শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

এ বছরে আরও বাড়তে পারে ফ্ল্যাটের দাম,শঙ্কা কাটছে না আবাসন খাতে

রোববার, জানুয়ারী ১, ২০২৩
এ বছরে আরও বাড়তে পারে ফ্ল্যাটের দাম,শঙ্কা কাটছে না আবাসন খাতে

নিজেস্ব প্রতিনিধি:


নতুন বছর ২০২৩ নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন বছরের দামে নতুন বছর (২০২৩ সাল) ফ্ল্যাট মিলবে না বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, অনেক আবাসন ব্যবসায়ীর রেডি প্রকল্পগুলো সবশেষ আবাসন মেলায় বিক্রি হয়ে গেছে। এ কারণে নতুন বছরে নতুন প্রকল্প শুরু করলেও বর্তমান নির্মাণসামগ্রীর দামের সঙ্গে সমন্বয় হবে ফ্ল্যাটের দাম। এতে দামও কিছুটা বেড়ে যাবে। কারণ নির্মাণসামগ্রীর প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে।


ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজউকের কারণে চার-পাঁচ মাস প্ল্যান পাস করা যাচ্ছে না, তাদের সার্ভার ডাউন করে রাখা হয়। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ সংক্রান্ত রাজউকের নতুন নীতিমালার কারণে নতুন ভবনের আয়তন সংকুচিত হয়ে আসছে। ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যাও কমছে। এসব কারণে ফ্ল্যাটের দাম যেমন বাড়বে বিক্রিও কমে যেতে পারে। এতে লোকসান গুনতে হবে অনেক ব্যবসায়ীকে।


এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রায় চার মাসে রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যেতে পারেনি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেনি। পুরোনো প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। যদিও রেডি প্রকল্প অনেকটাই শেষ হয়েছে। ফলে নতুন বছরে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে।


তিনি বলেন, নতুন ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের ফলে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে চার থেকে পাঁচতলা। ফলে নতুন বছরে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বি হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। ব্যবসা কমে যাবে, বলা যায় আবাসন খাতে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।


বছরের শুরুতেই আবাসন মেলা বাবদ অর্ডার আসে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। এতে স্বস্তি ফেরে খাতসংশ্লিষ্ট আরও প্রায় ২৬৯টি লিংকেজ কোম্পানিতে। তবে এই স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।দাম বাড়বে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের,বাড়বে ভাড়া, বাড়তে পারে সাবলেট,ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবাসন খাত দেশের আবাসন খাতের ওপর দিয়ে দুই বছর গেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বড় ধাক্কা। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত ও শিক্ষা কার্যক্রমের মতো আবাসনেও স্থবিরতা দেখা দেয়। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল বহু প্রকল্পের নির্মাণকাজ। করোনার প্রভাব সামলে ধীরে ধীরে চাঙা হতে শুরু করে আবাসন শিল্প। 


হু হু করে বেড়ে যায় নির্মাণসামগ্রীর দাম। নির্মাণের অন্যতম উপাদান রডের দাম (প্রতি টন) ইতিহাসে প্রথমবার ৯০ হাজার টাকা ছাডিয়ে যায়। অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হয় বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল। টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। সিমেন্টের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দেয় বছরজুড়েই। তেমন প্রভাব না পড়লেও দাম বাড়ার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় ইট, বালু ও পাথরের। দামের এসব প্রভাব পড়ে ফ্ল্যাটের ওপর। মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় আবাসন খাত। দাম বেড়ে যায় ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের। বর্ধিত দামের কারণে বিক্রি কমে অর্ধেকে নেমে আসে।


এতে বিনিয়োগ করেও টাকা আটকে যায় আবাসন ব্যবসায়ীদের। আবাসন ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই লোকসানে পড়েন। এদিকে বছরের শেষ সময়ের আবাসন মেলা সংকট কিছুটা কমিয়ে দেয়। রেডি ফ্ল্যাটের বুকিংয়ে বিক্রি হয়। চলমান কোনো প্রকল্প না থাকায় নতুন বছরে বাড়তি দামেই নির্মাণসামগ্রী নিয়ে তৈরি করতে হবে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট, দামও অর্ধেক বেড়ে যাবে। এতে বিক্রি কমবে ফ্ল্যাটের, টাকা বিনিয়োগ করেও অলস সময় পড়ে থাকবে প্রকল্প। সব মিলিয়ে আবাসনে আগামীতে নানা শঙ্কা আছে ব্যবসায়ীদের। সহসা এ সংকট কেটে যাবে এমন কথাও কেউ বলতে পারছে না।


খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজউকের কারণে চার-পাঁচ মাস প্লান পাস নেই। ব্যবসায়ীদের রেডি কোনো ফ্ল্যাট নেই, সব বিক্রি হয়ে গেছে। নির্মাণসামগ্রীর চড়া দামের কারণে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা আগের মতো নতুন প্রকল্প শুরু করতে পারছেন না। যারা নতুন করে প্রকল্প শুরু করেছেন সবাই বেশি দামে নির্মাণসামগ্রী কিনেছেন। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ সংক্রান্ত রাজউকের নতুন নীতিমালার কারণে নতুন ভবনের আয়তন সংকুচিত হয়ে আসছে। ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যাও কমছে।


এ বছরে আরও বাড়তে পারে ফ্ল্যাটের দাম, এতে ক্রেতার ওপর বর্ধিত দাম পড়বে। ফ্ল্যাটের দাম বেশি হওয়ায় বিক্রিও কমে যাবে। অন্যদিকে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার প্রভাব পড়বে ভাড়াটিয়াদের ওপরও। তাদের বেশি ভাড়া দিয়েই বসবাস করতে হবে। আবার নিত্যপণ্যের দামও বেশি। এসব কারণে নতুন এ বছর টাকা সঞ্চয়ে সাবলেটকে বেচে নিতে পারে একটা বড় অংশ। এতে বলা যায় এ বছর সাবলেটের সংখ্যাও বেশি হবে।

 

২০২২ এ হাসের রেকর্ড দামে রড: প্রথমবারের মতো প্রতি টন রডের দাম ছাড়িয়েছে ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে বিএসআরএম’র ৬০ গ্রেড এক টন রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার ৫০০ থেকে ৯১ হাজার টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮৮ হাজার টাকা। মাসখানেক আগে এ দাম ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার টাকা। বাজারে প্রতি টন একেএস রড ৮৮ থেকে ৮৯ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার, জিপিএইচ ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার, বন্দর ৮৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮৯ হাজার এবং কেএসএমএল প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার টাকায়। পাশাপাশি আনোয়ার, রহিমসহ কয়েকটি কোম্পানির রড পাওয়া যাচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার টাকায়।


building-4.jpg

রেকর্ড দামে সিমেন্ট: নির্মাণশিল্পের আরেক অন্যতম উপকরণ সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম আমদানিনির্ভর। এগুলোর মধ্যে ৬২ থেকে ৯০ শতাংশই ক্লিংকার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি টন ক্লিংকারের দাম ৬০ ডলার থেকে বেড়ে ৭৫-৭৯ ডলারে উঠেছে। সিমেন্ট উৎপাদনের অন্যান্য কাঁচামালের দামও টনপ্রতি গড়ে ১০ থেকে ১২ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া কয়লা ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কাঁচামাল আমদানিতে জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়াও সিমেন্টের দাম বাড়ার বড় কারণ।


টাইলসের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত: বিক্রিতে ভাটা পড়লেও একাধিকবার টাইলসের দাম বেড়েছে। সম্প্রতি টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে ছোট টাইলসের দাম। ছোট টাইলসের দাম ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। বড় টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। সিরামিকের যেসব পণ্য আছে, তার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই টাইলস। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশের মতো স্যানিটারিওয়্যার। ১০ শতাংশ ডিনার সেট, টি সেট, মগ, বাটির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রীর পণ্য। এসব পণ্যেরও দাম বেড়েছে।


দাম বাড়ে ইট-বালুর: বিএসিআই’র প্রতিবেদন মতে, এ বছর রডে প্রতি টনে প্রায় ৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে, সিমেন্ট প্রতি ব্যাগে ২২ শতাংশ বেড়েছে। কারণ রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের পুরোটাই আমদানি করতে হয়। তাছাড়া পাথর প্রতি ঘনফুটে ২৪ শতাংশ, ইট প্রতি হাজারে ২২ শতাংশ, মোটা বালু প্রতি ঘনফুটে ৫০ শতাংশ, ইলেক্ট্রিক ক্যাবলে (১.৫ বিওয়াইএ) দাম বেড়েছে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত।

building-4.jpg

দাম বাড়ে ফ্ল্যাটের: নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা থমকে আছে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উচ্চমূল্যে রড, সিমেন্ট, টাইলস বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে এসব উপকরণের কাঁচামালের দাম। এতে আবাসন প্রকল্পেও ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি খরচ পড়ছে। একই সঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইট, বালু। এসব কারণে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি নেই। ২০২১ সালের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে বিক্রি।বর্ধিত দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ: চলমান কোনো প্রকল্পে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে রেডি ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার কারণ না থাকলেও সেগুলোর দাম বাড়ানো হয়। এ নিয়ে ১২’শ মতো অভিযোগ পড়ে রিহ্যাবে। পরে রিহ্যাব পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কাজ শুরুর পর অতিরিক্ত খরচ (রড-সিমেন্ট ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব) ১০ শতাংশের কম হলে আগের দামেই ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হবে ক্রেতার কাছে। ১০ শতাংশের বেশি খরচ পড়লে ক্রেতা-বিক্রেতার সমঝোতার ভিত্তিতে তার দাম নির্ধারণ হবে।


সংকটে পড়েন ভাড়াটিয়া: অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী। যার প্রভাব সব শ্রেণির মানুষের ওপর। অথচ এই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি আয়। সংসার চালাতে হচ্ছে খরচ ছাঁটকাট করে। রাজধানীতে যাদের আয় ২০ হাজার টাকার মধ্যে তারা সংসার চালাতে এখন ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন। আর ৩০ হাজারের মধ্যে আয় হলে তাদের ভরসা এখন ১০ হাজার টাকার মধ্যে সাবলেট। বাড়তি খরচ থেকে বাঁচতে অনেকেই পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে ব্যাচেলর জীবন-যাপন করছেন। অনেকেই আবার বড় সাইজের ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বেছে নিচ্ছেন ছোট ফ্ল্যাট বা ঝুপড়ি ঘর।


২০২২ নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, বছরজুড়েই নির্মাণসামগ্রীর দাম ছিল বেশি। এতে আবাসন ব্যবসায় একটা শঙ্কা তৈরি হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক কমে যায়। সদ্য বিদায়ী বছর খুব একটা ভালো ব্যবসাবান্ধব হয়নি।নতুন বছরের আবাসন ব্যবসা নিয়ে তিনি বলেন, আবার নতুন ড্যাপের কারণে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বসবাস করার জন্য মৌলিক চাহিদার অন্যতম আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন আরও কঠিন হয়ে যাবে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারিভাবে সমন্বয়ের প্রয়োজন।



এসএম




Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল