্রী হিসেবে যোগাযোগ ক্ষেত্রে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। এই শিশুটি ভবিষ্যতে পরিবার ও সমাজের একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এক্ষেত্রে প্রত্যেক পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন ভাই-বোন অন্যান্য স্বজনদের উচিত শিশুটির সাথে সুন্দর সাবলীল আচার আচরণ করা যে আচরণের কোন হিংসা থাকবে না, সমালোচনা থাকবে না, দোষারোপ থাকবে না, নিন্দা থাকবে না, পরচর্চা থাকবে না।
শিশুটির চারপাশের পরিবেশ যারা তাঁকে জানেন বা শুনে বা দেখে প্রত্যেককেই নির্মল এবং সরল মনের মানুষ হিসেবে মনে করবে। সবুজ আচরণ মাত্র শিশুর জন্য প্রয়োজন তা নয়, পরিবারে যারা বসবাস করেন সমাজে যারা বসবাস করেন প্রত্যেকের জন্য সবুজ আচরণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পরিবেশ ক্ষেত্রে, আবহাওয়ার ক্ষেত্রে ,বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সবুজ বিষয়টি যেমন ব্যবহার করছি আমাদের মানবিক আচরণের ক্ষেত্রেও সবুজ আচরণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। যে ঘরে বা পরিবারে সবুজ আচরণ প্রাধান্য পাবে সেখানে ঝগড়া থাকবে না, বিবাদ থাকবে না, ভুল বুজাবুজি থাকবে না সেখানে শিশু-কিশোর যুবক-যুবতী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ঐক্যতানে বসবাস করবে। সারা ঘর ভরা শান্তি-স্বস্তি বিরাজ করবে।
সবুজ আচরণ একটি দর্শন ।এই দর্শনকে শেকড়ের মত মতো গ্রহণ করতে হবে অর্থাৎ আপনাকে ভাবতে হবে আপনি যে কথাটি বলবেন যে কাজটি করবেন তাতে কারো কোনো ক্ষতি,কোনো প্রতিকূলতা যেন না হয়। আপনার দ্বারা ঘরের, ঘরের বাইরে, সমাজে , রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি যেন কোনোভাবেই না হয় এমন ভাবে ইতিবাচক আচরণ করার মানসিকতা সৃষ্টি করাই হবে সবুজ আচরণের মূল ভিত্তি। সবুজ আচরণের ফল সুদূর প্রসারী। এটার ফল আপনি ভোগ করবেন, সমাজ ভোগ করবে। এক সময় সারা বাংলাদেশের মানুষ এই ফল ভোগ করবে এবং সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা, আইন নিয়ম কানুন প্রত্যেকটা জিনিস সুন্দর অর্ডারে পরিচালিত হবে।
সবুজ আচরণ একটা আবশ্যিক বিষয় বিশেষ করে পরিবারের শিশুদের জন্য। সবুজ আচরণ যদি আমরা পরিবারে নিশ্চিত করতে পারি শিশুদের বিকাশ সহজতর হবে। একথা মনে রাখতে হবে একটা শিশু কথা কাজে আচার-আচরণে সামাজিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া এবং সামাজিক নানা রকম দক্ষতা অর্জনের জন্য পরিবারের মানুষের নিকট হতে স্বস্তি মূলক আচরণ প্রত্যাশা করে। এই আচরণের পরিবেশটাই হচ্ছে সবুজ আচরণ পরিবেশ।
আমার অধিকাংশ ফেসবুক বন্ধু-বান্ধবী গ্রামে বসবাস করে। অনেকের লেখাপড়াও খুবই কম আপনার একটু ভাবুন সবুজ আচরণটা পরিবারে কিভাবে চালু করা যায়। মনে রাখবেন এই সবুজ আচরণ হবে একটি শিশুকে অবুজ অবস্থা থেকে বোঝমান একটা মানুষের অবস্থায় পৌঁছানোর সেতু। প্রথম আপনি শুরু করুন যেমনটা আমি শুরু করেছি ,চেষ্টা করি যেন আমার দ্বারা কোন পরিবেশে নিন্দা অথবা সমালোচনা মূলক আচরণ বা কথা না হয়। আশাকরি আপনারাও পারবেন কারণ এটা আমাদের প্রত্যেকের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজন। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই মহামারী হাত থেকে হেফাজত করেন এবং সুস্থ রাখে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও সমাজকর্মী।
সময় জার্নাল/আরইউ