শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

জ্বালানি সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে ভাটায় পুড়ছে কাঠ-লাকড়ি

বোয়ালমারীতে রাজ ব্রিকস গুড়িয়ে দিলো পরিবেশ অধিদপ্তর

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২২
বোয়ালমারীতে রাজ ব্রিকস গুড়িয়ে দিলো পরিবেশ অধিদপ্তর

এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি: 

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বৈধ লাইসেন্স না থাকা এবং কাঠ পোড়ানোর কারণে ইটের ভাটা গুড়িয়ে দিয়েছে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তর। এ সময় ভাটায় বানিয়ে রাখা কাঁচা ইটও বিনষ্ট করা হয়েছে বলে ভাটা মালিকদের দাবি। রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামে রাজ ব্রিকসে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর এ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী উপস্থিত ছিলেন। 

ওই ইট ভাটার মালিক বোয়ালমারী পৌরসভার সাবেক মেয়র আ. শুকুর শেখ। তবে রাজ ব্রিকসের মালিক আ. শুকুর শেখের জ্যেষ্ঠ পুত্র শাহিনুজ্জামানের দাবি, ভাটার লাইসেন্স আপডেট থাকার পরও কোন অগ্রিম নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়াই পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের ভাটার চিমনি, ক্লীম ও কাঁচা ইট বিনষ্ট করেছে। এতে তাদের প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
 
জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় রাজ ব্রিকস-১, রাজ ব্রিকস-২, মেসার্স রাজ ব্রিকস, মেসার্স গোল্ডেন ব্রিকস, মেসার্স বন্যা ব্রিকস, জুয়েল ব্রিকস, মেসার্স সফি ব্রিকস, মেসার্স জে কে এ ব্রিকস, মেসার্স বিউটি ব্রিকস, স্টার ব্রিকস ফিল্ড, মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস, মেসার্স এম এস আর ব্রিকস, মেসার্স কে এইচ এস ব্রিকস, মেসার্স বি এস কে ব্রিকস, এস এম এ ব্রিকস, এম এম এস ব্রিকসসহ বৈধ-অবৈধ ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। ১৬টির বাইরে নতুন কোন ইটভাটা তৈরি না হলেও বন্ধ হয়েছে বি এস কে ব্রিকস ও এস এম এ ব্রিকস নামে দুটি ইটভাটা। এ উপজেলার পাশ্ববর্তী উপজেলা আলফাডাঙ্গায় এ আর বি ব্রিকস, মেসার্স তাকি ব্রিকস ও আলফাডাঙ্গা ব্রিকস নামে তিনটি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় জ্বালানির সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে চলতি ভরা মৌসুমে এখনো অনেকেই উৎপাদনে যেতে পারেনি বেশির ভাগ ইটভাটাগুলো। কেউ ১৫দিন বা এক সপ্তাহ আগে থেকে ভাটায় আগুন দিয়েছেন। তবে যেসব ভাটা চালু হয়েছে সেগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অন্যদিকে, উজাড় হচ্ছে বাগানের গাছপালা। ইটভাটার মালিকদের দাবি, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ভাটায় কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

বোয়ালমারী উপজেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা ইট তৈরি করে রাখা হয়েছে কিন্তু জ্বালানির অভাবে চালু হওয়া সবকটি ভাটায় এখনো আগুন দেওয়া সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো ভাটার সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে লাকড়ি। আর শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইট তৈরি এবং রোদে শুকানোর কাজে। চালু থাকা ১৪টি ভাটার মধ্যে অন্তত ১১টি ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে। সবগুলি ইটভাটায় কয়লার সাথে কাঠ-লাকড়ী ব্যবহার করা হচ্ছে। বোয়ালমারীর হাসামদিয়া জুয়েল ব্রিকসের প্রায় একশো মিটার দূরে গোপনে বাঁশবাগানে কাঠ-লাকড়ী ক্রয় করা রাখা হচ্ছে।

কয়েকটি ভাটা মালিকের সাথে সোমবার সরেজমিনে  কথা বলে জানা যায়, এ বছর জ্বালানির অভাব ও উচ্চমূল্যের কারণে ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ ধীরে ধীরে চলছে। গত বছর যেখানে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় একটন কয়লা ক্রয় করা হতো বর্তমানে সেখানে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কয়লার টন কেনা লাগতেছে। বাড়তি টাকা দিয়েও এ মুহূর্তে কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও ডলার সংকটের কারণে এলসি করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আবার শ্রমিকদের প্রতিদিন মুজুরি এখন ৭০০-৮০০ টাকার বেশি দেওয়া লাগে। বিভিন্ন কারণে ইতিমধ্যে এ উপজেলায় দুটি ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।

আলফাডাঙ্গার এ আর ব্রিকসের ম্যানেজার জামিল আহমেদ জানান, এ বছর কয়লার দাম এত বেশি যে, তা দিয়ে ইটভাটা চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আমার ইটভাটায় গত শুক্রবার আগুন দেওয়া হয়েছে। এখন কয়লার সাথে কিছু কাঠ দিয়ে ইট পুড়ানো হচ্ছে। পরবর্তীতে আর কয়লা ছাড়া কাঠ পোড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ আইনের উর্দ্ধে আমরা কেউ না। আগামীতে ইটভাটা রাখবেন কিনা সে বিষয়ে তিনি দ্বিধাদন্দে রয়েছেন।

বোয়ালমারী ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও মেসার্স রাজ ব্রিকসের মালিক শ্যামল সাহা বলেন, ইটের ব্যবসা আগের মত নেই। এ উপজেলায় কয়েকটি ভাটায় ইতিমধ্যে ইটা পোড়ানো শুরু হয়েছে। কিন্তু কয়লা সংকট ও দাম বেশি হওয়ার কারণে আমরা ভালোভাবে ইট পোড়াতে পাচ্ছি না। নিয়মানুযায়ী ইট পোড়াতে গেলে যে টাকা খরচ হচ্ছে তাতে আসল টাকাও উঠবে না। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভাটা করেছেন। তাঁদের অবস্থা আরো খারাপের দিকে। কয়লার দাম সমন্বয় করে ইটের দাম ধরায় বাজারও কমে গেছে। তবে কিছু ইটভাটায় কয়লার সাথে ভাটার মালিকরা কিছু লাকড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
 অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম বহিভুত পরিচালনা ছাড়া প্রশাসন কোন ভাটায় অভিযান করেন না। এ উপজেলায় প্রশাসন যে ভাটাটি ভেঙ্গে দিয়েছেন সেটা হইতো আইনের বাইরে পরিচালনা হচ্ছিল।

ফরিদপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবি পরিবেশ কর্মী অ্যাড. গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন জানান, কোন কোন ইটভাটায় কাঠ ব্যবহার এবং তিন ফসলি জমির মাটির উপরিভাগ (টব চয়েল) কেটেও ব্যবহার করার বিষয়টি জানতে পেরেছি। যা পরিবেশে মারাত্বক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এদিকে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

সোমবার দুপুরে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সদর দপ্তরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হকের নেতৃত্বে ফরিদপুর সদর, মধুখালী, বোয়ালমারী ও ভাংগা উপজেলায় ইতিমধ্যেই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) লঙ্ঘনের দায়ে ৬টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ০২ (দুই) টি ইটভাটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৪টি ইটভাটায় ১৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী উপস্থিত ছিলেন। অবৈধ ভাটায় অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে তিনি আরো জানান।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল