লাবিন রহমান:
কখনও ডিমের দাম দ্বিগুণ। কখনোবা আটা-ময়দা। হঠাৎ করে বেড়ে গেল চিনির মিষ্টত্ব। চাল আজ এক দামে কিনি তো কাল আর এক দাম। গরিবের আমিষ ডাল আর ছিলনা গরিবের ঘরে। বছরজুড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে এই খেলা। একটুও স্বস্তিতে ছিল না মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত।
চাল, ডাল, তেল, আটা, ডিম, মাছ, মাংস, সবজিসহ বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের দাম। করোনার ধকল কাটিয়ে অনেকের বেতনও ফেরেনি আগের অবস্থানে। এরই মধ্যে পণ্যমূল্য বাড়ায় সংসারে টানাপোড়েন চলছে সারাবছর। বেশি ভুগেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ।
চলতি বছরের মাঝামাঝি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছিল, পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন করে বিপদ পড়েছে ২৯ শতাংশ মানুষ। যেখানে বছরের শুরুতে দেশের ১৮ শতাংশ মানুষের জীবনমানের ওপর সেই চাপ ছিল। আর বছর শেষে এ হিসাব করলে হিসাব নিশ্চয় আরও পরিবর্তন হবে।
এদিকে, বছরজুড়ে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ও এর প্রভাবে বাংলাদেশে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমদানিতে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এর মধ্যে দেশে এক দফা ডিজেলের দাম বাড়ায় বাড়তি পরিবহন খরচ ও পণ্য উৎপাদনে গ্যাসের সংকটে পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি বছরজুড়ে ছিল নাজুক।
মোটা চাল ১০, সরুতে ১২ টাকা বাড়তি
গত বছর ঠিক এসময় ৪৬-৪৮ টাকার মধ্যে যে কোনো জাতের মোটা চাল কেনা যেত। এখন সেটা ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা। কোথাও কোথাও ৬০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সরু চালের দাম (মিনিকেট) ৬০ টাকার মধ্যে ছিল, যা এখন ৭০-৭৫ টাকা। ভালো মানের নাজিরশাইলের দাম ৮০ টাকায় ঠেকেছে।
আটা-ময়দা প্রায় দ্বিগুণ
২০২১ সালের শেষে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। একইভাবে ময়দার দাম ৪০-৪২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ দুই পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
তেল-চিনি নিয়ে অস্বস্তি
এবছর তেল ও চিনির দাম সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আবার বিভিন্ন সময় দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ বন্ধ রেখে সংকট তৈরি করেছে কোম্পানিগুলো। সরকারও বারবার দাম বেঁধে দিয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় সেটা কার্যকর হয়নি।
ডাল আর গবিরের আমিষ নয়
টিসিবির হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে বড়, মাঝারি ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি যথাক্রমে ১৫, ২৪ ও ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৯৭ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। বাজারে খোলা মসুর ডালের পাশাপাশি সুপারশপ বা বড় দোকানে প্যাকেটজাত ডাল পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।
স্বস্তি ছিল না সবজি, মাছ, মাংসের দামে
ডিসেম্বরের আগে পর্যন্ত বছরব্যাপী চড়া ছিল সবজির দাম। গরুর মাংসের দাম এক বছরের ব্যবধানে একশো-দেড়শো টাকা বেড়েছে। সঙ্গে চড়া ছিল সব মাছের দাম-ই।
বছরের বেশিরভাগ সময় ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি কেনা যায়নি। একইভাবে বছরের মাঝামাঝি এসে অন্য মাছের মতো সবচেয়ে কম দামি মাছ পাঙাশের দামও বেড়েছে। চাষের পাঙাশ এখন ১৮০ টাকা, দর বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকার মতো। তেলাপিয়া ১৮০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটা এখন ২২০ টাকা। বাজারে বোয়াল, বাছা, কাজলি, চিংড়ি, আইড়, বাতাসিসহ বিভিন্ন দেশি মাছ ৬শ টাকার নিচে নেই। মাছের দাম বছর ব্যবধানে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি।
এরমধ্যেই আমরা টিকে আছি। যে পরিবার আগে আধা কেজি মাছ বা সবজি কিনতো তারাই এখন কিনছে আড়াইশ করে। ২০২৩এ হয়ত সবজি কিনতে হবে হালি হিসাবে। একহালি পটল বা দুই হালি ঢেড়স।
সময় জার্নাল/এলআর