মানিক মুনতাসির : পৃথিবী জুড়ে করোনাতঙ্ক। গত বছর এমন সময় ইতালীসহ ইউরোপ, আমেরিকার অনেক দেশই ছিল মৃত্যুপুরী। আমেরিকাতে এখনো চলছে মৃত্যুর ছিল। তবে আমাদের পাশের দেশ ভারত এখন মৃত্যুপুরী। ভারত জুড়ে শশান। ভারতের বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ। না এই গন্ধ শুধু ভারতে নয়, ছড়িয়ে পড়ছে সারাবিশ্বেই। ধর্ম, বর্ণ বিদ্বেষ ভুলে হিন্দু মুসলিম একত্রিত হয়ে লাশের শেষকৃত্য করছে ভারতবাসী। মসজিদকে বানানো হচ্ছে অস্থায়ী হাসপাতাল। অথচ এই ভারতে বছরের পর বছর চলেছে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। ভাঙ্গা হয়েছে মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম বড় বাবরি মসিজদ। যদিও তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে একদিনে আড়াই হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ১০১ জন। দিন কয়েক পর মৃত্যুর শতক ছুঁয়েছে আবারো। মৃত্যুর মিছিলের সাথে ভারতে চলছে ক্রিকেটযজ্ঞ। হ্যাঁ ক্রিকেটযজ্ঞ। দাবি করা হয় ক্রিকেটে বিশ্বকাপের পর এটাই নাকি সবচেয়ে বড় আসর। হ্যাঁ এই আসরে শুধু ব্যাট ও বলই ওড়ে না। টাকাও ওড়ে। কথিত আছে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি জুয়ার কারবার চলে আইপিএলে। প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। চিতায় উঠছে লাশের সারি। শশানে ঢুকতেও লাশের সারি। ভারত একটি বিশদ দেশ। জনসংখ্যাও ১৩০ কোটির বেশিই হবে। সেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা মাত্র ১৮ কোটি। সরকারি হিসাবে আরো কম। মাত্র বললাম এই কারণে যে, ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার কাছে হয়তো আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনেক কমই। কিন্তু আমাদের দেশের আয়তন আর জনসংখ্যার ঘনত্বের হিসাব করলে বিশ্বের অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশে ১০১ জন মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। এটা মোটেও কম নয়। প্রায় ৭৫০ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে একজন মানুষও যেন অকালে মারা না যায় সেটাই তো কাম্য।
ভারতে যে ক্রিকেটযজ্ঞ চলছে তা নি:সন্দেহে এক বিরাট বাণিজ্য। এটার সঙ্গে বিশ্বের বহুচজাতিক কোম্পানিগুলোর বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা জড়িত। বড় বড় কোম্পানিগুলোর সাথে মাফিয়াসহ জুয়াড়িদেরও পোয়া বারো এই আইপিএল। অবশ্য এটা প্রমাণ করাটাও কঠিন। হয়তো কেউ আমার এই লেখার চ্যালেঞ্জও করতে পারেন। কিন্তু এটাই সত্যি যে, ক্রিকেট শুধুই খেলা নয়। এটা একটা বিরাট বাণিজ্য। আর বাণিজ্য শুধুই বাণিজ্য নয়। বাণিজ্য হয়তো জুয়াও। ফলে এখানে মানুষের জীবন সর্বদাই নস্বি। ক্রিকেটের বরপুত্র অ্যাডাম গিলক্রিস্টও এমন পরিস্থিতিতে আইপিএল চলার যৌক্তিকতা খুজতে গিয়ে সমালোচনাই করেছেন। তাতে কার কি আসে যায়। পৃথিবীর আরো অনেক দেশেও তো করোনার সঙ্গে চলে নানা উৎসব আয়োজন। কারণ পৃথিবীটা টাকার গোলাম। টাকা আছে বলেই পৃথিবীটা চলে। অর্থবিত্ত ছাড়া তো পৃথিবীটাই মূল্যহীন। ফলে বিতর্ক হতেই পারে জীবনের জন্য টাকা নাকি টাকার জন্য জীবন। জীবিকার জন্য জীবন নাকি জীবনের জন্য জীবিকা। আপনার আমার মত মূর্খরা এই বিতর্কে ডুবে থাকবো আজীবন। আর সে সুযোগে পৃথিবীর চতুর মানুষেরা বিশ্বের বুকে রাজ করবে। ছুরি ঘোরাবে। মানুষকে পণ্য করবে। জীবন মৃত্যুকে মুখোমুখি করবে কঠিন পরিস্থিতিতে। হয়তো জীবনকে নির্বিঘেœ বিকিয়ে দেবে অর্থের বিনিময়ে।
একটা শ্রেনী আবার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েও রাজনীতি করবে। সেখানেই খুজবে ব্যবসা। কারা ভ্যাকসিন আগে পাবেন, কারা পরে পাবেন তা নিয়ে চলছে নানা কূটনৈতিক তৎপরতা। ভ্যাকসিনের আড়ালে ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসাও করছে কোন একটি পক্ষ। ফলে মানুষের জীবান আগে নাকি বাণিজ্য আগে তা নিয়েও হতে পারে বিতর্ক। #
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। ২৫ এপ্রিল-২০২১ ।