শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম

শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াই পাঠদান শুরু

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ৫, ২০২৩
শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াই পাঠদান শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করেছে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াই। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই ২ জানুয়ারি থেকে প্রথম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এক ঘণ্টার অনলাইন প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। এসব শিক্ষককে অফলাইন বা সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে পাঁচ দিনের।

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক অনলাইন ও অফলাইন—এই দুই ধরনের পাঠদানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু অনলাইন প্রশিক্ষণই নিতে পারেননি মাধ্যমিকের প্রায় ৮৬ হাজার শিক্ষক। প্রাথমিক স্তরে এই প্রশিক্ষণ এখনো শুরু করা হয়নি। এ ছাড়া দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।,

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাঠদানে নতুন শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ছাড়া এই শিক্ষাক্রমে পাঠদান প্রায় অসম্ভব। শিক্ষকরা এ ধরনের শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত না থাকায় প্রতিবছর তাঁদের এই প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

মাধ্যমিকে অনলাইন প্রশিক্ষণ : পাঠদানে অনুমোদনপ্রাপ্ত মাধ্যমিক স্তরের এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৫৫ হাজার শিক্ষককে অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, এ পর্যায়ে মোট শিক্ষক চার লাখ ৪১ হাজার ছয়জন। তাঁদের মধ্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি ৮৬ হাজার ছয়জন শিক্ষক। অনলাইনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ৬ ও ৭ জানুয়ারি এবং ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি—এই পাঁচ দিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।,

জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে এনসিটিবি থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ৪৫৬ জন শিক্ষক  ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে এক হাজার ৫৬ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৬ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ধারাবাহিকভাবে সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যাঁরা অনলাইনে প্রশিক্ষণ নেননি, তাঁদের দ্রুত অনলাইন প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁদের জন্য সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের পর তাঁদের শেখানোর বিষয়টি মনিটর করা হবে। সেখানে কোনো ত্রুটি থাকলে চলতি বছর জুন মাসে পুনরায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকরা অভ্যস্ত না হওয়ায় প্রতিবছর অন্তত দুইবার এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১৯ হাজার ৮২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৮৩ হাজার ৫২৮ জন শিক্ষক সরাসরি প্রশিক্ষণ পাবেন। কলেজ সংযুক্ত দুই হাজার ৯৭৩ প্রাথমিকের এক লাখ এক হাজার ৪৭৮ জন শিক্ষক। এ ছাড়া সরাসরি প্রশিক্ষণের আওতায় রয়েছেন ৬৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংযুক্ত প্রায় ছয় হাজার মাধ্যমিকের শিক্ষক।

প্রাথমিকে প্রশিক্ষণই হয়নি : অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাননি। পরবর্তী সময়ে অনলাইন প্রশিক্ষণ পেলেও সরাসরি প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হবেন সংশ্লিষ্ট স্তরের প্রায় তিন লাখ শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অফলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সারা দেশে পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৯৮। এসব প্রাথমিকে শিক্ষকসংখ্যা ছয় লাখ ৫৭ হাজার ১৯৩। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৫৬৬ সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষক আছেন তিন লাখ ৫৯ হাজার ৯৫ জন।

এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক) এ কে এম রিয়াজুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশিক্ষক তৈরির কাজ আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে তাঁরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া সব শিক্ষককে অনলাইন প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এ জন্য একটি প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করার কাজ চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধীনে মডিউল এডিটিংয়ের কাজ শেষ হলে অনলাইনে আপলোড করা হবে।

প্রশিক্ষণে দেরি হওয়ার বিষয়ে এনসিটিবির এই সদস্য বলেন, প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা ও জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের কারণে শিক্ষকরা ব্যস্ত ছিলেন। পরীক্ষার ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত (৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) শিক্ষকদের অন্য সব প্রশিক্ষণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আগে থেকেই প্রাথমিকে দক্ষতাভিত্তিক কার্যক্রম থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের তেমন সময় লাগবে না। তার পরও এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

প্রশিক্ষণের বাইরে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা : নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে বই বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের বাইরে থাকছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও  পরিসংখ্যান ব্যুরোর  (ব্যানবেইস) তথ্য মতে, দেশে ২৮ হাজার ১৯৩ কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষক আছেন দুই লাখ ৪৬৭ জন। মাধ্যমিকের কর্মকর্তারা জানান, পাঠদান অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রাথমিকের কর্মকর্তারা জানান, বরাদ্দ কম থাকার কারণে শুধু সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী  বলেন, ‘সারা দেশে পাঠদানের অনুমোদনবিহীন প্রায় ৬০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানেও নতুন শিক্ষাক্রমের বই দিয়েছে সরকার। তবে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে কেন আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে না? সরকার থেকে কোনো ধরনের সুবিধা চাই না। পাঠদানের অনুমতি দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চাই।

সময় জার্নাল// আইপি


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল