নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজন করে অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে পিলখানাস্থ সদর দপ্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস ২০২২ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
সরকারপ্রধান আরো বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে আমরা ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের চেইন অব কমান্ড এবং কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলারও আহ্বান জানান।
সকালে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করে বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। কমান্ড মেনে চলবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বিজিবির জন্য তার সরকারের নানা উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরেন।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বা সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের এখানে যেন মন্দা বা সংকট না আসে। সেজন্য প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কিছু না কিছু উৎপাদন করতে আহ্বান করেছিলাম। বিজিবি প্রতিটি বিওপিতে আমার নির্দেশনা মেনেছে, দেখে খুশি হয়েছি।
তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯২২ জন নারী সৈনিকসহ সৈনিক ও অসামরিক পদে ৩৫ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বাহিনীর জনবল আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৯০ থেকে ৯৫ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বমোট ১,০৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্বে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর ফলে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিজিবির আভিযানিক কর্মকাণ্ড সহজতর হবে।
বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বর্ডার গার্ড হাসপাতাল, ঢাকায় ক্যাথ ল্যাব, সিসিইউ, আরটিপিসিআর ল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনসহ আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবি হাসপাতালসমূহকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দিনরাত নিরবচ্ছিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম এবং নজরদারির মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনসহ দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অবৈধ মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী সব বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
ভবিষ্যতে এ সফলতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজিবি প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা এবং সামরিক-অসামরিক পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এমআই