ডা. জোবায়ের আহমেদ :
রাত ১০ টার দিকে একবার বাড়ি গেলাম।
বোনের জন্য খাবার আনতে আর ভাবলাম আমি ঘন্টাখানেক রেস্ট নিয়ে গোসল করে আসি।
কি গরম পড়ছে আজ।
বাড়ি গিয়ে চেম্বারে ফিরছি যখন তখন রাত ১২টা।
চাঁদের আলোয় পথঘাট আলোকিত, একা হেঁটে হেঁটে চেম্বারে যাচ্ছি।
সুনশান নীরবতা পুরো রাস্তা জুড়ে।
এদিকে চেম্বার থেকে আমার স্টাফ কল দিলো সীমা একটু অস্থিরতা করছে এবং একজন অজ্ঞান রোগী পোম্বাইশ গ্রাম থেকে এসেছে।
তখন তো দৌড় দিতে ইচ্ছে করছে।
কিন্ত মনে হলো পা দুটো অবশ লাগছে।
সামনে আগায় না।
আমাদের ভাওয়াল বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখি বাজারের দিক থেকে একটা অটো রিক্সা আসছে, আমার সামনে এসে থামলো।
আমাকে অটোচালক জিজ্ঞেস করলেন, ডাক্তার সাহেব এতরাতে একা কোথায় যাচ্ছেন?
আমি বললাম, ইমারজেন্সি রোগী আছে, চেম্বারে যাচ্ছি।
তিনি বললেন, স্যার একটু দাঁড়ান।
সেই অটোতে দুইজন পাসেঞ্জার বসা ছিলো।
অটোচালক তাদের বললেন, আপনারা একটু সামনের দোকানে গিয়ে বসেন।
আমি ডাক্তার সাহেবকে চেম্বারে দিয়ে আসবো।
তারা গাইগুই করলো।
কারণ তারা যাবেন দুই কিলোমিটার দূরের গ্রামে।
কিন্ত অটোচালক বললেন, এত রাতে একজন ডাক্তার হেঁটে চেম্বারে যাচ্ছেন রোগীকে চিকিৎসা দিতে,আর আমি উনাকে দিয়ে আসবোনা তা হয়না।
আপনারা নেমে দাঁড়ান। আমি যাবো আর আসবো।
আমি আপত্তি করলাম।
বললাম, আমি যেতে পারবো আপনারা জান।
তবে ধন্যবাদ জানবেন বলে হাঁটা দিলাম।
অটোচালক তাদের নামিয়ে দিলেন অটো থেকে।
তারপর ঘুরে এসে বললেন, ডাক্তার সাহেব উঠেন।
আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
আমি চুপচাপ অটোতে বসে ভাবছি।
এই মধ্যরাতে একজন অচেনা অটোচালক যতটা সম্মান দেখালো একজন ডাক্তারকে, তা কি কোটি টাকায় বিনিময় যোগ্য?
না না তা টাকার সাথে তুলনা করাই বোকামি।
এইদেশের এমন সাধারণ, খেটে-খাওয়া মানুষ আজও চিকিৎসকদের এমনভাবে শ্রদ্ধা করে।
অনেক অভিযোগ এইদেশে ডাক্তারি করতে যেতে।
কিন্ত এমন সহস্র ভালবাসার ছোট ছোট গল্প যে হৃদয়ে জমে আছে, তা কি এইদেশের সাধারণ মানুষকে ভালবেসে চিকিৎসা দিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট নয়?
অবশ্যই আমার মত সাধারণ মানুষের জন্য এমন ভালবাসা পাওয়া পরম প্রাপ্তি।
আমার জন্য এমন ভালবাসাই যথেষ্ট।