সর্বশেষ সংবাদ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা জেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসক সংকটে রয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জারিসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় অন্য বিষয়ের অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা চলছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা চলছে অন্য বিষয়ের ওপর অভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে একবার ডাক্তার এসে রোগী দেখে চলে যান। পরবর্তীতে দায়িত্বরত সেবিকারা চিকিৎসা প্রদান করেন। এমন ঘটনা শুধু সদর হাসপাতালের নয় বরং সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটা উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র একই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব এটার সমাধান হয়ে যাবে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে (ইউএসসি) মোট ২১৮টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এসব পদের মধ্যে মাত্র ৭৪ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। বাকি ১৪৪টি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে। আবার কোনো কোনো চিকিৎসকের কর্মস্থল জেলা সদরের বাইরে হওয়ায় তারা সময় দেন না। এমনকি ইউএসসি কেন্দ্রের চিকিৎসকদের চেনেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা এলাকাবাসী। ফলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব, পদ শূন্য ও ইউএসসিতে কর্মরত চিকিৎসকরা কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ। জেলার নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা সকলেই এমন অভিযোগ করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে চিকিৎসকের পদ রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (বিষয়বিহীন) জুনিয়র কনসালটেন্ট (রেডিওলজিস্ট), এমও (আয়ুর্বেদি) সহ ১১ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে।
জেলার একমাত্র বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের দুইটি পদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট, বক্ষর পদ দীর্ঘ দিন যাবত শূন্য রয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিনটি পদ থাকলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) ও মেডিকেল অফিসার (ডিসি) এর পদ শূন্য।
আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ১০টি পদের বিপরীতে জুনিয়র কনসালটেন্ট যথাক্রমে অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি ও মেডিকেল অফিসার একজন, ডেন্টাল সার্জনসহ ৬ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২২টি। যথাক্রমে জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোলজি, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন, শিশু, আর.এম.ও, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার দুইজন, সহকারী সার্জন দুইজনসহ ১৭ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে আর.এম.ও, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং মেডিকেল অফিসার একজন, অ্যানেসথেটিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ডেন্টাল সার্জন ও এমও, আয়ুর্বেদিকসহ ১৪ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে আর.এম.ও, জুনিয়র কনসালটেন্ট যথাক্রমে অ্যানেসথেসিয়া, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোলজি, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, অ্যানেসথেসিস্ট, এমও/হোমিও/আয়ুর্বেদিক/ইউনানী ও ডেন্টাল সার্জনসহ ১৫ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
শামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২১টি পদের মধ্যে আর.এম.ও, জুনিয়র কনসালটেন্ট যথাক্রমে মেডিসিন, সার্জারি, মেডিসিন, শিশু, অর্থোলজি, কার্ডিওলজি, চক্ষু, ইএনটি, চর্ম ও যৌন এবং, মেডিকেল অফিসার দুইজন, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, অ্যানেসথসিস্ট, প্যাথলজিস্ট, ইউনানী ও ডেন্টাল সার্জনসহ ১৭ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ১০টি পদের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি এবং ডেন্টাল সার্জনসহ পাঁচজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুর জলিল বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে আছি কিন্তু ডক্টর পাচ্ছি না। শুনেছি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। তাই সরকারের কাছে দাবি যত দ্রুত সম্ভব নির্দিষ্ট বিভাগের ওপর অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রদান করা হোক।
সাতক্ষীরা শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা মাসুম বিল্লাহর মা রাজিয়া বেগম বলেন, চার দিন হলো সদর হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে আমার বাচ্চার। কিন্তু কোনো প্রকার পরিবর্তন আসেনি বরং শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলেছে। এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাচ্চাকে খুলনাতে নিয়ে যাব। তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি যত দ্রুত সম্ভব শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ব্যবস্থা করা হোক না হলে আমাদের মত গ্রামের মানুষ অনেক বড় ভোগান্তিতে পড়ে।
সদরের কাঠিয়া এলাকার বাসিন্দা মারুফুল হাসান জানান, ডাক্তার বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাইভেটভাবে রোগী দেখেন। এদিকে হাসপাতালে রোগী আসলে তাদেরকে জানানো হয় ডাক্তার বাইরে আছেন। এই ভোগান্তির অবসানসহ বিভাগে অভিজ্ঞ ডাক্তার প্রদানের দাবি রাখছি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ১০০ বেডের একটি হাসপাতাল। এখানে ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী প্রতিনিয়ত ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ, সার্জারী বিশেষজ্ঞসহ আরও কিছু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব আছে। তারপরেও আমরা যথাযথ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি।
যে বিষয়ের ওপর অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই সে প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন জানান, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে তারা সমাধান করবেন।
এসএম
এ বিভাগের আরো
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল