নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বুকে যাত্রী নিয়ে স্বপ্নের মেট্রোরেল ছুটতে বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। তবে সময় যত ঘনিয়ে আসছে মেট্রোরেলের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ ততই বাড়ছে। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাওয়া এই পরিবহন ব্যবস্থায় টিকিট কীভাবে সংগ্রহ করা যাবে। কোথা থেকে সংগ্রহ করা যাবে টিকিট এমন প্রশ্ন অনেকের মাঝে। এমন কৌতুহলী নাগরিকদের জন্য কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, দুই পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা যাবে মেট্রোরেলের টিকিট।
একটি হলো- তাৎক্ষণিক স্টেশন থেকে। অন্যটি স্থায়ী কার্ড সংগ্রহের মাধ্যমে। যেটিতে বারবার রিচার্জ করে মেট্রোরেলে পছন্দের গন্তব্যে যেতে পারবেন যাত্রীরা।
ঢাকার আগারগাঁও থেকে শুরু হওয়া মতিঝিলের রুটের মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। আর টিকিট কাটার মেশিনে ২০ টাকার কম প্রবেশ করাতে চাইলেও পারবেন না যাত্রীরা। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা পর্যন্তও মেশিনে দিয়ে টিকিট কাটার সুযোগ রেখেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
২০১৬ সালের ২৬ জুন মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার এই প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা- জাইকা। আর পাঁচ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার।
নির্মাণকাজের উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য যাত্রীরা চলার সুযোগ পাবেন পরদিন থেকে।
মেট্রোরেলের কয় ধরনের টিকিট পাবেন যাত্রীরা
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেট্রোরেলের এমআরটি ৬ লাইনে দুই ধরনের টিকিট নিয়ে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা। প্রথমটি সিঙ্গেল জার্নির জন্য। দ্বিতীয়টি এমআরটি পাস (পারমানেন্ট টিকিট) পারমানেন্ট জার্নির জন্য।
যাত্রীরা যদি সিঙ্গেল যাত্রার জন্য টিকিট কাটেন তাহলে একবারেই তা শেষ। নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে আসার পর যাত্রীকে টিকিটটি স্টেশনের স্বয়ংক্রিয় দরজায় জমা দিয়ে আসতে হবে। কারণ এই টিকিট জমা না দিলে দরজা খুলবে না, ফলে যাত্রী স্টেশন থেকে বের হতে পারবে না।
অন্যদিকে স্থায়ী পাস নিয়ে যারা চলবেন তাদের বারবার টিকিট কাটার ঝামেলা থাকবে না। এমআরটি পাসের (পারমানেন্ট জার্নি) জন্য যাত্রী একবার টিকিট কিনে মোবাইলের মতো বারবার রিচার্জ করে চলতে পারবেন। সুবিধা হলো এই যাত্রীকে প্রত্যেকবার স্টেশনে টিকিট জমা দিতে হবে না। এটি যাত্রীর কাছেই সংরক্ষিত থাকবে।
আপাতত উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলেও মেট্রোরেল চলবে মতিঝিল পর্যন্ত। সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া পুরো রুটের।
কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম। আপাতত যে অংশ চালু হচ্ছে-উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে ৯টি। এতে ভাড়া পড়বে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ২০ টাকা। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬-১৭ মিনিটে।
কীভাবে সংগ্রহ করা যাবে টিকিট
প্রথমদিকে শুধু স্টেশনের কাউন্টার থেকে এমআরটি পাস ইস্যু করা হবে এবং সেটা রিচার্জ করা যাবে। এছাড়া স্টেশনের কাউন্টার কিংবা টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নির্দিষ্ট যাত্রার টিকিট (সিঙ্গেল জার্নি টিকিট) কেনা যাবে। পরবর্তী সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস দিয়েও এমআরটি পাসের টাকা রিচার্জ করা সম্ভব হবে।
তবে সামনের দিনগুলোতে রাজধানীর দোকান থেকেও মোবাইলের মাধ্যমে টিকিটের টাকা রিচার্জ করতে পারবেন পারমানেন্ট জার্নির জন্য টিকিট সংগ্রহকারীরা।
যাত্রীরা বিক্রয় মেশিনের মাধ্যমে টিকিট কাটতে হলে প্রথমে তাদের ভাষা নির্বাচন করতে হবে। প্রথমে মনিটরে বাংলা অথবা ইংরেজি অপশন নির্বাচন করতে হবে। পরে সিঙ্গেল ও পারমানেন্ট জার্নির জন্য টিকিট নির্বাচন করতে হবে।
এরপর আসবে যাত্রীদের গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশনের কত ভাড়া সেই তালিকা দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে তার গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। তারপর কয়টি টিকিট কাটবে তার আপশন আসবে।
সিঙ্গেল জার্নির জন্য একজন যাত্রী একবার যাত্রায় পাঁচটির বেশি টিকিট কাটতে পারবে না। এরপর ওকে বাটনে চাপ দিলেই মেশিন টাকা চাইবে। টাকা দিলেই টিকিট বেরিয়ে আসবে। মেশিনে সর্বনিম্ন ২০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা প্রবেশ করানো যাবে।
দোকানেও মিলবে টিকিট রিচার্জের সুযোগ
শুরুর দিকে মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে মিলবে টিকিট নেওয়ার সুযোগ। তবে সামনের দিকে এটি রাজধানীর দোকানগুলোতেও মোবাইলের রিচার্জের মতো করে নেওয়ার সুযোগ মিলবে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
এমআই