সময় জার্নাল প্রতিবেদক:
গত জুনে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ৭ মাস পর এবার গ্যাসের দাম বাড়ল ৮২ শতাংশ। শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতের গ্রাহকেরা দেবেন বাড়তি এ দাম। তবে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত সিএনজি ও বাসায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ায়নি সরকার। এখন গ্যাসের দাম বাড়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে বাজারে পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে।
সরকার তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার খাতিরে এটা করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। তিনি বলেনম, অর্থনীতিতে অনেক সময় জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমি অজনপ্রিয় একটি সিদ্ধান্ত মনে করি।
অধ্যাপক পারভেজ সময় জার্নালকে বলেন, মূল্য বৃদ্ধির কারণ আছে। এটা করা ছাড়া সরকারের উপায় ছিল না, বিশেষ করে আই এম এফ থেকে লোন পেতে হলে ভর্তুকি কমাতে হবে। বা এই খাতগুলোতে কোনোভাবেই লোকসান দেওয়া যাবে না এমন একটি ব্যাপার আছে। অতএব সরকার তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার খাতিরে এটা করেছে।
সরকার কিছুদিন আগে বিদ্যুতের মূল্য ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল, এখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে ১৫০ শতাংশের মত। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগের ৫ টাকা ০২ পয়সা থেকে ১৭৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা থেকে ৮৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।
বৃহৎ শিল্প খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা, মাঝারি শিল্পে প্রতি ইউনিট বর্তমান ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১৫৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বর্তমান ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে ১৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগে ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা। এখন তা ১৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।
তবে আগের মতোই চা শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৯৩ পয়সা, সিএনজি স্টেশনের জন্য ৪৩ টাকা, গৃহস্থালির মিটারের জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা, এক মুখের চুলার জন্য মাসিক ৯৯০ টাকা, দুই মুখের চুলার জন্য মাসিক ১০৮০ টাকা রাখা হয়েছে।
সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, সবাই জানেন ও বুঝেন বিদ্যুৎ বা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, মুদ্রাস্ফীতি ও বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিল্প কারখানাগুলোর লাভজনকভাবে টিকে থাকা খুবই কঠিন হবে এবং এটা অর্থনীতির উপরে মন্দ প্রভাব ফেলবে, ছাটাই বাড়বে, বেকারত্ব বাড়বে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতিশীলতা কমবে। এসব কথা ঠিক হলেও অর্থনীতিতে অনেক সময় জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমি অজনপ্রিয় একটি সিদ্ধান্ত মনে করি।
গত বুধবার গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। পরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যায় জ্বালানি বিভাগ বলেছে, খোলাবাজার থেকে চড়া দামে এলএনজি কিনে গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য বিদ্যুৎ, শিল্প, ক্যাপটিভ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার।
এমআই