আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অ্যান্টার্কটিকার ব্রান্ট আইস শেল্ফ থেকে প্রায় লন্ডন শহরের সমান আয়তনের একটি হিমবাহ ভেঙে পড়েছে। ধসে পড়া ওই বরফখণ্ডটির আয়তন প্রায় ৬০০ বর্গমাইল বা ১ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে (বিএএস) এ তথ্য নিশ্চিত করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহ ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে- এমন হুঁশিয়ারির মধ্যেই এ হিমবাহ ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেলো। তবে বিএএসের গবেষকরা বলছেন, হিমবাহটি ভেঙে পড়ার সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তজনিত কোনো কারণ নেই। এটা হিমবাহের প্রাকৃতিক আচরণ যা ‘কালভিং’ নামে পরিচিত।
অ্যান্টার্কটিকার ব্রান্ট আইস শেল্ফ হিমবাহে কয়েক বছর আগেই বড় ফাটল চিহ্ণিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ সময় পর সম্প্রতি প্রায় ১৫০ মিটার পুরু ওই হিমবাহ থেকে বরফখণ্ডটি বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। এর আয়তন ১ হাজার ৫৫০ বর্গ কিলোমিটার যা যুক্তরাজ্যের রাজধানী গ্রেটার লন্ডনের আয়তন থেকে মাত্র ১৯ বর্গকিলোমিটার কম।
এর আগে গত বছর অ্যান্টার্কটিকায় ১ হাজার ২৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের আরও একটি হিমবাহ ভেঙে গিয়েছিল। এরও প্রায় চার বছর আগে ২০১৭ সালে লার্সেন সি আইস শেলফ থেকে লন্ডনের প্রায় চার গুণ আয়তনের বিশাল একটি হিমবাহ খসে পড়েছিল।
ওই হিমবাহটির আয়তন ছিল প্রায় ৫ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার। আর ওজন ছিল প্রায় এক ট্রিলিয়ন টন। সেটা এযাবৎকালে গবেষকদের দেখা সবচেয়ে বড় আকারের বরফখণ্ড খসে পড়ার ঘটনা।
এদিকে, এ ঘটনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক তাপমাত্রাবৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও, অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে বলে বার বার সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা।
জানা যায়, গ্রীষ্মকালে (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রে বরফের পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। তবে এবারের গ্রীষ্মে বরফ কমে যাওয়ার গতি ছিল অত্যন্ত অস্বাভাবিক। ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের (এনএসআইডিএস) বিজ্ঞানীরা বলেন, ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বরফ কমে যায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত কয়েক দশক ধরে অ্যান্টার্কটিকা সামুদ্রিক বরফ গলে যাওয়ার একটি রোলারকোস্টারে চড়েছে বলে মনে হচ্ছে। আর জলবায়ুর পরিবর্তন এ প্রক্রিয়ায় আরও গতি যোগাচ্ছে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, গলে যাওয়ার বরফখণ্ডগুলো সমুদ্রে আর ফিরে আসেনি বা নতুন করে জমাট বাঁধেনি।
ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোলডারের শিক্ষক ও এনএসআইডিএসের প্রধান গবেষক টেড স্ক্যাম্বোস বলেন, অ্যান্টার্কটিকায় যা ঘটছে তার সঙ্গে বাকি বিশ্বের তাপমাত্রাবৃদ্ধির যোগসূত্র রয়েছে। ১৯৭৮ থেকে এখনকার স্যাটেলাইট ডেটা দেখায়, ২০১৪-২০১৫ সালের মধ্যে মহাদেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক সুউচ্চ হিমবাহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই হিমবাহগুলো একে এবে সমুদ্রে ডুবে যেতে থাকে।
সময় জার্নাল/এলআর