ডাঃ আহমেদ জোবায়ের :
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত এই মুহুর্তে কোভিড প্যান্ডেমিকে সারা দুনিয়ায় হিমশিম খাচ্ছে।।
গত ২৪ ঘন্টায় ভারতে তিন লাখ পনের হাজার মানুষ কোভিডে ১৯শে আক্রান্ত হয়েছেন। যা এই প্যান্ডেমিকে রেকর্ড।
পৃথিবীর কোন দেশে একদিনে এত রোগী আক্রান্ত পাওয়া যায়নি।
ইতিমধ্যে দেশটিতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছড়ালো
এক কোটি বাষট্টি লাখ তেষট্টি হাজার ছয়শো পচানব্বই জন।
মারা গেছেন এক লাখ ছিয়াশি হাজার ৯২৮ জন।
গত ছাব্বিশ ঘন্টায় মারা গেছেন দুই হাজার ১০৪ জন।
করোনার সেকেন্ড ওয়েভে এসে ভারত নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে এই ঘাতক ভাইরাসের কাছে।
হাজার হাজার মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে।
চিকিৎসার জন্য স্বজনরা ছুটোছুটি করলেও মিলছেনা চিকিৎসা।
রাতে হাসপাতালে গিয়েই সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকে।
চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বেড,মেডিসিন, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অক্সিজেনের চরম অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে ভারতে।
শ্মশানে লাশ দাহ করে কুল পাচ্ছেনা ভারত।
এরমধ্যেই আতংকের খবর হলো ভারতে করোনার ডাবল মিউটেন্ট স্ট্রেইন পাওয়া গেছে।
আজকের খবরে ট্রিপল মিউটেন্ট পাওয়ার খবর বেরিয়েছে।
এই ডাবল মিউটেন্টকেই দায়ী করা হচ্ছে দ্রুত করোনা বিস্তারের জন্য।
যারা ইতিমধ্যে ভ্যাক্সিন নিয়েছেন,এই মিউটেন্ট তাদের কতটা সুরক্ষা দিবে তা নিয়ে চলছে গবেষণা।
এই মিউটেন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে।।
পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
ভারত এই মুহুর্তে দুনিয়ায় দ্বিতীয় কোভিড আক্রান্ত দেশ হয়ে উঠেছে।
একটা মানবিক বিপর্যয় ও হাহাকার ফুটে উঠেছে।
এই যখন আমাদের প্রতিবেশী দেশের অবস্থা, তখন আমরা লকডাউন চালু রেখে শপিংমল খুলে দেওয়ার নোটিশ জারি করেছি।
এ দেখি মুখে ঘোমটা কিন্ত শরীরের বাকি অংশ ন্যাংটা অবস্থার মত।
শপিংমল যদি খুলেই দেওয়া হবে তবে এই কয়দিনে মানুষের সাথে এত বাড়াবাড়ি করা হলো কেন?
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার অসহায়ত্ব গতবছরের মার্চ থেকেই স্পষ্ট হয়েছে।
এরমধ্যে উদ্ভট উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা মহামারী নিয়ন্ত্রণে হাস্যকর সব স্টেপ নেওয়া হচ্ছে।
আমরা ভ্যাক্সিন প্রোগ্রামে ভালো করছিলাম।
এখন তো ভারত আমাদের ভ্যাক্সিন দিতে পারবেনা।
তারা এক্সপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে।
আগে তাদের দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে হবে।
যদিও আমরা আগেই সব এডভান্স পেমেন্ট দিয়ে রেখেছিলাম।
ভারতের ডাবল বা ট্রিপল মিউটেন্ট বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপক আশংকা দেখা দিয়েছে।
ভারতের সাথে অতিসত্ত্বর সব বর্ডার ও এয়ার যোগাযোগ বন্ধ না করলে এই বিধ্বংসী মিউটেন্ট বাংলাদেশে কি ব্যাপক ভয়াবহতা তৈরি করতে পারে তা ভাবলেই শিউরে উঠি।
বালখিল্য আচরণ,ডেমকেয়ার নীতি দিয়ে এমন প্যান্ডেমিক সামলানো আমাদের জন্য কঠিনতর হবে।
কোভিড প্যান্ডেমিকের প্রথম নয় মাসে দশ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলো।
গত তিন মাসেই বিশ লাখের অধিক মানুষ মারা গেছে সারা দুনিয়ায়।
মাননীয় সরকারকে দায়িত্বশীল হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবী জানাই।
শপিংমল খুলে দিলে এই লকডাউন দিয়ে যতটুকু কোভিডের বিস্তার রোধ করা গেছে,তা আবার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
নিম্নমুখী Curve অতি দ্রুতই উর্ধ্বমখী হয়ে যাবে।
মানুষ একদিকে প্যান্ডেমিকে নাজেহাল, অন্যদিকে লকডাউনে ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে।
গরীব অসহায় মানুষের কাছে এই লকডাউন এক অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এরমধ্যে ব্যবসায়ীদের খুশি করতে এমন অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের জন্য সাধারণ মানুষ কতটা দাম দেয়- তা সময়ই বলে দিবে।
সাধারণ মানুষকে বলবো,চারদিকে এত মৃত্যু,এর হাহাকার দেখেও হুশিয়ার হবেন না
মাস্ক পরুন
মাস্ক পরুন।
মাস্ক পরুন।
যতটা পারেন ঘরে থাকুন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
ভাইলোক এইদেশে সবচেয়ে সস্তা সাধারণ মানুষের জীবন।
একদিকে খেতে পাবেন না,অন্যদিকে চিকিৎসা পাবেন না।
নাজুক পরিস্থিতিতে নাজেহাল হবার আগেই নিজেকে সামলান।
সচেতন হউন। মাস্কটা পরুন অন্তত।
নিজে বাঁচুন।
অন্যকেও বাঁচতে দিন।