স্পোর্টস ডেস্ক:
চরম আর্থিক দুর্দশায় দিন কাটছে আর্জেন্টাইনদের। মূল্যস্ফীতির কারণে সবকিছুর দাম হু হু করে বাড়ছে। খরচ মেটাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না যেন। এরপরও ফুটবলের প্রতি আবেদন এতটুকু কমেনি আর্জেন্টাইনদের। ৮ হাজার ২০০ মাইল পাড়ি দিয়ে কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি আর্জেন্টাইন। ধারদেনা করে হলেও টুর্নামেন্টের পুরোটা সময় মেসিদের পাশে রয়েছেন তারা। এদের অনেকের বাড়ি ফেরার টাকাও নেই। তবুও তারা খুশি। মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখলে সব দুঃখ ভুলে যাবেন আর্জেন্টাইনরা।
আজ ফাইনালে ৮৯ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লুসাইল স্টেডিয়ামের বেশিরভাগই হবেন আর্জেন্টিনার সমর্থক।
জরিপে দেখা গেছে, গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ফ্রান্সের সাপোর্টার। স্টেডিয়ামের বাইরে ফ্যান জোনেও আর্জেন্টাইনদের আধিপত্য। পুরো স্টেডিয়াম এলাকা মাতিয়ে রেখেছেন তারা। কাছে গেলে মনে হবে, এটা লুসাইল নয়, বুয়েন্স আয়ার্সের কোনো এলাকা। এই উন্মাদনা দেখে বোঝার উপায় নেই আর্জেন্টিনায় কী চলছে।
জি-২০ ভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় খুবই সংকটকাল যাচ্ছে আর্জেন্টিনার। গত এক দশক ধরে মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কের মধ্যে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির বর্তমান হার ৮৮%। ক্যাশ রিজার্ভের অভাবে আর্জেন্টাইন ‘পেসো’ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ৩০% মূল্য হারিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নতুন বছরে মুদ্রাস্ফীতি ১০০% ছাড়াতে পারে। তারপরও কাতারে তাদের উপস্থিতি অবাক করে দেওয়ার মতো। অথচ ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের মতো দেশ, যেখানে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশেরও কম, তারাও গণহারে কাতারের মতো ব্যয়বহুল একটি দেশ ভ্রমণের সাহস করেনি।
আর্জেন্টিনার সিনিয়র রাজনীতিবিদরা মনে করেন, বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টাইনদের মৌলিক চাহিদার ঘাটতির দুঃখ অনেকটাই ঘুচছে। নিজেদের কষ্ট ভুলে গেছেন সাধারণ জনগণ। ফুটবল যেন মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেওয়ার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। শ্রম মন্ত্রী কেলি ওরমোস বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে আমাদের ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এক মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। আমরা চাই আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হোক। কিছু আনন্দ আর্জেন্টিনার মানুষের জন্য পাওয়া হয়ে গেছে।’
বুয়েন্স আয়ার্সে ওয়াইন ব্যবসা চালান নিকোলাস ওরেয়ানো। নিজের সমস্ত জমানো অর্থ নিয়ে তিনি পাড়ি জমান কাতারে। সেটাও যথেষ্ট ছিল না। প্রেমিকার কাছে ওরেয়ানোকে ধারকর্জ করতে হয়েছে। প্রথমে স্পেন, তারপর লন্ডন হয়ে দুবাই পৌঁছান তিনি। তারপর বাস ও ট্রেনে চড়ে সৌদি আরব হয়ে আসেন স্বপ্নের শহর দোহায়। ৩০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার হাতে একটা পয়সাও নেই। দোহার কাছে একটি আর্জেন্টাইন সংঘের ভেতর কোনোমতে দিন কাটছে তার। তবুও আনন্দেই আছেন নিকোলাস। তিনি বলেন, ‘আমার হাতে কোনো টাকা নেই। জানি না, কীভাবে বাড়ি ফিরবো। নিজের দেশকে এই পরিস্থিতিতে রেখে পিছু হটারও সুযোগ নেই। মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠছে- এই দৃশ্য দেখার খুব কাছাকাছি আমরা।’
এমআই