জুয়েল রানা: আমাদের দেশে বিশেষ করে ইকমার্স কোম্পানি গুলি কোন কারনে তাদের সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট এর মধ্যে সেবা প্রদান করতে না পারলে দুঃখিত না হয়ে বরং কেন এই সমস্যা সৃষ্টি হলো তার বিশ্লেষন (ফেক বেশির ভাগ সময় ) করতে বেশি সময় ব্যয় করে থাকে। এই সময়টা সার্ভিস দেয়ার পদ্ধতি উন্নয়নে ব্যয় করলে বরং বেশি উপকারে আসত বলে আমি মনে করি ।
ব্যবসায়িক সমস্যা যেমন টেকনিক্যাল ত্রুটি, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, এক্সিডেন্ট ইত্যাদি একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট বিষয় এটা যদি দু-তিন বছরেও সমাধান না হয় তবে আপনার প্রাতিষ্ঠানিক ইকো সিস্টেম এ সমস্যা আছে কিংবা আপনার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে।
সেবা প্রদানে প্রতিজ্ঞাকৃত সময় হচ্ছে একটা সেবা প্রদানে প্রতাষ্ঠান কতৃক প্রতিজ্ঞা কৃত সময়-সীমা, মানে ধরুন কোন কোম্পানি তাদের পন্য ডেলিভারির জন্য ৭২ ঘন্টা সময় চেয়ে নিচ্ছে এই ৭২ ঘন্টা তাদের এস এল এ টাইম ( সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট) । ব্যবসায়িক ইথিক্স এ থেকে কোন প্রতিষ্ঠান এটার বাত্যয় ঘটাতে পারে না; তবে বলা বাহুল্য কোন প্রতিষ্ঠানই তাদের শতভাগ এস এল এ পুরন করতে পারবে এমন নয়। তবে এস এল টাইম এ সেবা না দিতে পারলে তার জন্য বৈধ কারন থাকা জরুরী ।
ধরুন ইউনিলিভার তাদের মার্চেন্ট ( ডিলার) দের ২৬ তারিখে পন্য পৌছে দেবার প্রতিজ্ঞা করল, পৌছে দিতে যেয়ে এক্সিডেন্ট , কিংবা পন্য গুদামাগারে দূর্ঘটনার কারনে তা ২ এক দিন পিছিয়ে গেল, এটা হচ্ছে স্বাভাবিক এস এল এ ভংগ হওয়া - যেটাকে স্বাভাবিক হিসবে আমরা ধরতে পারি।
অপর পক্ষে কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যদি তার সেবা ৫ দিনে দিবে বলে; প্রতিনিয়ত ৪০ দিনে দেয় তবে সেটা অবশ্যই ঐ কোম্পানির ব্যবসায়িক ইথিক্স কে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এটাকে ব্যবসায়িক কাঠামো বড় বলে সমস্যা হবে বলে ধরে নেবার কোন অবকাশ নেই। এমাজনের মত কোম্পানির ও এস এল এ ব্রেক হয়, তবে তা স্বাভাবিক এস এল এ ব্রেক।
আমাদের দেশের ইকমার্স এর বড় কোম্পানিগুলির মধ্যে দেখা যায় - অস্বাভাবিক এস এল এ ব্রেক করে - ফ্লিপকার্ট আর এমাজনের মত কোম্পানির স্বাভাবিক এস এল এ ব্রেক এর স্ক্রিন শট দিয়ে তা জাস্টিফাই করতে।
এখন আসি এই এস এল এ ব্রেকিং এর পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর নেয়া পদক্ষেপ-এমাজন কুইক রিফান্ড করে, পন্য বদলে দেয় কিংবা গিফট দেয়, সংশ্লিষ্ট গ্রাহক এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ফ্লিপ কার্ট ও একই রকম। আমাদের দেশের অনেক ইকমার্স আছে তারাও একই পথ অবলম্বন করে থাকেন।
কিন্তু অপর পক্ষে আমাদের দেশের কোম্পানি - প্রথমে অস্বাভাবিক সংখ্যক গ্রাহকের সাথে সেবা প্রদানের সময় প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন এরপর তাদের ঠান্ডা রাখার জন্য বিশাল পরিমান সোশ্যাল সৈনিক রাখেন। যাদের কাজ হচ্ছে যে কেউ এই এস এল এ ব্রেকের প্রতিবাদ সোশ্যাল মিডিয়াতে করলে তাদের দমিয়ে রাখা। দমিয়ে রাখার আবার কতক সিস্টেম আছে-
১। একটি উন্নত মানের সোশ্যাল গালি বাহিনী তৈরি এবং তাদের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রেতার করা প্রতিবাদ লিপিতে অকথ্য ভাষায় মাঁ-বা তুলে গালি দেয়া। গালির চোটে ক্রেতা পোস্ট সোশাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নেয় কিংবা অনেক ভদ্র ক্রেতা তাদের আশে পাশের মানুষ কি ভাববে এই ভেবে তা প্রকাশই করে না (আমার কাছে প্রমান আছে)।
কিভাবে একটি গালি যুক্ত শক্ত কমিউনিকেশন সেন্টার বা কাস্টমার কেয়ার বানানো যায় তা নিয়ে কয়েকটটি সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রোগামের কাজ করা শেষ হয়ত শীঘ্রই প্রকাশ পেতে পারে।
তবে এই যে বিশেষ বাহিনির পরিচালকদের আমাদের অনেকে আবার পীর মানে - সোশ্যাল মিডিয়ার জনতার রিভিউ এর ক্ষমতার ব্যবহার করে বড় কর্মকর্তা হওয়া আর ভাল একজন কর্মী হবার মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা এই মহাশয়েরা ধারনাও করতে পারেন না ।
২। বার বার আরো ভুয়া প্রতিজ্ঞা করে ক্রেতাদের অভিযোগ করার যে সময় (বিবেক) তা পার করে ফেলা। মানে ধরুন অর্ডার পাবার কথা ৯ দিনে। না পেলে অভিযোগ করবে ১০ দিন বা ১২ দিনের মাথায়, এক্ষেত্রে আরো ৯ দিন কথা দিয়ে রাখলো, হলো আঠারো দিন, সেম আবার হলো সাতাশ দিন, এর পর আপনার আর অভিযোগ করার মানসিকতা থাকবেনা।
এধরনের পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের বা সেবা গ্রাহকের করনীয় নিয়ে পরের পোস্ট লিখতে চাই যদি আপনাদের উৎসাহ থাকে আর কি
স্বচ্ছ ইকমার্স এর স্বপ্ন দেখে আমাদের দেশের আপামর নেটিজেনেরা ।
সময় জার্নাল/এমআই