রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে

শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২
স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে

সময় জার্নাল ডেস্ক:
 
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। বিজয়ের আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।

আবদুল হামিদ বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা দেশের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। জাতি তাঁদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা।

তিনি বলেন, এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার যে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে তা পূর্ণতা পায়। তারই নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

‘আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি’ এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সদ্যস্বাধীন দেশে ফিরে জাতির পিতা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। ডাক দিয়েছিলেন কৃষি বিপ্লবের। আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন দুর্নীতি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরী, লুটেরাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তার পরিবারের আপনজনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফলে উন্নয়নের সেই অভিযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। রুদ্ধ হয় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথ। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের।

তিনি বলেন, দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রূপকল্প ২০৪১’। সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী কর্মসূচির ফলে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের অনন্য মাইলফলক পদ্মা সেতু ইতোমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী একদিনে আরও একশ সেতু উদ্বোধন করেছেন। এর ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বেড়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি আশা করি, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজও খুব শিগগিরই শেষ হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে সূচিত হবে নতুন নতুন অধ্যায়। এছাড়া পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

তিনি উল্লেখ করেন, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি দেখা দিচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় সরকার সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদানসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এ সংকটও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব ইনশাল্লাহ। এজন্য সবার সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতভিন্নতা যাতে উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত না করে সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’, জাতির পিতা ঘোষিত এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে দেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাসী। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ-লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী।

আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা তাদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। জাতি তাদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। আমি আশা করি, বিশ্বমন্দা ও অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রবাসী ভাইবোনরা রেমিট্যান্স প্রেরণ অব্যাহত রাখবেন এবং দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখবেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

আবদুল হামিদ বলেন, আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ - মহান বিজয় দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল